চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

আগুনে স্বপ্ন ধূলিসাৎ রহিমা ও খতিজার

মরিয়ম জাহান মুন্নি 

১ মে, ২০২১ | ৩:৩৮ অপরাহ্ণ

রহিমা বেগমের মেয়ের বিয়ের দিন ধার্য হয়ে গেছে। সেজন্য প্রায় দুই ভরি স্বর্ণ জোগাড় করে রেখেছেন তিনি। অপরদিকে বিবি খতিজা গ্রামের বাড়িতে ভিটা ক্রয়ের জন্য সঞ্চয় করেন ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। দু’জনের স্বপ্ন  ধূলিসাৎ হয়ে গেল নিমিষেই। আগুন তাদের এখন নিঃস্ব করে দিয়েছে। সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ঘরের সামনে বসেই মাথায় হাত দিয়ে কান্না করছেন রহিমা বেগম। শুধু রহিমা বেগমই নয়, এ আগুনে সহায়সম্বল হারিয়েছেন আরো ৩৫টি পরিবার। 

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বহদ্দারহাট বাদশা চেয়ারম্যানঘাটা আবুল মিয়ার কলোনিতে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে লাগা আগুনে ৩৫টি ঘর পুড়ে গেছে।  সরেজমিনে দেয়া যায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া প্রতিটি ঘরের সামনে কান্না করছেন নারী-পুরুষেরা। কেউ কেউ সেই পুড়ে যাওয়া ঘরের ভেতরের ছাই থেকে খোঁজার চেষ্টা করছেন, যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তার আশায়।  রহিমা বেগমের সাথে আলাপে তিনি বলেন, ২০ বছর হলো ভোলা থেকে চট্টগ্রামে এসেছি।

এ ২০ বছরই মানুষের বাসায় বুয়ার কাজ করছি। এভাবেই আমি সংসার চালিয়েছি। এখন মেয়ে বড় হয়েছে। মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে, আকদ হয়ে গেছে। ঈদের পরে তুলে নিবে। তাই বিয়ের জন্য অনেক দিন ধরে কিছু স্বর্ণ জোগাড় করেছি। সেগুলো ঘরে ছিল। আমি প্রতিদিনের মতই মানুষের বাসায় কাজে ছিলাম। আর মেয়ে চাকরি করে পোশাক কারখানায়। সেও তখন আসেনি ঘরে। আমি আগুন লাগার বিষয়ে কিছুই জানতাম না। এসে দেখি আমার সব কিছুই শেষ। ১২ হাজার টাকাসহ দুই ভরি স্বর্ণ ও মেয়ের শ্বশুর বাড়ি দেওয়ার জন্য কিছু জিনিস কিনেছিলাম, একটা বিদেশি কম্বল ছিল সব কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এখন আমি কি করবো। বলতেই বুক চাপড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

এদিকে খতিজা বলেন, ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা আমি রান্না ঘরের একটা গোপন জায়গায় রেখেছিলাম। আমার ঘরে রান্নাঘর দিয়েই আগুন লাগে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দিশেহারা হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। টাকাগুলো নিতে সময় পাইনি। এ টাকা আমার স্বামীর ৩০ বছরের সঞ্চয়। আমাদের গ্রামের বাড়ি ভোলায়। গ্রামে ভিটার জায়গা নেই। এতো বছর ধরে ছোট তিন ছেলেকে নিয়ে তিল তিল করে জমিয়েছি। এবার ঈদে গ্রামে যাব আর একটা জায়গা কিনবো। এটাকার মধ্যে আবার কিছু টাকা আমি এনজিও থেকে ঋণ করে নিয়েছি। এখন আমি কি করবো।

একইভাবে পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কান্না করছেন মাসুমা নামের প্রায় ৬০ বছরের বেশি বয়সের এক নারী। তাঁর এক ছেলে রাজমিস্ত্রি ও অন্য ছেলে তরকারি বিক্রেতা। অনেক দুঃখ কষ্ট করে একাই দুই ছেলেকে মানুষ করেন এ নারী। যখন একটু সুখের সময় তখনি আগুনে হারিয়েছেন সহায়সম্বল। ঘরে ১০ হাজার টাকাসহ সব কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায় তার।

কলোনির মালিক শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘৪৫টি ঘরের মধ্যে ৩৫টি ঘরই একেবারে পুড়ে যায়। আমাদের এখানে অনেক পুরাতন ভাড়াটিয়া আছে। সবাই ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। আমি দুর্ঘটনার পর থেকে যেভাবে পারছি সবাইকে সাহায্য করে যাচ্ছি। আজকে (গতকাল শুক্রবার) আবার আমাদের সিটি মেয়র এসেছেন এ মানুষগুলোর জন্য খাবার নিয়ে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি তাদের কাপড়, খাবার দিয়ে পাশে দাঁড়াতে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট