ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে প্রেষণে থাকা সাত কর্মকর্তার পূর্ণাঙ্গ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা চেয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এ বিষয়ে গত ২৩ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর একটি চিঠিও দেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। যা আমলে নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গত ২৯ জানুয়ারি সেই অনুমতি দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দেন। যা বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে আরো দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছে চসিক। চিঠি দেয়ার পর সাত কর্মদিবস পার হলেও এখনো পর্যন্ত সাত কর্মকর্তার ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে কোন ম্যাজিস্ট্রেট পায়নি চসিক। তবে দু’এক দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চসিক সূত্রে জানা যায়, চসিকের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও অভিযান চালাতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের বাধা/সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সেসব সমস্যা সমাধানে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনাসহ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুসারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হয়। যা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া সম্ভব নয়। এছাড়া, সিডিএ’র ৩৬ খাল নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের বাইরে ২১ খালে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করছে চসিক। খাল ও পাহাড়ের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চসিকের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে- স্থানীয় সরকার কাঠামোর একটি অন্যতম স্তর হলো সিটি কর্পোরেশন। সেখানে স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন আইন, বিধি, নীতি, বাস্তবায়ন তথা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পাদন করা হয়ে থাকে। এসব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও জনস্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন জনহিতকর কাজ বাস্তবায়ন/সম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রায়শঃ বিভিন্ন ধরনের বাধা/সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। উক্ত সমস্যাগুলো সমাধানকল্পে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনাসহ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুসারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হয়।
ঢাকা শহরের পর পরই বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রাম শহরের অবস্থান। আর এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই এ শহরের জনসংখ্যা, বিভিন্ন মেগা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, সেবা কার্যক্রমও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য। প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যরে ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হলে নগরীর জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেকাংশে নিরসন করা সম্ভব। এছাড়াও নগরীর অবৈধ উচ্ছেদসহ শহরের শৃঙ্খলা রক্ষা, জননিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ইত্যাদি সেবা কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা প্রয়োজন।
এমতাবস্থায়, বিষয়টি সদয় বিবেচনাপূর্বক অত্র সিটি কর্পোরেশনে প্রেষণে কর্মরত বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের নিম্নোক্ত কর্মকর্তাদের দ্যা কোড ক্রিমিনাল প্রোসেডিউর ১৮৯৮ এর ১০ (৫) ধারা অনুযায়ী- এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণপূর্বক মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এর ৫ ধারা মোতাবেক মোবাইল কোর্ট পরিচালনার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা অর্পণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
চসিকের সেই সাত কর্মকর্তারা হলেন- চসিকের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম, শিক্ষা কর্মকর্তা রাশেদা আক্তার, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা রক্তিম চৌধুরী, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মৌমিতা দাশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিল্লুর রহমান।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, প্রেষণে থাকা চসিকের সাত কর্মকর্তাকে পূর্ণাঙ্গ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। যা বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে। এছাড়া, বিভাগীয় কমিশনারের কাছে দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছি, সেগুলো আমরা এখনো পাইনি। আমরা আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই ম্যাজিস্ট্রেট পাবো।
তিনি আরো বলেন, এটা অনুমোদন পেলে আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালাবো। মূলত, যারা খাল-পাহাড় দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা করেছে বা করছে তাদের আইনের আওতায় আনবো। এছাড়াও যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেখানে সেখানে ময়লা ফেলছে, তাদের আমরা আইনের আওতায় আনবো।
পূর্বকোণ/ইব