চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাগদা-হরিণাশূন্য হচ্ছে সাগর!

৭ মার্চ, ২০২২ | ১:১৪ অপরাহ্ণ

মিজানুর রহমান 

ইচ্ছেমতো মাছ ধরে সামুদ্রিক প্রতিবেশের বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত করায় সাগরে আশঙ্কাজনক হারে কমছে বাগদা ও হরিণা চিংড়ির পরিমাণ। দেশের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিশিং জোনে এই দুই প্রজাতির চিংড়ি আহরণের পরিমাণ কমে এসেছে অর্ধেকে।

গবেষকরা বলছেন- এখন যে হারে চিংড়ি আহরণ করা হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে সাগর বাগদা-হরিণাশূন্য হতে বেশি সময় লাগবে না। সম্প্রতি বাংলাদেশ, জার্মানি, ফিনল্যান্ড এবং চীনের একদল গবেষক বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিশিং জোনে বাগদা ও হরিণা চিংড়ির ভান্ডার নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন।

তাদের গবেষণায় দেখা গেছে- তিন যুগের ব্যবধানেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিশিং জোনে বাগদা চিংড়ি আহরণের পরিমাণ কমেছে ৫৮ শতাংশ। এই সময়ে ৪৬ শতাংশ কমেছে হরিণা চিংড়ি আহরণ। গবেষকরা জানিয়েছেন- ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিশিং জোনে ১৯৮৭ সাল থেকে নিয়মিত বাগদা ও হরিণা চিংড়ি আহরণ করছে বাংলাদেশ। ওই বছর সেখানে বাগদা চিংড়ি পাওয়া যায় ৪৮৯ মেট্রিক টন। যা এখন ২০৬ মেট্রিক টনে নেমে এসেছে। একই বছর ২ হাজার ৩৩৩ মেট্রিক টন হরিণা চিংড়ি পেয়েছিলেন জেলেরা। যা এখন নেমে এসেছে ১ হাজার ১৭০ মেট্রিক টনে।

উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল এলাকা হচ্ছে বাংলাদেশের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন। এখানের প্রথম ৪০ মাইল পরবর্তী এলাকাই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিশিং জোন। ১৯৮১ সালে প্রথম এই জোনে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছ ধরা শুরু হয়। তবে সামুদ্রিক প্রতিবেশের বাস্তুতন্ত্র না জেনে ইচ্ছেমতো দীর্ঘদিন চিংড়ি ধরায় সেখানে এখন বিপর্যয় নেমে এসেছে।

খ্যাতিমান আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘জার্নাল অব মেরিন সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’-এ প্রকাশিত চার দেশের গবেষকদের গবেষণায় দেখা গেছে-দীর্ঘদিন ইচ্ছেমতো চিংড়ি ধরায় দেশের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিশিং জোনে বায়োমস কমে এসেছে। ফলে যে পরিমাণ চিংড়ি ধরা হচ্ছে সে পরিমাণ চিংড়ি প্রতিস্থাপন হচ্ছে না। এ কারণেই সাগরে বাগদা এবং হরিণা চিংড়ির আহরণ কমে এসেছে।

মূল গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুল আলম (শাহীন) পূর্বকোণকে জানান- মাছ হচ্ছে রিনিউয়েবল রিসোর্স। সঠিক প্রক্রিয়ায় সাগর থেকে মাছ ধরলে যে পরিমাণ আহরণ করা হয়, তার চেয়ে বেশি মাছ ফের উৎপাদন হয়। তবে এ নিয়ে গবেষণা না থাকায় আমাদের জেলেরা ইচ্ছেমতো মাছ ধরেন।

তিনি বলেন, শুরু থেকে বছরে বাগদার আহরণ ২০৩ মেট্রিক টন এবং হরিণার আহরণ ১ হাজার ৪০৮ মেট্রিক টনের বেশি হওয়া উচিত ছিল না। কিন্তু যথেচ্ছভাবে ধরায় এই দুই প্রজাতির চিংড়ি এখন অর্থনৈতিক বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। এ অবস্থায় বাগদা ও হরিণা চিংড়ি রক্ষা করতে হলে আগামী ১০ বছর বাগদা ১০০ মেট্রিক টন এবং হরিণা ৭৫০ মেট্রিক টনের বেশি আহরণ করা যাবে না।

চবি শিক্ষক শাহীন বলেন, অতিরিক্ত এবং যথেচ্ছ চিংড়ি আহরণ বন্ধে ট্রলারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রতিটি ট্রলার বছরে কি পরিমাণ মাছ আহরণ করতে পারবে তা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। চিংড়ির পোনা আহরণ বন্ধ করতে হবে। সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য আইন পাস করার পাশাপাশি তা যথাযথভাবে প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, আগামী দশ বছর বায়োমস মেনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিশিং জোনে বাগদা ও হরিণা চিংড়ি ধরলে এরপর বছরে ২০৩ মেট্রিক টনের বেশি বাগদা এবং ১ হাজার ৪০৮ মেট্রিক টনের বেশি হরিণা চিংড়ি ধরতে পারবো আমরা। অর্থাৎ প্রতি বছর যে পরিমাণ ধরা উচিত ছিলো- সেটাতে ফেরৎ যেতে পারবো। সাগর চিংড়ি শূন্য হওয়ার পরিবর্তে সেখানে চিংড়ির পরিমাণ বাড়বে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট