চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

সামাজিক সংক্রমণের মূলে জনসমাগম

১৬ জানুয়ারি, ২০২২ | ১:০৪ অপরাহ্ণ

ইমাম হোসাইন রাজু

সপ্তাহ তিনেক আগেও চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ নেমে এসেছিল প্রায় শূন্যের কোটায়। কিন্তু ক’দিনের ব্যবধানে শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে ১৮৩ গুণ। হঠাৎ সংক্রমণের মাত্রা এত ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণ হিসেবে সামাজিক সংক্রমণ বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশনকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। সামাজিক সংক্রমণের পেছনেও চারটি কারণও খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। একইসময়ে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনও ছড়িয়ে পড়েছে, এমন সন্দেহ দানা বেঁধেছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সদ্য বিদায়ী বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর এ দুই মাসে সংক্রমণ হার কম থাকায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি হয়েছে। তারা বলেন, বিয়ে, নির্বাচন, সভা-সমাবেশ, মাহফিল, মেলার মত জনসংস্পর্শমূলক অনুষ্ঠানগুলোই হয়ে থাকে এ মৌসুমে। আবার চট্টগ্রাম অঞ্চল পর্যটনসমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় তাতেও জনসাধারণের ভিড় ছিল বেশি। এসব কারণে পরস্পরের সংস্পর্শে আসা বেড়েছে। আর তাতে করোনাভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনাও বেড়েছে। যার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে।
অবশ্য, আগামী দুই সপ্তাহ যদি সকলেই স্বাস্থ্যবিধি মানেন ও সচেতন থাকেন, তাহলে এক মাসের ব্যবধানেই আলোচ্য নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার সুফল পাওয়া যাবে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ও করোনার ব্যবস্থাপনার ফোকাল পার্সন ডা. আবদুর রব মাসুম বলেন, ‘রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও পারিপাশ্বিকতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বলছে, সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে সামাজিক সংক্রমণই দায়ী। সংক্রমণ যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যাওয়ায়, তখন ধরেই নিতে হবে নতুন কোন ধরন ছড়িয়েছে। তাই এখন যেহেতু ওমিক্রনের ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে, কিংবা তার সঙ্গে মিলও রয়েছে বর্তমান সংক্রমণ, তাই বলায় যায়, নীরবেই সংক্রমণ ছাড়িয়েছে ওমিক্রনের।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে ধারণা করা যায় সংক্রমণের তৃতীয় টেউ শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। যেহেতু অধিকাংশ মানুষের টিকা গ্রহণ করা আছে, আশা করছি মানুষ সচেতন হলে অন্তত মৃত্যুর সংখ্যাটাও কম হবে। তবুও এসব চিন্তা করা যাবে না। অবশ্যই আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। যারা টিকা গ্রহণ করেনি, তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকা নিতে হবে।’
দৈনিক কোভিড প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গেল ২৬ ডিসেম্বর রোগী শনাক্ত হয় মাত্র ৩ জন। ওই দিন সংক্রমণ হার ছিল ০ দশমিক ২৭ শতাংশ। এরপর থেকেই শনাক্ত ও সংক্রমণ হার দুটোই বাড়তে থাকে। যেটি গতকাল শনিবারই রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৫০ জন। এ দিন সংক্রমণ হার ছিল ২৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অর্থাৎ গেল ২০ দিনের ব্যবধানে সংক্রমণ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০২ গুণ।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস জুড়ে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি হয়েছে। তারমধ্যে এ সময়টি পর্যটন মৌসুমও। স্বাস্থ্যবিধি তো দূরের কথা মাস্ক পড়ারও দৃশ্য তখন কার চোখেই পড়েনি। সামাজিক এ সংক্রমণের কারণেই এখন করোনার ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে রূপ নিয়েছে। তবে এখন যদি সচেতন আর সতর্ক না হয়, তাহলে সামনে আরও বেশি সংক্রমণ বেড়ে যাবে।’
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ মোটেও সচেতন হচ্ছেন না। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সতর্কতা প্রদান করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং মাস্ক পড়ার প্রতি বরাবরই অনিহা। আর এসব কারণেই আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। এমন থাকলে সামনে আরও কঠিন অবস্থার মুখোমুখিতে পড়তে হবে।’

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট