চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশনের পথচলার এক দশক

অনলাইন ডেস্ক

৪ এপ্রিল, ২০২৩ | ৩:৫৭ অপরাহ্ণ

সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশন, একটি বহুমুখী সেবা প্রতিষ্ঠান। যা দেশের ৫টি বিভাগের ১৫টি জেলায় বিস্তৃত এবং ৫টি পাবলিক ও ৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজেও এর কার্যক্রম চলমান।

ইসলামের শান্তিপূর্ণ সমাজ সংস্কার , ধর্মীয় সংযম, নীতিনৈতিকতা, প্রেমের চাষাবাদ, শিক্ষা ও গবেষণা, পরস্পর সংলাপে বিশ্বাসী, সহমর্মিতাকে উৎসাহ দেয় এবং ইসলামের মধ্যপন্থা অবলম্বন করে সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশন। গৌরবোজ্জ্বল ভাষা-আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের প্রতি ফাউন্ডেশন শ্রদ্ধাশীল। ভিন্নমত সহিষ্ণুতার নীতি ও বৈচিত্র্যে সমতায় বিশ্বাস রাখে । ফাউন্ডেশন সকল ধর্মানুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কোন বিতর্কিত বিষয় বা মতবাদ প্রচার বা প্রকাশে কাজ করে না।

সত্যের অনুসন্ধান, সৃষ্টির সেবা এবং জ্যোতির্ময় মহান সুফিসাধকদের দেখানো পথেই সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের ১৬ এপ্রিল। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ফাউন্ডেশন মানুষকে নানামুখী সেবাদানের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধি ও তরুণ প্রজন্মের চিন্তাশক্তিকে ইতিবাচক ধারায় বিকশিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছে।

বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতি, সঙ্গীত ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে সুফিসাধকদের অবদান অপরিসীম। বিশ্ব সাহিত্যের দিকপাল ও সুফিসাধক, শামস তাবরিজি, জালালুদ্দিন রুমি, খাজা মুঈনউদ্দীন হাসান চিশতি, শেখ সাদী, হাফিজ, ওমর খৈয়াম সহ অসংখ্য সুফিসাধকগণ সুফিতত্ত্বকে প্রকাশিত করেছেন অসাধারণ শব্দের যাদুতে। স্থান-কালের সীমানা অতিক্রম করে তাঁরা সৃষ্টি করেছেন সাহিত্যের কালজয়ী ধারা। সসীম শব্দের মধ্যে তাঁরা সৃষ্টি করেছেন অসীম ছন্দ । আত্মার শুদ্ধতার সার্বক্ষণিক প্রয়াসের মাধ্যমে প্রকৃতির মর্মবাণী আহরণ করে, মহাপ্রাণ সুফিরা পৃথিবীতে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বাণী ছড়িয়ে দেন। স্রষ্টার ভালোবাসা ও সৃষ্টির সেবাই তাঁদের আদর্শ।

এই ধারাবাহিকতায় ফাউন্ডেশন আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা ও গবেষণামূলক সাময়িকী ‘সুফিনামা’ প্রকাশ এবং সুফিভাবাদর্শকে নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করার লক্ষ্যে ‘সুফি স্পিরিচুয়াল একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করে।

ফাউন্ডেশনের স্থায়ী প্রতিষ্ঠান করার জন্যে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নে ২৪০ কাটা নিজস্ব জমিতে আলোকবর্তিকা কমপ্লেক্স স্থাপনে কাজ শুরু করে ২০২১ সালে। যেখানে ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে কানিজ ফাতেমা হিফজুল কোরআন মডেল মাদ্রাসা, তাজরিয়ান শিশু সদন (এতিমখানা), বিররুল ওয়ালিদাইন বৃদ্ধাশ্রম সহ আন্তর্জাতিক মানের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ উচ্চতর সুফি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যন্ত্রণাদগ্ধ মানুষের মনে প্রশান্তি আর প্রেমের বার্তা পৌঁছানো, আত্মবিশ্বাস জাগানো এটাই সবচেয়ে বড় সেবা। ফাউন্ডেশন এই বিশ্বাসের শক্তিতে উজ্জীবিত হয়েই আত্মিক, আধ্যাত্মিক ও মানবতার কল্যাণে দীর্ঘ এক দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছে ।
একটি জাতির সবচেয়ে বড় আশার প্রতীক হলো তরুণ প্রজন্ম । তারা হলো জাতির ভবিষ্যৎ ও ভিত্তি। তাদের মাধ্যমেই একটি জাতির বিকশিত হবার দ্বার উন্মোচিত হয়। তরুণ-তরুণীরা যখন সৎকর্মশীল, শক্তিশালী, দক্ষ, দৃঢ় প্রত্যয়ী এবং নৈতিক মূল্যবোধের অধিকারী হয় তখনই একটি জাতি দ্রুতগতিতে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। আর তরুণেরা যখন দুর্বল হয়, অনৈতিক, অলস বা অদক্ষ হয় তখন পুরো জাতির উন্নতির গ্রাফ থাকে নিম্নমুখী। ধীরে ধীরে ডুবে যেতে থাকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। তাই “শুভ চেতনায় সমৃদ্ধ হোক তারুণ্য” এই স্লোগানকে সামনে রেখে, নৈতিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন জেলায়,স্কুল,কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং বিষয়ভিত্তিক সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করে যাচ্ছে। এবং প্রতিষ্ঠা করেছে আলোকবর্তিকা পাঠাগার, সংগ্রহ করেছে ৭ হাজারের অধিক বই।
যেকোন তত্ত্বেরই একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ থাকা প্রয়োজন। তত্ত্ব নানা কারণে বিকৃত হয়। ধর্মের তত্ত্ব বিকৃত হয় আরো বেশি। কারণ এর সংশ্লিষ্টতা মানুষের আবেগ ও বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত। সুফিসাধনা ইসলামের মৌলসত্তা ও অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যের ধারক ও বাহক। কিন্তু এই ধারাটিও বিভিন্ন কারণে বিকৃত ইসলামের মূল কাঠামো থেকে দূরে চলে যাচ্ছে—যা কোনমতেই কাম্য নয়। সত্য নতুন-পুরাতন হয় না। কিন্তু সত্যকে যে ধারণ করে সে নতুন-পুরাতন হয়। কালের আবর্তনে মানুষ সত্য ছেড়ে আঁকড়ে ধরে প্রথা ও রীতি-নীতি। ফলে সত্যের পথ গতিদীর্ণ হয়। তাই কালে কালে নিতে হয় কালের সিদ্ধান্ত। নতুন করে বলতে হয় পুরাতন কথা । প্রকৃত সত্যকে ধারণ না করার কারণেই মুসলমানেরা জ্ঞানহীন আর এই জ্ঞানহীনতার অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে দীনতা, বিচ্ছিন্নতা, নৈরাজ্য, বিভ্রান্তি আর শেষে অবহেলার স্বীকার। গত একশত-দেড়শো বছরে হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া গোটা মুসলিম বিশ্বে মুসলমান বিজ্ঞানী, দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী নেই, কোন বড় আবিষ্কার নেই। সুফি ঐতিহ্য ,সংস্কৃতি ,চেতনা এবং সুফিভাবাদর্শের সরল সৌন্দর্যকে তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌছে দেয়ার উদ্যোগই সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশন ।
শাশ্বত সত্য, সুন্দর, কল্যাণ ও মানবাধিকার হুমকির মুখে পড়েছে সারা দুনিয়ায়। ফলে জীবন ও জগৎ ক্রমাগত অসুস্থ ও অসুন্দর হয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় ধর্ম, সাহিত্য- সংস্কৃতি চর্চাও বাজার অর্থনীতির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবুও জায়মান অন্ধকার থেকে মুক্তির পথ মানুষকেই খুঁজতে হবে, সুফি সাধকদের যাত্রা পথ হচ্ছে প্রেমের, যে পথের বাঁকে বাঁকে রয়েছে, রক্তিম অন্ধকারের আত্মায় স্মারক চিহ্নের মতো, কতো উজ্জ্বল আলোর ইতিহাস । ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও মানবতার ধর্ম। ইসলামের শান্তির বাণী মানুষের কাছে পৌছে দিতেই প্রতিষ্টা করেছে সুফি সেন্টার।
যান্ত্রিক সুবিধা দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে বটে, কিন্তু এসব জটিলতা থেকে অব্যাহতি মেলে না। বাহ্যিক আরাম-আয়েশে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচতে পারে না। প্রয়োজন জীবনের মৌলিকত্বে প্রবেশাধিকার! সুফি সাধকদের জীবনের ঐতিহাসিক মর্মকথাগুলোকে ধারণ করে, ব্যক্তি ও সমাজ বিনির্মাণে- সুফি মেডিটেশন কোর্স চালু করেছে।
সুফি ভাবাদর্শ উত্তেজনা সৃষ্টি নয়, অনুধাবনে বিশ্বাসী; কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী, ধ্বংসযজ্ঞে নয়, নির্মাণে বিশ্বাসী, কল্পনায় নয়, বাস্তবতায় বিশ্বাসী; ভোগবাদ ও প্রবৃত্তির অনুসরণে নয়, বরং ত্যাগ কুরবানি ও পরোপকারে বিশ্বাসী। সুফিভাবাদর্শের এই প্লাটফর্মে আগত সকল জীবনকে একান্তে একটা মঞ্চ দিতে চায় যেখানে কঠিন, তরল ও নির্মল জীবনানুভূতির কথা মানুষ ভাগাভাগি করে নিতে পারবে শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, প্রেমানন্দ, সম্মান আর ভালোবাসায়।
★ ফাউন্ডেশন পরিচালিত প্রতিষ্ঠান সমূহ ★
*সুফি সেন্টার
* সুফি স্পিরিচুয়াল একাডেমি
* আলোকবর্তিকা (সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সেবা প্রকল্প)
* তাজরিয়ান- শিশু সদন (এতিমখানা)
* কানিজ ফাতেমা হিফজুল কুরআন মডেল মাদ্রাসা
* বিররুল ওয়ালিদাইন বৃদ্ধাশ্রম
★ ফাউন্ডেশনের চলমান কার্যক্রমসমূহ ★
* সুফিনামা সাময়িকী
* কুরআন-সুন্নাহ, সুফিতত্ত্ব এবং সমাজ-অর্থনীতি, প্রতিবেশ-ইতিহাস-সংস্কৃতি, ধর্ম, ইত্যাদি বিষয়ে নীতিনির্ধারণী গবেষণা ।
* সুফি মেডিটেশন
* বিনামূল্যে কুরআনের অনুবাদ বিতরণ।
* আলেম, খতিব, শিক্ষাবিদ, কবি, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময়।
* দেশ ও দেশের বাইরে ইসলামী গবেষণা ও সুফি ভাবধারায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের সাথে মতবিনিময় এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তৈরি করা।
* ত্রাণসামগ্রী বিতরণ।
* ‘অসহ্য থেকে অদম্য’ শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধিদের জন্য সেবা প্রজেক্ট।
* ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, ওষুধ বিতরণ এবং বিনামূল্যে চক্ষু শিবির।
* অসহায় চক্ষু রোগীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চক্ষু অপারেশন ও সুন্নাতে খতনা ক্যাম্প।
* সুবিধাবঞ্চিত ও এতিম ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ।
* ধর্মীয় ও জাতীয় দিবসসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন।
* নিজস্ব পাঠাগারে নিয়মিত বইপড়া।
* তরুণপ্রজন্মের চিন্তাকে ইতিবাচক ধারায় বিকশিত করার লক্ষে নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক জনসচেতনতা মূলক সভা-সেমিনার ও কর্মশালা।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট