চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

কমছে রোজার ভোগ্যপণ্যের দাম

ইফতেখারুল ইসলাম 

৫ এপ্রিল, ২০২১ | ১২:০৪ অপরাহ্ণ

একদিনের ব্যবধানে দেশের বৃহৎ পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে আদা, রসুন এবং পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আদার দাম। অপরদিকে, ছোলা এবং মটর, ডালসহ বেশকিছু ভোগ্যপণ্যের দাম গত এক সপ্তাহ ধরে নিম্নমুখী।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনার প্রকোপ বাড়লেও গতবারের তুলনায় এবার ত্রাণ তৎপরতা সেভাবে শুরু হয়নি। যেকারণে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা তুলনামূলক কমে যাওয়ায় দাম কমেছে। তাছাড়া করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকেও পাইকারি ক্রেতারা তেমন আসছে না। একারণে রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে ভোজ্যতেল, চিনি ও ডাল জাতীয় পণ্য ছোলা, মটর, মসুর, খেসারি ডালের দাম কমেছে পাইকারিতে।

খাতুনগঞ্জে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতিমণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) অস্ট্রেলিয়ার ছোলা বিক্রি হচ্ছে ২২০০-২৬০০ টাকার (কেজি ৫৯-৭০ টাকা) মধ্যে। সপ্তাহ আগেও বাজারে একই মানের ছোলা ২৩০০-২৭০০ টাকার (কেজি ৬২-৭২ টাকা) মধ্যে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম মণে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এক সপ্তাহ আগেও বাজারে প্রতিমণ মিয়ানমারের ছোলা বিক্রি হয়েছে ২৮০০ টাকা দরে। ১০০ টাকা কমে এখন ২৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ আগে বাজারে প্রতিমণ মটর বিক্রি হয়েছে ১৫০০ টাকায় (কেজি ৪১ টাকা)। গত এক সপ্তাহে মণে ১০০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকার মধ্যে (কেজি ৩৮ টাকা)। গত সপ্তাহে মণে ১১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে আমদানিকৃত মসুরের দাম।

বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া (মোটা জাতের) মসুর বিক্রি হচ্ছে ২৩১৩ টাকা (কেজি ৬২ টাকা) দামে। যা এক সপ্তাহ আগেও ২৪২৫ টাকায় (কেজি ৬৫ টাকা) বিক্রি হয়েছে। আমদানি না হলেও আমদানি পণ্যের সাথে পাল্লা দিয়ে কমেছে খেসারির দামও। এক সপ্তাহ আগে বাজারে প্রতিমণ খেসারি বিক্রি হয়েছে ২৭২৫ টাকার (কেজি ৭৩ টাকা) নিচে। মণে প্রায় ২৬০ টাকা কমে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৪৬০ টাকা (কেজি ৬৬ টাকা) দামে। দীর্ঘদিন অস্থির থাকার পর এক সপ্তাহ ধরে নি¤œমুখী হয়েছে চিনির বাজারও। গত সপ্তাহেও প্রতি মণ চিনির দাম ঠেকেছিল ২৩৮০ টাকায় (কেজি ৬৪ টাকা)। এখন মণে ৮০ টাকা পর্যন্ত কমে মণ ২৩০০ টাকায় (সাড়ে ৬১ টাকা) বিক্রি হচ্ছে। নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে ভোজ্যতেলের বাজারও। পাইকারিতে প্রতিমণ (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৩৮৫০ টাকায়। গত সপ্তাহ পর্যন্ত বাজারে পাম অয়েলের দাম ছিল ৩৯৫০ টাকা। সুপার পাম অয়েলের দাম ১০০ টাকা কমে ৪১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেলের দামও মণে ১০০ টাকা কমে ৪৫০০ টাকা হয়েছে। কমেছে চিড়ার দামও। মানভেদে প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) চিড়া বিক্রি হচ্ছে ২৩৫০-২৬৫০ টাকা দরে। যা গত এক সপ্তাহ আগেও ২৫০০-৩০০০ টাকা ছিল।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী আহমদ রশিদ আমু জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে ছোলাসহ ডাল জাতীয় পণ্যের দাম কমছে। রোজার আগে আরো কমার সম্ভাবনা আছে উল্লেখ করে বলেন, ক্রেতারা এখন অনেক সচেতন। একসাথে বেশি করে ক্রয় করেন না।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শবে বরাতের পর ও রমজানের আগ মুহূর্তে খাতুনগঞ্জ সরগরম থাকে। এসময় দেশের জেলা-উপজেলার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এসে রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য সওদা করে। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। গত এক সপ্তাহ থেকে বাজারে জেলা-উপজেলার ব্যবসায়ী আসছে খুবই কম। যার প্রভাবে রমজানের প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম কমে গেছে। তবে আমদানিকারকরা ইতোমধ্যে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে পণ্য বিক্রি করে তাদের মুনাফা তুলে নিয়েছে। এই অবস্থায় করোনার প্রভাবে পণ্যের দাম কমলে মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাজারের দ্বিতীয় সারির পাইকার ও জেলা-উপজেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, হঠাৎ করে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে দুই টাকা বেড়ে গেছে। দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় চার টাকা। রসুনের দাম এক লাফে ৫ টাকা এবং ভারতীয় আদার দাম প্রায় ১৪ টাকা বেড়ে গেছে। খাতুনগঞ্জে দেশি পেঁয়াজ দুই দিন আগেও ২৮ টাকা ছিল। গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম এখন কেজি ৩১ টাকা। পাইকারিতে ৪৬ টাকার আদা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকার উপরে। অপরদিকে, ৯৩ টাকার রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ৯৮ টাকায়।

খাতুনগঞ্জ হামিদ উল্লাহ বাজার আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস পূর্বকোণকে বলেন, লকডাউনের আগে ক্রেতার ভিড় একটু বেশি ছিল। অপরদিকে পাইকারদের স্টকে চাহিদার তুলনায় পণ্যের পরিমাণ কম ছিল। তাছাড়া এসব পণ্যের মৌসুমও শেষের দিকে। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন রমজানে এসব পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট