চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে লণ্ডভণ্ড সাগর তীরবর্তী মাছের খামার

লাভের মাছ সাগরের পেটে

মিজানুর রহমান

১ জুন, ২০২১ | ১২:৫৯ অপরাহ্ণ

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাছ চাষ করে যখন মাছ বিক্রির কাছাকাছি সময়-ঠিক তখনই ঘূর্ণিঝড়ে উত্তাল সাগরের জলোচ্ছ্বাস খামার ভাসিয়ে সাগরের পেটে নিয়ে গেছে সব মাছ। এই কারণে ‘লাভের গুড় পিঁপড়ায় খায়’- প্রবাদবাক্যটি এখন মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছেন নগরীর হালিশহর ও কাট্টলীর বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী মাছের খামারিরা। গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে হালিশহর ও কাট্টলী এলাকার সাগর তীরবর্তী প্রায় সব মাছের খামার প্লাবিত হয়। জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত এসব খামার থেকে পানির সঙ্গে মাছও সাগরে চলে যায়। ঢেউয়ের তীব্রতায় ভেঙে যায় কোনো কোনো খামার পুকুরের পাড়। এছাড়া মিঠা পানির পুকুরে সাগরের নোনা পানি প্রবেশ করে মারা যায় রুই, কাতাল, তেলাপিয়াসহ মিঠা পানির মাছ।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে দক্ষিণ কাট্টলী পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার বিস্তৃত সিটি আউটার রিং রোড় ঘিরে সম্প্রতি হালিশহর ও কাট্টলীর বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এলাকায় প্রাণ পায় মাছের চাষ। সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি জমি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবেই এখানে চাষ করছেন- বাগদা চিংড়ি, কোরাল, টেংরা থেকে নানান প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। একেকটি খামারে বিনিয়োগ করা হয়েছে কোটি টাকার উপরে। আউটার রিং রোড শহর এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ৫৪ লাখ টাকায় প্রায় ৬৫ একর জমি ৫ বছরের জন্য লিজ নিয়ে খামার গড়ে তুলেছেন দুই ব্যক্তি। গতকাল সোমবার কথা হয় ‘মামা ভাগিনা আল্লাহর দান মৎস্য প্রকল্প’ নামে খামারটির তত্ত্বাবধায়ক মো. আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে।

তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল- সাগর তীরের দুইটি নোনা পানির পুকুরে প্রায় ৪ লাখ বাগদা চিংড়ির পোনা ছেড়েছিলেন তারা। আগামী জুলাইয়ে এসব পোনো বিক্রির কথা ছিলো। তবে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে তার আগেই সব পোনা ভেসে সাগরে চলে গেছে। পুকুরের পাড় ভেঙে গেছে। শুধু তাদের খামার নয়- পুরো এলাকার অন্তত ২০-২৫টি মাছের খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইয়াস এর প্রভাবে।

তত্ত্বাবধায়ক মো. আনোয়ার হোসেনের দাবি- ১৫-২০টি চিংড়ির কেজি বাজারে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। সেই হিসাবে সাগরে চলে যাওয়া বাগদা চিংড়ির বাজার মূল্য থেকে খরচ বাদ দিয়ে ৩০-৩৫ লাখ টাকা লাভ হওয়ার কথা। একটি ঘূর্ণিঝড়ই আমাদের ৩৫ লাখ টাকার লাভ সাগরের পেটে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এই বছর পুরোটাই লোকসান গুনতে হবে।

এই প্রকল্পে সাগর লাগোয়া দুইটি সামুদ্রিক মাছ চাষের নোনা পানির পুকুরের পাশে বড় বাঁধ দিয়ে অন্য দুইটি পুকুরে চাষ করা হচ্ছে মিঠা পানির মাছ। জলোচ্ছ্বাসে সাগরের নোনা পানি ঢুকে সেখানেও মারা গেছে ১০ টন তেলাপিয়া মাছ। ১২ একর ও ৫ একরের এই দুই মিঠা পানির পুকুরে বেড়েছে পানির ক্ষারের পরিমাণও।

মো. আনোয়ার হোসেন জানান, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মিঠা পানির পুকুর দুইটিতে পানির সংকট ছিলো। একটি পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায়। জলোচ্ছ্বাস শুরু হলে বাঁধ বাঁচাতে শুকিয়ে যাওয়া পুকুরে আমরা অল্প পরিমাণে সাগরের নোনা পানি প্রবেশ করাই। এতে মিঠা পানিতে ক্ষার বেড়ে প্রায় ১০ টন তেলাপিয়া মাছ মারা যায়। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এখন অন্য মাছগুলো বাঁচাতে প্রচুর বৃষ্টির পানির প্রয়োজন। বৃষ্টি না হলে মিঠা পানির সব মাছ মারা যাবে।

তিনি বলেন- প্রথম মেয়াদে ৫ বছর, দ্বিতীয় মেয়াদে ১ বছরসহ এই খামারের মেয়াদ এখন ৬ বছর। অথচ একজন মৎস্য কর্মকর্তাও এখানে পরিদর্শনে আসেননি। আমাদের কোনো সহায়তা বা পরামর্শ দেননি। তাদের অফিসে গেলেও পাওয়া যায় না। তাই মাছ চাষে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। এখন লোকসান হলে কমী ছাঁটাইয়ের দিকে হাঁটতে হবে।

লাভের আশায় চাষ করা মাছ সাগরের পেটে চলে গেছে। বৃষ্টির অভাবে অনেক মাছ মরে গেছে। মাছের খাবারের দাম বাড়ছেই। এই অবস্থায় টিকে থাকতে হলে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। সহায়তা না পেলে শুধু আমরা নই, সাগর তীরের সব মাছ চাষীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন। যোগ করেন তত্ত্বাবধায়ক মো. আনোয়ার হোসেন।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট