চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

বড় ব্যয় হয় করোনার ত্রাণে। এখন প্রচারণা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে

চসিক নির্বাচন: বাড়ছে প্রার্থীদের ভোটের ব্যয়

ইসি’র সীমা মেয়র পদে ২৫ লাখ ও কাউন্সিলর পদে ৫ লাখ টাকা

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৬ ডিসেম্বর, ২০২০ | ৫:১০ অপরাহ্ণ

‘করোনা সংক্রমণকালে অর্ধকোটি টাকার ত্রাণ সহায়তা করতে হয়েছে। ভোটের মাঠে ছিলাম বলে নিম্নবিত্ত ছাড়াও মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝেও সহায়তা পৌঁছাতে হয়েছে। তা ছিল মানবিক সহায়তা। দেশের দুর্যোগ-সময়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে তা করতে হয়েছে। এখন বেড়েছে সামাজিক অনুষ্ঠান। টাকা থাক আর না থাক অনুদানের অঙ্ক কিন্তু বাড়তি গুনতে হচ্ছে। কারণ সামনে ভোট। সবার মন রক্ষা করতে হচ্ছে। ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত বাড়তি খরচের লাগাম টেনে ধরা যাবে না’, এ মন্তব্য এক কাউন্সিলর প্রার্থীর।

নির্বাচন কমিশন একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর ৫ লাখ টাকা এবং মেয়র প্রার্থীদের জন্য ২৫ লাখ টাকা খরচের ব্যয়সীমা বেঁধে দেয়। কিন্তু নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার কারণে সেই ব্যয়সীমা এবার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র ওঠে আসে। তবে প্রার্থীরা করোনা সহায়তাকে মানবিক সহায়তা বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, জনপ্রতিনিধি বা রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রার্থী ছাড়াও সমাজের বিত্তবানরাও করোনা সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন।

৮নং শুলকবহর ওয়ার্ডের সদ্য-সাবেক কাউন্সিলর ও আ. লীগ দলীয় প্রার্থী মোরশেদ আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণকালে নির্বাচন ছাপিয়ে মানবিক কারণে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হয়। দেশের চরম সংকটময় মুহূর্তে ফ্রি এম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সার্ভিস চালু করেছি। ওয়ার্ডের বিত্তবান লোকজনের সহায়তায় তা করেছি। দেশের দুর্যোগময় সময়ে সবাই এগিয়ে এসেছেন। এটাকে নির্বাচনী ব্যয় বলা যাবে না। তবে নির্বাচন দীর্ঘায়িত হওয়ায় নানা কারণে খরচ বেড়েছে।’

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ২৯ মার্চ ভোটগ্রহণের কথা ছিল। ৯ মার্চ প্রতীক বরাদ্দের পর ভোটের মাঠে ছিলেন প্রার্থীরা। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর চসিক নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সদলবলে প্রচার-প্রচারণায় প্রচুর লোকের সমাগম হয়ে আসছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।

করোনা পরিস্থিতি মহামারী রূপ নিলে নানা ধরনের সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে ছিলেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হেভিওয়েট দুই প্রার্থী নিরবছিন্নভাবে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছেন। করোনায় ব্যয়বহুল আইসোলেশন সেন্টার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সুরক্ষ আর খাদ্য সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে ছিলেন তারা। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নানাভাবে জনগণের পাশে ছিলেন। ভোট শেষ না হওয়ায় এখনো মাঠে থাকতে হচ্ছে। বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে হচ্ছে। এতে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যয় বেড়েই চলেছে।

আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে মাঠে নেমেছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মতবিনিময় সভা করে চলেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী। বসে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরাও।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সারা বছরই আমি সামাজিক কর্মকা-ে সাধ্যমতো সহায়তা করে আসছি। মেয়র প্রার্থী হওয়ার কারণে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে মানবিক সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে ছিলাম। আইসোলেশন সেন্টার, সুরক্ষাসামগ্রী, শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করেছি। তবে আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাক্সক্ষী ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের সহায়তায় তা করেছি। আমার ওপর বড় চাপ পড়েনি। তবে নির্বাচন নয়, আল্লাহর ইচ্ছায় তা হয়েছে। দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি, এটাই মনের সান্ত¡না।’

বিএনপি প্রার্থী ও নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি জনগণের দল বলে আমরা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আইসোলেশন সেন্টার, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, সুরক্ষা ও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে জনগণের পাশে ছিলাম। এখানে নির্বাচন মুখ্য নয়। দায়বদ্ধতার কারণে জনগণের দুঃসময়ে পাশে ছিলাম।’

৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন সাহায্য-সহযোগিতা করতে হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি ছিলাম বিধায় করোনাকালে সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে ছিলাম। এটাকে তো নির্বাচনী ব্যয় বলা যাবে না। নির্বাচনী ব্যয় হচ্ছে পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট, প্রচার-প্রচারণার খরচ।’

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট