চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

চট্টগ্রাম বন্দরে আবারো দরপত্র ছাড়াই শিপ হ্যান্ডলিংয়ের অনুমতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য নিয়ে আসা জাহাজের পণ্য লাইটারিংয়ের কাজ করে চট্টগ্রাম বন্দরের তালিকাভুক্ত শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটররা। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে তারা এই কাজ করেন। এজন্য তাদের বৈধ লাইসেন্স থাকাও বাধ্যতামূলক। তবে শুধু লাইসেন্স থাকলেই হবে না, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর কাজের জন্য বন্দরের তালিকাভুক্তির টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলেই কেবল এই কাজ করা যায়। দীর্ঘদিনের এই নিয়ম না মেনেই সম্প্রতি তালিকাভুক্ত করা ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মেসার্স ডি.ভি. হাজী আবদুল আজিজ এন্ড কোং নামের পুরনো একটি স্টিভিডোরিং প্রতিষ্ঠানকে চট্টগ্রাম বন্দরের কুতুবদিয়া, বহির্নোঙর ও অন্যান্য বিশেষায়িত জেটিতে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর হিসেবে কাজের অনুমতি দিয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট তালিকাভুক্ত শিপং হ্যান্ডলিং অপারেটররা।

 

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত সরকারের সময় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর হিসেবে নিয়োগ লাভের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে টেন্ডার ছাড়াই মেসার্স ডি.ভি. হাজী আবদুল আজিজ এন্ড কোং-কে চট্টগ্রাম বন্দরে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দিতে সফল হয়। যা চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের জন্য টেন্ডারবিহীন কোন প্রতিষ্ঠানকে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া একটি নজিরবিহীন ঘটনা।

 

গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরপরই ২৭ আগস্ট মেসার্স ডি.ভি. হাজী আবদুল আজিজ এন্ড কোং শিপ হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পেতে তাদের পুরোনো লাইসেন্স নবায়ন করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে ৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৮ শর্তে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরকে কাজের জন্য চুক্তি করতে চিঠি দেয়। পরে ২০ নভেম্বর বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি করে। এরপর ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি চিঠিতে পরবর্তী শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরের অন্তর্ভুক্তি টেন্ডার না হওয়া পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দিতে অফিসিয়ালি ঘোষণা দেয়। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে মৃত, বিলুপ্ত ও জামানত বাজেয়াপ্তকৃত মেসার্স এম. এন. মিঞা এন্ড সন্সসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

 

উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর তালিকাভুক্তিকালীন সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রণীত ‘শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর নীতিমালা’র ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অবজারভেশনে এবং বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং এন্ড বার্থ অপারেটরস্ এসোসিয়েশনের তত্ত¡াবধানে শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিসহ ৫-সদস্য বিশিষ্ট ‘শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরস্ কমিটি’ গঠন করে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরদের মধ্যে জাহাজ বরাদ্দ করে আসছেন।

 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মেসার্স ডি.ভি. হাজী আবদুল আজিজ এন্ড কোং-কে জাহাজ বরাদ্দের জন্য শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরস্ কমিটিকে নির্দেশনা দিলে কর্মরত শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটররা ক্ষুব্ধ হয়ে এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করে। হাইকোর্ট মেসার্স ডি.ভি. হাজী আবদুল আজিজ এন্ড কোং-কে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর হিসেবে নিয়োগের ওপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরদের সঙ্গে কোন প্রকার আলাপ-আলোচনা ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার (অপারেশন)-এর সভাপতিত্বে এবং বার্থ অপারেটরস্, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরস্ এন্ড টার্মিনাল অপারেটরস্ ওনার্স এসোসিয়েশন নামক অপর একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ৩ জন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস্ এসোসিয়েশন ও চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র একজন করে প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত নতুন কমিটি করে জাহাজ বরাদ্দ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও শিপ হ্যান্ডলিংয়ের কাজে বার্থ অপারেটরস্, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরস্ এন্ড টার্মিনাল অপারেটরস্ ওনার্স এসোসিয়েশনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যা চট্টগ্রাম বন্দরের কুতুবদিয়া, বহির্নোঙর ও অন্যান্য বিশেষায়িত জেটিতে জেটিতে দেশি/বিদেশি জাহাজের পণ্য হ্যান্ডলিং কাজে অহেতুক বিভিন্ন জটিলতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। যা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য সুফল বয়ে আনবে না।

 

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালে কুতুবদিয়া, বহির্নোঙর ও অন্যান্য বিশেষায়িত জেটিতে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের জন্য টেন্ডারবিহীন ও নিয়মনীতি বহিভর্‚তভাবে ২৩টি লাইসেন্স ইস্যু করেছিল। পরবর্তীতে বিগত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে কাজের পরিধি ও সার্বিক বিষয় যথাযথ বিবেচনা করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বর্তমান চেয়ারম্যান ওই ২৩টি লাইসেন্স বাতিল ঘোষণা করেন। এখন আবার টেন্ডারবিহীন ও নিয়মনীতি বহিভর্‚তভাবে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর নিয়োগ/লাইসেন্স প্রদান করায় সংশ্লিষ্ট মহল হতবাক। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর লাইসেন্স নবায়নে বিদ্যমান তালিকাভুক্ত অপারেটরদের কোনো আপত্তি নেই। শুধুমাত্র তালিকাভুক্তির টেন্ডার ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠান কাজ দেওয়াতে তাদের আপত্তি।

 

যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই অনেক পুরোনো কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা যাদের চট্টগ্রাম বন্দরের শিপ হ্যান্ডলিংয়ের লাইসেন্স রয়েছে। তারা বছরে বছরে ফি দিয়ে তাদের লাইসেন্স নবায়ন করেন। আবার কেউ জরিমানা দিয়েও লাইসেন্স নবায়ন করেন। এমন ১০/১২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের বৈধ লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু তারা শিপ হ্যান্ডলিং কাজের তালিকাভুক্তির দরপত্রে অংশগ্রহণ করেন না। এমন একটি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান বন্দরে কাজের জন্য আবেদন করেছে। আবেদনটি বিবেচনায় নিয়েই পরবর্তী কাজগুলো হয়েছে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট