চট্টগ্রাম রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মাঠে গড়াচ্ছে আরেকটি প্রকল্প

মোহাম্মদ আলী

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

‘নগরীর উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট স্যানিটেশন’ নামে চট্টগ্রাম ওয়াসার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্যুয়ারেজ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন করেছে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

 

বাংলাদেশ সরকার ও ফ্রান্স ভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এজেন্সি ফ্রান্সিয়াস ডি ডেভলপমেন্ট (এএফডি) যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৭৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। এরমধ্যে বাংলাদেশ সরকার অনুদান হিসেবে ৩৬২ কোটি এবং ঋণ হিসেবে দেবে ৫৪৩ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম ওয়াসা ২০ কোটি টাকা।

 

অপরদিকে ফ্রান্সের দাতা সংস্থা এএফডি দেবে এক হাজার ৮৭২ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ সংক্রান্ত ২০২৩ সালের ২২ জুন এএফডি’র সাথে একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শুরু এবং শেষ হবে ২০২৯ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর উত্তর কাট্টলী এলাকার তিন লাখ বাসিন্দা সুফলভোগী হবে।

 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘নগরীর উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট স্যানিটেশন’ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নগরীর উত্তর কাট্টলীসহ আশেপাশে বিশাল এলাকা স্যুয়ারেজের আওতায় আসবে। তাতে এ এলাকার মানুষ আধুনিক নগরীর সুযোগ-সুবিধা পাবে। তাছাড়া প্রকল্পের জন্য কোন ধরনের জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না। হালিশহর এলাকায় বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন ক্যাচমেন্ট -১ এর ভূমিতে দৈনিক ৫০ হাজার ঘন মিটার পরিশোধন ক্ষমতার একটি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করা হবে।

 

এদিকে ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ আরেকটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়। এটির নাম হচ্ছে ‘চট্টগ্রাম পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প (ক্যাচমেন্ট-২ ও ৪)’ প্রকল্প। প্রকল্পের জন্য ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। জাপানের জাইকা, বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম ওয়াসা যৌথভাবে প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।

 

ওয়াসা সূত্র জানায়, ওয়াসার স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় পুরো চট্টগ্রাম শহরকে ৬টি ক্যাচমেন্টে ভাগ করা হয়। প্রণীত প্ল্যানের সুপারিশ অনুযায়ী ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ওয়াসার প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জোন-১ এর কাজ শুরু করে ওয়াসা। এরপর অপর ৫টি ক্যাচমেন্টের মধ্যে দুই ও চার নিয়ে আরো একটি স্যুয়ারেজ প্রকল্প তৈরি করে সরকারি সেবা সংস্থাটি। নগরীর কালুরঘাটের হামিদচর এলাকায় প্রকল্পের মূল স্থাপনা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা হবে। এটির দৈনিক ধারণ ক্ষমতা হবে ৬০ হাজার ঘন মিটার।

 

এছাড়া প্রকল্পের অধীনে প্রধান স্যুয়ারেজ লাইন নির্মাণ করা হবে ১১ কিলোমিটার, শাখা স্যুয়ারেজ লাইন ৭০ কিলোমিটার এবং সার্ভিস লাইন হবে ৭০ কিলোমিটার। প্রকল্পের আওতায় ৯৩২টি ম্যানহোল এবং গৃহ সংযোগ ও ক্যাচপিট নির্মাণ হবে ১৪ হাজার করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নগরীর জামালখান, চকবাজার, চান্দগাঁও, বাগমনিরাম, শুলকবহর ও ষোলশহরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা উপকৃত হবে। সূত্র জানায়, স্যুয়ারেজের ক্যাচমেন্ট- ৫ প্রকল্পটির অধীনে পয়ঃপাইপলাইন বসানো হবে ৯৮ কিলোমিটার এবং গৃহ সংযোগ দেওয়া হবে ৮ হাজার ১০০টি।

 

এ প্রসঙ্গে ‘নগরীর উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট স্যানিটেশন’ প্রকল্পের প্রণয়ন কর্মকর্তা, ওয়াসার প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, একনেক অনুমোদনের পর এখন স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য প্রকল্প পরিচালকসহ প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট স্থাপন করা হবে। এরপর নিয়োগ করা হবে কারিগরি পরামর্শক। তারপর ঠিকাদার নিয়োগের পর পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকল্পের কাজ মাঠে গড়াবে। তাছাড়া প্রকল্পের পয়ঃশোধনাগারটি নির্মাণ করা হবে হালিশহর এলাকায় বাস্তবায়নকৃত প্রথম স্যুয়ারেজের ভূমিতে। সেখানে ওয়াসার ১৬৩ একর নিজস্ব ভূমি রয়েছে। সেখান থেকে প্রায় ১৫ একর ভূমিতে স্যুয়ারেজের ক্যাচমেন্ট- ৫ প্রকল্পটির অধীনে পয়ঃশোধনাগার তৈরি করা হবে।

 

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ওয়াসার পরিকল্পনা হচ্ছে চট্টগ্রাম শহরকে স্বাস্থ্যসম্মত নগরীতে পরিণত করা। তারই অংশ হচ্ছে ওয়াসা স্যুয়ারেজের ক্যাচমেন্ট-৫ প্রকল্পটি। এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে- পানির উৎসের দূষণ রোধ, বিশেষ করে হালদা ও কর্ণফুলী নদীকে দূষণ থেকে রক্ষা করা। তাছাড়া বৃষ্টির পানির সাথে পয়ঃবর্জ্যরে মিশ্রণজনিত দূষণ এবং গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের ঝুঁকি থেকে পরিবেশকে রক্ষা করার মাধ্যমে নগরীর জনগণের জীবনযাত্রার মান, পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে অবদান রাখা।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট