চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

কমিটি সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছে

প্রায় একযুগ ধরে ‘নিষ্ক্রিয়’ সিডিএ’র প্রকল্প বিভাগ

ইমরান বিন ছবুর

১ জুন, ২০২১ | ১২:০৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রকল্প বিভাগকে ‘পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়’ রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠানোর মধ্যেই এই বিভাগের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছে সিডিএ। প্রকল্পের গুণগতমান অক্ষুন্ন রেখে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক-মূল্যায়ন, মধ্যবর্তী মূল্যায়ন ও বাস্তবায়নত্তোর মূল্যায়ন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এসব কর্মকা- মনিটরিং করার জন্য সিডিএ’র সাংগঠনিক কাঠামোতে প্রকল্প বিভাগ নামে এক আলাদা শাখা রয়েছে, যার দায়িত্ব পালন করতেন একজন সিনিয়র নির্বাহী প্রকৌশলী। বর্তমানে সিডিএ’র প্রকল্প বিভাগের এই মনিটরিং ও ইভালুয়েশন সেলটিকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় রেখে শুধুমাত্র মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠানোতে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। প্রায় ১০-১২ বছর ধরে এই প্রকল্প বিভাগ নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক তদন্ত প্রতিবেদনে এসব কথা উল্লেখ করা হয়। সিডিএ’র তিনজন বোর্ড সদস্য, একজন নির্বাহী প্রকৌশলী এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একজন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

তদন্তে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বর্তমান সরকার চট্টগ্রামের গুরুত্ব বিবেচনা করে চট্টগ্রামের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প সিডিএ’র মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প সমূহের গুণগতমান অক্ষুন্ন রেখে টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকল্পের প্রাক-মূল্যায়ন, মধ্যবর্তী মূল্যায়ন ও বাস্তবায়নত্তোর মূল্যায়ন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এসব কর্মকা- মনিটরিং করার জন্য চউকের সাংগঠনিক কাঠামোতে প্রকল্প বিভাগ নামে এক আলাদা শাখা রয়েছে, যার দায়িত্ব পালন করতেন একজন সিনিয়র নির্বাহী প্রকৌশলী। চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিরাট কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নাধীন থাকা সত্ত্বেও সিডিএ’র নিজস্ব উক্ত মনিটরিং, ইভানুয়েশন সেলটিকে পুরোপুরি নিস্ক্রিয় রেখে শুধুমাত্র মন্ত্রাণয়ে রিপোর্ট পাঠানোতে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অথচ নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) এই শাখাটিকে চাউকের রিচার্স উইং বলা হয়ে থাকে। যে শাখা নিরপেক্ষভাবে কর্তৃপক্ষ সমীপে প্রকল্পসমূহের সার্বিক বিষয় তুলে ধরে, বাস্তবায়িত এবং বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের উপায় ও কারিগরি দিকসমূহ সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) এর অধীনে প্রকল্প মনিটরিং এবং ইভালুয়েশনের মাধ্যমে সম্ভব।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জনগণের স্বার্থে সরকারের সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও টেকসই প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের স্বার্থে চউকের সাংগঠনিক কাঠামোতে নিজস্ব মনিটরিং শাখা, নির্বাহী প্রকৌশলীকে (প্রকল্প) শক্তিশালী ও একটিভ করা প্রয়োজন। জনগণের স্বার্থকে সর্ব্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতা পরিহারসহ নিজেদের ব্যক্তিগত লাভবানের সংস্কৃতি হতে বের করে এনে প্রতিটি পদের বিপরীতে কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের কোন বিকল্প নেই। এভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীর দক্ষতা, সততা, জবাবদিহিতা এবং নিরলস প্রচেষ্টায় স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠন সম্ভব।

মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সিডিএ’র তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, চটগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামো স্থিত নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) শাখাটিকে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এ শাখাটিকে প্রকল্প সংক্রান্ত তথ্যভান্ডার এবং রিচার্জ ওয়িং বলা হয়ে থাকে। তাই একজন উচ্চশিক্ষিত, দক্ষ, সৎ কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ শাখা সৃষ্টি করাসহ নিয়মিত নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) এর চাটার্ড অব ডিউটি পালনের সুযোগ করে দেওয়া প্রয়োজন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির সদস্য বলেন, প্রকল্প বিভাগের কর্মকর্তা যদি অন্য কোন প্রকল্পের দায়িত্বে থাকেন, তাহলে তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরপেক্ষভাবে ভূমিকা রাখতে পারবেন না। বর্তমানে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরের পর বছর মেয়াদ ও প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি যার অন্যতম কারণ। বর্তমানে যদি প্রকল্প বিভাগ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারতো, তাহলে সিডিএ’র প্রকল্প বাস্তবায়নে এ দীর্ঘসূত্রিতা হতো না। প্রকল্প বিভাগ শাখাটিকে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, সিডিএতে বর্তমানেও প্রকল্প বিভাগ নামের একটি শাখা চালু রয়েছে। যেখানে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দায়িত্বে রয়েছেন। যিনি প্রকল্প সম্পর্কে নিয়মিত মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দিচ্ছেন।

প্রকল্প বিভাগের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকলে কাজে ব্যাঘাত ঘটবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা যেহেতু নিয়মিত মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিচ্ছেন, তাহলে কাজে ব্যাঘাত ঘটার কোন সুযোগ নেই।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট