চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ জুলাই, ২০১৯ | ২:১২ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে তিনটি মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। প্রস্তাবিত তিনটি লাইনে ৭শ মিটার থেকে ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার দূরত্বের ৪৭টি স্টেশনের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব মেট্রোরেলের ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিবেগ হবে এক’শ কিলোমিটার এবং গড় গতিবেগ থাকবে ৪৫ কিলোমিটার। একটি ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেলের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় লাইনের দুই প্রান্তের মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী উভয়দিকে পরিবহন সম্ভব হবে। গতকাল শুক্রবার ম্যাস রেপিড ট্রানজিট (এমআরটি) নামে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সম্মেলনের কক্ষে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড কন্সাল্ট্যান্টস লিমিটেড। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন ও বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম চৌধুরী দোভাষ।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অধীনে বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. এম আজাদুর রহমান, সওজের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবুল আলমসহ একটি টিমে ম্যাস রেপিড ট্রানজিট এমআরটি নির্মাণের প্রাক-যোগ্যতা সমীক্ষা নিয়ে আয়োজিত এক তথ্যচিত্র প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে আসে। ডেপুটি টিম লিডার মাহবুবুর রহমান এ তথ্যচিত্র উপাস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে তিনটি মেট্রোরেলের রুটের প্রস্তাব করা হয়। এরমধ্যে কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর সড়কে সাড়ে ২৬ কিলোমিটার, সিটি গেইট থেকে শাহ আমানত সেতুর শহীদ বশিরুজ্জামান চত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার ও অক্সিজেন থেকে একেখান বাস স্টেশন পর্যন্ত সাড়ে ১৪ কিলোমিটারসহ সর্বমোট সাড়ে ৫৪ কিলোমিটারের তিনটি লাইন করার প্রস্তাব এসেছে। তবে মেট্রোরেল প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে কী প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা উল্লেখ করে সমাধানেরও প্রস্তাব করা হয় প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে দুটি প্রতিবন্ধকতার কথা বলা হয়। তাহলো: বহদ্দারহাট থেকে লালখান বাজার সড়কাংশে সিডিএ কর্তৃক উড়ালসড়ক নির্মাণ ও লালখান বাজার থেকে বিমান বন্দর সড়কাংশে পতেঙ্গা হতে উড়ালসড়ক নির্মাণ কাজ আরম্ভ হয়েছে। তবে এ দুটি সমস্যার সমাধানেরও প্রস্তাবনা দেয়া হয় প্রতিবেদনে। সামাধনগুলো হল : লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত চলমান উড়ালসড়ক নির্মাণ কাজ স্থগিত রেখে এমআরটি স্থাপনকে অগ্রাধিকার প্রদান অথবা ডিজাইন পুর্নবিবেচনা করে সমন্বিতভাবে উড়ালসেতু ও এমআরটি স্থাপন করা যেতে পারে। উড়ালসেতুর পাশ দিয়ে এমআরটি নির্মাণ করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ ও ইউটিলিটি শিফটিংয়ের জন্য ব্যয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ৬০ বর্গমিটারের শহরে প্রতিদিন চাপ বাড়ছে। এত ছোট শহরে যে পরিমাণ জনসংখ্যা বাড়ছে তার কারণে যানজটসহ নানা ধরণের সমস্যা হচ্ছে। তার কারণে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিতে মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে সময় বাঁচবে, যানজট মুক্ত হবে, শহরে প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যারও হ্রাস পাবে। এটি অনেক আগেই পরিকল্পনা করার উচিত ছিল। এখন নগরীর ফ্লাইওভারের কারণে তা বাস্তবায়ন করতে অনেক প্রতিবন্ধকতা এসে সামনে দাঁড়িয়েছে। তবে সিডিএ যদি নো অবজেকশন সনদ দেয়, তাহলে এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেব। শুধু সিডিএ নয়, সকল সেবা সংস্থার সমন্বয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাই।
সমন্বয় করে কাজ করা নিয়ে মেয়র বলেন সিডিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার চুল পরিমাণও বিরোধ নেই। আমি সব ধরনের সহযোগিতা দিতে চাই। কিছু দিন আগে সাগরিকা স্টেডিয়াম এলাকায় আউটার রিং রোডের একটি সমস্যা সমাধান করেছি দুইজন এক সাথে গিয়ে। এক সময় মেট্রোরেল নিয়ে কেউ চিন্তা করেনি। আমরা এখন মেট্রোরেল নিয়ে পরিকল্পনা করছি, আশা করি বাস্তবায়নও হবে। আগে কেউ এটি চিন্তা করতে পারেনি, কারণ তখন দেশের সক্ষমতা ছিল না। এখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের ও মানুষের সক্ষমতা বেড়েছে। তাই আমাদের চিন্তা চেতনার পরিবর্তন এসেছে।
তিনি বলেন, প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী চট্টগ্রাম শহরের আয়তন বাড়ানোর জন্য কাজ করেছিলেন, কিন্তু সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ নানা আইনি জটিলতার কারণে সেটা হয়নি। এখনো সে আইনি জটিলতা বিদ্যমান আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এমন প্রকল্পের সাথে সিডিএ সহযোগিতা করবে উল্লেখ করে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম চৌধুরী দোভাষ বলেন, প্রকল্প শুরু করার আগে অবশ্যই সকল সেবা সংস্থার সাথে আলোচনা করা দরকার। সমন্বয় করে কোন কাজ করলে তার সুফল ভালো হয়। আজকে বন্দর ও রেলওয়ের প্রতিনিধি থাকলে আরও ভালো হতো। যে প্রতিবন্ধকতার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি বন্ধ করা ঠিক হবে না। বন্দরকে বাঁচাতে হবে। বন্দর বাঁচলে দেশ বাঁচবে। এটি দেশের একটি লাইফ লাইন। আর এমআরটির ডিপো তৈরির জন্য ৬০ একর জায়গা নগরীতে পাওয়া খুবই কঠিন। এটি নগরের বাইরে, তথা মিরসরাই বা সীতাকু- ও হাটহাজারীর দিকে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে গেলে লাইনও অনেক সম্প্রসারণ হবে।
প্রস্তাবিত মেট্রোরেলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন প্রকৌশলী আলী আশরাফ, সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস, চসিকের প্রধান প্রকৌশলী কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, চুয়েটের ভিসি রফিকুল আলম, স্থপতি সোহেল শাকুর, স্থপতি আশিক ইমরান, প্রকৌশলী সুভাষ বড়–য়া প্রমুখ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট