এক মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদন করতে ১৭ টি গাছের মৃত্যু হয়। জ্ঞানের পিপাসা মিটানোর জন্য যে গাছের আত্মত্যাগ, সেই আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে বইমেলায় বই কিনলে গাছের চারা উপহার দিচ্ছে একুশে পদকপ্রাপ্ত সংগঠন বিদ্যানন্দ। সেই সাথে গাছ তথা বনাঞ্চল বাঁচাতে কাগজ রিসাইকেলিং করে সেই কাগজেই গল্প ও কবিতার বই প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
চট্টগ্রামের অমর একুশের বইমেলায় ‘গাছের ফাঁসি’ থিম দিয়ে সাজানো বিদ্যানন্দের স্টলে পাঠকের ভিড় ও কৌতূহলের শেষ নেই। বইমেলায় আগত বেশিরভাগ পাঠক বিদ্যানন্দের স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি নিতে দেখা গেছে। মেলাজুড়ে এ যেন সেলফি স্টল। যাক ফিরে আসি বৃক্ষের কাছে। পৃথিবীতে মানুষের জন্য বৃক্ষের চেয়ে বড় কোন বন্ধু নেই। কম্পিউটারের এই যুগে কাগজের ব্যবহার কমার বদলে যেন বেড়েই চলেছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে পরিবেশের উপর। হারিয়ে যাচ্ছে বনজঙ্গল, বদলে যাচ্ছে জলবায়ু।
১৯৫০ সালের তুলনায় আজ কাগজের ব্যবহার প্রায় ৭ গুণ বেড়ে গেছে। সেই কাগজের জোগান দিতে প্রতিবছর হারিয়ে যাচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার বর্গ কিলোমিটার বনজঙ্গল, যা তিউনিশিয়ার মতে দেশের আয়তনের প্রায় সমান। বেড়ে চলেছে এমন সব গাছপালার প্লান্টেশন বা বাগান, যা দিয়ে কাগজের মণ্ড তৈরি করা যায়। অথচ গাছের কাঠ থেকে নতুন কাগজ তৈরি না করে পুরানো কাগজের রিসাইকিলিং বা পুনর্ব্যবহার করলে পরিবেশের অনেক কম ক্ষতি হয়। বেঁচে যায় বৃক্ষের প্রাণ। অপরিকল্পিত লাগামহীন কাগজ উৎপাদনের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। পরিবেশ, প্রকৃতি ও প্রজন্মকে বাঁচাতে বৃক্ষ নিধন রোধ করার কোন বিকল্প নেই, তাতে কাগজ রিসাইকিলিং বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা ও রিসাইকিলিং কাগজে ছাপানো ‘প্রতিধ্বনি’ গল্প বইটির লেখক কিশোর কুমার দাস পূর্বকোণকে বলেন, গাছের প্রাণ বাঁচাতে ব্যবহৃত কাগজ রিসাইকেল করতে হবে। পুরাতন কাগজ রিসাইক্লিংকে জনপ্রিয় করতে আমি আমার নিজের বইটি এবার রিসাইকেল কাগজে প্রকাশ করেছি।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীজুড়ে প্রতিবছর যে পরিমাণ গাছ কাটা হয়, তার ৩৫ শতাংশই ব্যবহার করা হয় কাগজ তৈরিতে। এতে করে বৈশ্বিক জলবায়ুর ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে। ব্যবহৃত কাগজ ফেলে না দিয়ে এবং না পুড়িয়ে যদি রিসাইকেল করা হয় তাহলে বৃক্ষের প্রাণ যেমন রক্ষা পাবে তেমনি পরিবেশও দূষণমুক্ত হবে। এটাই এবারের বইমেলায় কিশোর দাদার নতুন বইয়ের আবেদন। সেজন্য তিনি রিসাইকেল কাগজ দিয়ে প্রিন্ট করে নতুন গল্প ও কবিতার বই প্রকাশ করেছেন।
তিনি আরো জানান, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি আধা সরকারি, বেসরকারি অফিসে প্রচুর কাগজপত্র পড়ে আছে, তাছাড়া সারাদেশে দুই-তিন বছরের পুরনো এনসিটিবির বই পড়ে আছে যা দিয়ে হাজার হাজার মেট্রিক টন রিসাইকেল কাগজ উৎপাদন সম্ভব।
পূর্বকোণ/ইব