চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

শিগগিরই ১৭ পাহাড়ে উচ্ছেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক 

১ জুন, ২০২১ | ১২:২০ অপরাহ্ণ

গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ওয়াসার অবৈধ সংযোগ চিহ্নিত করার পর সেই প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে চট্টগ্রামের ১৭ ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে শিগগিরই সাঁড়াশি উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২১তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান পূর্বকোণকে বলেন, পাহাড়ে অবৈধ বসকারীদের বিভিন্ন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর পুনরায় কিভাবে সংযোগ দেওয়া হয় তা মনিটর করার জন্য একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ, ওয়াসা ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সদস্য করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিবেদন পাওয়ার পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে উচ্ছেদ অভিযান আরও জোরদার করা হবে। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের নাম ও প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।

সভায় উচ্ছেদ অভিযান সংক্রান্ত সাব কমিটির আহ্বায়ক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক নূরুল্লাহ নূরী বলেন, নগরীর ফিরোজশাহ পাহাড়ে তিন হাজার পরিবারের বসবাস রয়েছে। রেলওয়ের মালিকানাধীন এ পাহাড়ে বসবাসকারীদের কোনো তথ্য নেই রেলওয়ের কাছে। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো যাচ্ছে না। অভিযান পরিচালনা করতে হলে মামলা বিষয়ে বিবেচনায় আনতে হবে। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, সীতাকু- জঙ্গল ছলিমপুর পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ অভিযান ঠেকাতে আদালতে মামলা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এ বি এম আজাদ এসব রিট মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে নিদের্শনা দেন ।সভায় বলা হয়েছে, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল পাহাড়ে জেলা প্রশাসনের হিসাবে ১৬২ পরিবারের বসবাস দেখানো হয়েছে। অথচ এখানে দুই হাজারের বেশি পরিবারের বসবাস রয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১৭ পাহাড় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহিৃত করেছে জেলা প্রশাসন। প্রতি বছর অবৈধ বসবাসকারীদের তালিকা হালনাগাদ করা হয়। এবার সেই তালিকা হালনাগাদ করার তাগিদ দেওয়া হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন ও পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ নাজমুল আহসান গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘ইতিমধ্যেই আমরা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছি।’

সভায় বলা হয়েছে, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল পাহাড়ের পাদদেশে ৪-৫ তলা ভবনও রয়েছে। পাহাড়ের মালিক জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে। কিন্তু কোনো সংস্থাই পাহাড়-জমির লিজ দেয়নি। প্রভাবশালী ও স্বার্থান্বেষীমহল জমি দখল করে ভাড়া দিয়েছেন। চলতি বছরও পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এবার সরকারি-বেসরকারি পাহাড় মালিকেরা তালিকা ডাটা বেইস করে আগামী সভার আগেই সদস্য সচিবের কাছে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, পাহাড়ে বসবাসকারীদের উচ্ছেদে যেকোনো সংস্থা সহযোগিতা চাইলে জেলা প্রশাসন সহায়তা করবে।

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সাব কমিটিতে এবার র‌্যাব-৭ কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্যরা হলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার অফিসার ইনচার্জ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, পাহাড় মালিক (সরকারি-বেসরকারি), ফায়ার সার্ভিস প্রতিনিধি।

দেখা যায়, লালখান বাজার মতিঝর্ণা, বাটাহি হিলসহ বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে শত শত পরিবারের বসবাস রয়েছে। এসব পাহাড়ে গড়ে ওঠেছে পাকা দালান, ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা। স্থানীয়দের দাবি, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিরা অবৈধভাবে পাহাড় দখল ও পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করে জমিদারি কায়দায় ভাড়া দিয়ে আসছে। এসব ঘরবাড়ি ও বস্তিতে নাগরিক সুবিধার বিদ্যুৎ, পানির সুবিধা রয়েছে। কোনো কোনো বস্তিতে আবার গ্যাস সংযোগও রয়েছে। অল্প টাকায় ভালো নাগরিক সুবিধা পাওয়ায় মৃত্যুকূপ ছাড়তে চান না বসবাসকারীরা। এর পেছনে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজশও রয়েছে। ২০০৭ সালের ১১ জুন লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকায় ভয়াবহ পাহাড় ধসে মারা গিয়েছিলেন ১২৭ জন।

জেলা প্রশাসনের একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ করা হলেও অভিযান শেষ হওয়ার পর পরই পুনরায় সংযোগ লেগে যায়।

সভায় বিদ্যুৎ বিভাগের খুলশী শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘মতিঝর্ণা ও বাটালি হিলে নতুন করে কোনো সংযোগ দেওয়া হয়নি। এখানে ২০-২৫ বছর ধরে মানুষ বসবাস করে আসছে। যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করা হলে সফলতা আসবে।

ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বলেন, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিলে ওয়াসার কোনো সংযোগ নেই। দেওয়াও হচ্ছে না। বসবাসকারীরা শ্যালো টিউবওয়েলের মাধ্যমে পানি ব্যবহার করে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এ বি এম আজাদ বলেন, পাহাড়ে কোনো অবৈধ সংযোগ রয়েছে কিনা তা ১৫ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতি অনুরোধ করেছেন। কোনো অবৈধ সংযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার উপর বর্তাবে।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট