চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

এক তৃতীয়াংশ দাম কমেছে খেজুরের

আরাফাত বিন হাসান

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১২:৫১ অপরাহ্ণ

নানা কারণে গেল রমজানে চড়া ছিল খেজুরের বাজার। এর কারণ হিসেবে ফলটির বাড়তি শুল্কায়ন মূল্য ও অতিরিক্ত শুল্ক আদায়কে দোষছিলেন ব্যবসায়ীরা। সরকারের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় বৈঠকেও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি দাম। তবে এবার শুল্ক কমেছে খেজুরের। কমেছে শুল্কায়ন মূল্যও। এতে আমদানি বেড়েছে ফলটির। সব মিলিয়ে গেল বছরের চেয়ে কমে এখন পর্যন্ত নাগালের মধ্যে আছে ফলটির দাম।

 

ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গেল বছর বাড়তি ছিল খেজুরের শুল্কায়ন মূল্য ও শুল্ক। তার প্রভাব ছিল দামে। এবার রমজানের কয়েক মাস পূর্বেই খেজুরের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ শুরু করে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এরমধ্যেই শুল্কায়ন মূল্যের পাশাপাশি পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে শুল্ক।

 

সম্প্রতি আজোয়া-মরিয়ম-মেডজুল-মাবরুম এবং আম্বার খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে তিন দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার, আলজেরিয়া ও তিউনিশিয়ান খেজুরে দুই দশমিক ৩০ মার্কিন ডলার, ইরাকের খেজুরে এক মার্কিন ডলার শুল্কহার নির্ধারণ করে দেয় এনবিআর। এর বাইরে প্যাকেটজাত খেজুরে আড়াই ডলার, বস্তার শুকনো খেজুরে দুই মার্কিন ডলার এবং ভেজা খেজুরে কেজিপ্রতি ৭০ সেন্ট শুল্কহার নির্ধারণ করা হয়। তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। ধাপে ধাপে কমছে দাম। এখন পর্যন্ত গেল বছরের চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ বা এক তৃতীয়াংশ কমেছে পণ্যটির দাম।

 

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, শুল্ক কমানো হয়েছে। শুল্কায়ন মূল্যও আগের চেয়ে কমানো হয়েছে। তবে এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক করা হয়নি এটি। শুল্কায়ন মূল্য পুরোপুরি স্বাভাবিক করতে আমরা কাস্টমসের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশে তুলনামূলক কম দামে পাওয়া খেজুরের মধ্যে রয়েছে ইরাক থেকে আমদানি করা বস্তা খেজুর (বাংলা খেজুর), জাহিদি, লুলু, নাগাল ও দাব্বাস।

 

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামে তাজা ফলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার ফলমন্ডি ও দেশে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, গেল বছর ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া জাহিদি খেজুর এখন ১৭৪ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গেল বছরের চেয়ে যা প্রায় ৪০ শতাংশ কম। ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ইরাকের বস্তা খেজুর বা বাংলা খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১৩২ টাকায়। যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কম।

 

এর বাইরে লুলু খেজুর ২৮৫ ও নাগাল বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকা কেজি দরে। এই দুই ধরনের খেজুরের দামও কমেছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের বেশি। মাঝারি মানের খেজুরের মধ্যে দাব্বাস ৩৬০, তিউনেশিয়ান শুকনা খেজুর ৩৫০, তিউনিশিয়ান ভেজা ৩৮০, তিউনিশিয়ান ছরা ৪৬০, মাশরুক ৬০০, সাফাবি ৫৮০ এবং সুক্কারি ৬৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গেল বছর আরও ৩০-৪০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল এসব খেজুর।

 

অভিজাত খেজুরের মধ্যে মাব্রুম ৮০০, ইরানি মরিয়ম ৯০০, মেডজুল এক হাজার এবং আজোয়া ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গেল বছর এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল এসব খেজুর।

 

দেশে বছরে খেজুরের চাহিদা রয়েছে এক লাখ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টন। ইফতারির অন্যতম অনুষঙ্গ হওয়ায় রমজানেই সবচেয়ে চাহিদা বেশি থাকে পণ্যটির। চাহিদার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশই প্রয়োজন হয় ওই মাসে। এদিকে কেবল জানুয়ারি মাসেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর আমদানি হয়েছে ১৪ হাজার ৮৪৯ টন। যা চাহিদার প্রায় ১৪ শতাংশ।

 

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ১৮ হাজার ৫৪৯ টন খেজুর আমদানি হয়েছিল। এবার একই সময়ে আমদানি হয়েছে ২০ হাজার ৭৭৬ টন। এরমধ্যে কেবল জানুয়ারিতেই আমদানি করা হয়েছে ১৪ হাজার ৮৪৯ টন।

 

ফলটির দাম কমার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতি- ফলমন্ডির সাধারণ সম্পাদক মো. তৌহিদুল আলম বলেন, নানা কারণে গেল বছর খেজুরের দাম বেশি ছিল। এবার অনেকাংশে কমেছে। মোটামুটি সব ধরনের খেজুরের দাম গেল বছরের চেয়ে কম এবার। পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে, সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় দামও নাগালের মধ্যে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট