চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

শিশুমৃত্যুর ৩৩ শতাংশই শ্বাসকষ্টে

ইমাম হোসাইন রাজু 

২৮ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১২:৪৪ অপরাহ্ণ

চার বছরের শিশু নাহিয়ান। হঠাৎ করে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা যায় প্রবাসী নুরুল ইসলামের একমাত্র ছেলের। বাড়িতে রেখে কিছুদিন পল্লী চিকিৎসকের সেবা নিলেও শারীরিক অবস্থা অবনতি হতে থাকে। সবশেষ ছুটে আসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। যদিও হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হয়, তবে শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত শ্বাসকষ্টের কারণে মৃত্যুর কাছেই হার মানতে হয় তাকে।

শুধু শিশু নাহিয়ানই নয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন বহু শিশু। এরমধ্যে শুধুমাত্র শীতজনিত এবং অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়াদের প্রায় ৩৩ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয়েছে শুধুমাত্র শ্বাসকষ্ট রোগের কারণে।

স্বাস্থ্য বিভাগ ও চিকিৎসকদের ভাষ্য, শীত মৌসুমে শিশুদের ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকে। তাই এ সময়ে অবশ্যই তাদের বাড়তি নজর নেয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিশুদের চিকিৎসায় বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল গড়া এখন সময়ের দাবি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ঠান্ডাজনিতসহ যে কোন উপসর্গ দেখা দিলেই সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। নিজে নিজে কিংবা কোন ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে শিশুকে খাওয়ানো উচিত নয়। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে সুস্থ হয়ে ওঠা ততটাই সহজ হবে।

তথ্য অনুসারে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু বিভাগে (৮, ৯ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে) ভর্তিরতদের মধ্যে শুধুমাত্র চলতি মাসের গেল ২৬ দিনে মৃত্যু হয়েছে ২৪২ জনের। যারা সকলেই শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এদের মধ্যে ৮৫ জনই শ্বাসযন্ত্র সমস্যা নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। যদিও তার আগের মাসে অর্থাৎ নভেম্বরে শুধুমাত্র ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডেই শ্বাসকষ্ট নিয়ে মৃত্যু হয় ৪৯ জনের। তবে চলতি মাসে এসে তা কিছুটা বেড়েছে। শীতের প্রকোপের সাথে সাথে বেড়েছে রোগীর সংখ্যাও।

এছাড়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আওতাধীন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভর্তিরতদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। আর চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে মৃত্যু থাকলেও চলতি মাসে এখন পর্যন্ত শ্বাসকষ্টজনিত শিশুর মৃত্যুর তথ্য নেই বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, শিশুদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ায় চমেক হাসপাতাল ও মা ও শিশু হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। বিশেষায়িত এ দুই হাসপাতালে শিশু বিভাগে শয্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। একই শয্যায় দুইজন শিশুকে রেখে চিকিৎসা দিতেও দেখা গেছে দুই হাসপাতালে। তাই চিকিৎসকের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের মতে, বৃহত্তর চট্টগ্রামে শিশুদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল বা ইউনিট তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ নজর দেয়ার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, এ সময়ে এজমা, ব্রঙ্কাইটিস, ব্রংকোনিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজণিত রোগ বেড়ে যায়। শীত থেকে শিশুদের বাঁচাতে পরিবারের সচেতনতা থাকতে হবে। এরমধ্যে ধুলা-বালি ও ধোঁয়া থেকে শিশুদের দূরে রাখার পাশাপাশি যথাসম্ভব উষ্ণতায় রাখতে হবে। একই সাথে বিশুদ্ধ খাবারের পাশাপাশি তরলজাতীয় খাবার গরম করে খাওয়াতে হবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট