চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘মানবাধিকার’ প্রশ্নবিদ্ধ ১২ ধরনের অপরাধে

মরিয়ম জাহান মুন্নী 

১০ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১:০৯ অপরাহ্ণ

গত তিন মাসে (আগস্ট থেকে অক্টোবর) করোনায় মারা গেছেন ৭১৮৩ জন। অথচ একই সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যাকা-ে খুন হয়েছেন ৫৫০ জন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৩৪৮ জন, ধর্ষণের শিকার হন ১৭ জন, আত্মহত্যা করেন ২০ জন।  বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এমন তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন (বিএইচআরসি)। অনাকাক্সিক্ষত এমন ১২ ধরনের অপরাধ ও তথাকথিত দুর্ঘটনা দেশের ‘মানবাধিকার’ পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করেন কমিশনের বৃহত্তর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার সভাপতি আমিনুল হক বাবু।

অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে, সামাজিক সহিংসতা, পারিবারিক সহিংসতা, রাজনৈতিক সহিংসতা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মৃত্যু, পরিবহন দুর্ঘটনা, বিএসএফ কর্তৃক হত্যা, অপহরণ, গুপ্তহত্যা, রহস্যজনক মৃত্যু, ধর্ষণ, আত্মহত্যা ও যৌতুক। বিএইচআরসি ডকুমেন্টেশন বিভাগ অনুসন্ধান এবং ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন (আইএইচআরসি)’র সহযোগিতায়  করা প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, আগস্ট থেকে অক্টোবর এই তিন মাসে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে সারাদেশে মোট মারা যায় ৫৫০ জন।

এরমধ্যে আগস্ট মাসে সামাজিক সহিংসতায় তিন জন, সেপ্টেম্বরে দুই জন ও অক্টোবরে মারা যায় চারজন। আগস্টে পারিবারিক সহিংসতায় মারা যায় ১৫ জন, সেপ্টেম্বরে ১৫ জন ও অক্টোবরে ২৬ জন। রাজনৈতিক কারণে আগস্টে মারা যায় পাঁচ জন, সেপ্টেম্বরে ছয় জন ও অক্টোবরে ১২ জন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আগস্টে মারা যায় পাঁচজন, সেপ্টেম্বরে দুই জন ও অক্টোবরে চারজন। বিএসএফ কর্তৃক হত্যার শিকার হয়েছে আগস্টে দুইজন ও সেপ্টেম্বরে দুইজন। তবে অক্টোবরে বিএসএফ কর্তৃক কোনো হত্যাকা- ঘটেনি বলে জানান সংস্থাটি। আগস্টে গুপ্তহত্যা হয়েছে ছয়টি, সেপ্টেম্বরে দুটি ও অক্টোবরে দুটি বেড়ে হয়েছে চারটি। রহস্যজনক মৃত্যু আগস্টে হয়েছে ৪০টি, সেপ্টেম্বেরে ৬০টি ও অক্টোবরে ৪৪টি।

এছাড়া আগস্টে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে দুইজন নারী, সেপ্টেম্বরে চারজন ও অক্টোবরে পাঁচজন।

জরিপে আরো দেখা যায়, পরিবহণ দুর্ঘটনায় আলোচ্য তিন মাসের মধ্যে আগস্ট মাসে মারা যায় ১৩৯ জন ও আত্মহত্যা করে সাত জন। সেপ্টেম্বরে পরিবহণ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১০২ জনের ও আত্মহত্যা করেছে ১০ জন। অক্টোবরে পরিবহণ দুর্ঘটনায় মারা যায় ৮৭ জন ও আত্মহত্যা করে তিন জন।

সেপ্টেম্বরে অপহরণের পর হত্যার শিকার হয়েছে তিন জন। একই মাসে যৌতুকের কারণে নির্যাতনে শিকার হয়েছে দু’জন নারী এবং অক্টোবরে যৌতুকের কারণে হত্যার শিকার হয় তিনজন। এছাড়াও জরিপে দেখা যায়, আগস্ট মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে নয় জন, সেপ্টেম্বরে ১০ জন  ও অক্টোবরে ১০জন নারী।

মানবাধিকার কমিশন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার সভাপতি আমিনুল হক বাবু বলেন, হত্যাকা-, ধর্ষণ, যৌতুকের মতো সামাজিক ব্যাধি আজো এদেশের অগ্রযাত্রা ও মানবাধিকার  রক্ষায় বড় বাধা হয়ে আছে। এসব অপরাধের আনুপাতিক হার যে পর্যায়ে রয়েছে সেটা কতোটা স্বাভাবিক তা নিয়ে সভ্য সমাজে  নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।

করোনা যেমন মহামারী তেমনি অস্বাভাবিক মৃত্যুগুলোও এক ধরণের মহামারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে আমরা দুর্ঘটনা বলেই চালিয়ে দিতে চাই। অথচ, বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনাগুলোকে কোনভাবেই শুধু দুর্ঘটনা কি বলা যায়? হেলপার কিংবা অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানোর পর চাপা পড়ে কারো মৃত্যু হলে সেটাকে কিভাবে আপনি দুর্ঘটনা বলবেন? এটাতো রীতিমতো হত্যাকা-। ঘুম ও ক্লান্তি চোখে নিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে রাস্তায় লোক মারা যাচ্ছে, সেটাকে কি আমরা দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিলে হবে?

আমিনুল হক বাবু আরও বলেন, আত্মহত্যার পেছনের কারণ ঘাঁটলে দেখা যাবে, সেগুলোর অধিকাংশের ক্ষেত্রেই কোন না কোন প্ররোচনা কাজ করেছে। আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়ার প্ররোচনাকে কি স্বাভাবিক বলা যায়?

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট