ইস্টার্ন রিফাইনারির সাবেক এমডি মীর মোহাম্মদ লোকমান হোসেনের বাসায় ১২ বছর ধরে কাজ করেন বাগেরহাটের আকাশ শেখ। আরেক কর্মচারী সাব্বিরও কাজ করছিলেন দুই বছর ধরে। এই বাসায় আগে কাজ করতেন বায়েজিদ শেখ ও রিয়াদ নামে দুই যুবক। নতুন ও পুরাতন এই ৪ কর্মচারী মিলেই মনিবের বাসায় ডাকাতির পরিকল্পনা করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন ৩০ বছর ধরে ভবনটিতে দারোয়ানের চাকরি করা বরিশালের মো. বাবুল।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) নগরের পাঁচলাইশ এ ব্লকের মক্কী ভবনে গৃহকর্তা লোকমান ও তার স্ত্রী মাজেদা বেগম পারভীনকে জিম্মি করে ডাকাতি চেষ্টার ঘটনায় এ পাঁচজন ছাড়াও বাইরের তিনজন জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য- শিল্প প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের গ্রুপের মালিকের ছোট মেয়ের জামাতা লোকমানের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত কর্মচারী আকাশই পুরো ডাকাতির পরিকল্পনা করেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপির) উপ-কমিশনার (উত্তর) ফয়সাল আহম্মেদ জানান, ডাকাতির চেষ্টার ঘটনায় ওই বাসার দারোয়ান-কর্মচারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার কথা জানিয়ে গ্রেপ্তার বায়েজিদ শেখ গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। কর্মচারী আকাশ ও দারোয়ান বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এর আগে গত মঙ্গলবার আবুল খায়ের গ্রুপের সহকারী ব্যবস্থাপক ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন- আকাশ শেখ (২৫), বায়েজিদ শেখ (১৯), রিয়াদ (২০), সাব্বির (১৯) ও মো. বাবুল। এদের মধ্যে আকাশ, বায়েজিদ ও বাবুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পাঁচলাইশ এ ব্লকের মক্কী ভবনের দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে থাকেন ষাটোর্ধ্ব লোকমান হোসেন ও তার স্ত্রী পঞ্চাশোর্ধ্ব মাজেদা বেগম পারভীন। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে বিদেশে লেখাপড়া করেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় ডুপ্লেক্স ওই ফ্ল্যাটে সাবেক ও বর্তমান পাঁচ কর্মচারীসহ বাইরের তিনজন প্রবেশ করেন। তারা সবাই কালো পোশাক ও মুখে কালো মাস্ক পরেছিলেন।
ফ্ল্যাটে ঢুকেই তারা লোকমানকে গামছা দিয়ে হাত-পা বেঁধে টয়লেটে আটকে রাখেন। একইভাবে লোকমানের স্ত্রী মাজেদা বেগমকেও বেঁধে ফেলেন। দু’জনের কাছে ডাকাতের রূপ নেওয়া কর্মচারীরা নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার কোথায় আছে তা জানতে চান। এক পর্যায়ে তারা লোকমানের বাম কানের নিচে ছুরিকাঘাত করেন। পাশের ভবনের আল হিদায়া স্কুলের লোকজন চিৎকার শুনে পুলিশকে খবর দেন।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলায়মান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, টাকার লোভে ওই ভবনের নতুন-পুরাতন কর্মচারী ও দারোয়ান মিলে ডাকাতির চেষ্টা করে। নিছক ডাকাতির চেষ্টা না নেপথ্যে অন্য কিছু রয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
পূর্বকোণ/ইব