চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি শুরু

২ জুন, ২০২০ | ৪:৫২ অপরাহ্ণ

হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালটি দুই দফা উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। এরপর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে সেটি তুলে দেওয়া হয় সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে। গত ২৮ মে থেকে কোভিড রোগী ভর্তির জন্য পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় একজন চিকিৎসককে। কিন্তু তিনি মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান।

অবশেষে আজ মঙ্গলবার (২ জুন) থেকে নতুন জনবল নিয়ে সংকটাপন্ন রোগী ভর্তি শুরু হলো হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল। এটি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তর করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘ডা. মনোয়ার হোসেনকে এটি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে কেউ খুঁজে পাচ্ছেন না। নতুন জনবল নিয়োগ দিয়ে আজ (মঙ্গলবার) থেকে রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। প্রথমদিন ৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।’

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় ইউনিট ঘোষণা করার পর সেখানে সহকারি পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ডা. মনোয়ার হোসেনকে। দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই গত ২৮ মে একটি ছুটির দরখাস্ত দিয়ে তিনি মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে আত্মগোপন করেন। অথচ ওইদিনই হাসপাতালটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কোভিড-১৯ রোগী ভর্তির কথা ছিল। ২০টি আইসিইউ ভেন্টিলেটরসহ এই হাসপাতালটিতে ১০০ শয্যা কোভিড রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের প্রচেষ্টায় বেসরকারি হাসপাতাল মালিকরা প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর খুলশী জাকির হোসেন রোডের পরিত্যক্ত বেসরকারি হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি সংস্কার করেন। লক্ষ্য ছিল বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের ভর্তি না করিয়ে তার পরিবর্তে সেসব রোগীকে হলিক্রিসেন্টে ভর্তি করা। পরবর্তীতে এটির পরিচালনা কার্যক্রম নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক, সিভিল সার্জন, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও চমেক হাসপাতালের পরিচালকদের একাধিক বৈঠকে এটি জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় ইউনিট হিসেবে চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে হিসেবে জনবলও ঠিক করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় ২৮ মে থেকে কোভিড রোগিদের ভর্তি করানোর।

চট্টগ্রাম বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলী খান বলেন, ‘মেয়রের অনুরোধে আমরা সবাই মিলে অনেক টাকা ব্যয় করে হলি ক্রিসেন্টকে তৈরি করা হলো। অথচ সেখানে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো তিনি মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপন করেছেন। আর এখন সব বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগী ভর্তি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, হঠাৎ করে কোভিড রোগী ভর্তি করতে গিয়ে অনেক বেসরকারি হাসপাতালের প্রশিক্ষণ না থাকা চিকিৎসকরা বেকায়দায় পড়ছেন। অনেকে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছেন।’

এদিকে গত সোমবার থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ের বক্ষব্যাধী হাসপাতালেও কোভিড রোগী ভর্তি করা হয়েছে। এটি কোভিড-১৯ রোগীদের শতভাগ আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হবে। জানা গেছে, সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার মিলে সেখানে ৩৫ জন রোগী ভর্তি করা হয়েছে। এখানে প্রাথমিকভাবে ৫০জন রোগী ভর্তি করা হবে। তবে এটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করার সুযোগ রয়েছে।

চট্টগ্রামে গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা। শনাক্ত বেড়ে গেলেও তাদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, চিকিৎসকরা ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও অনেক রোগীকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। আবার সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য কোনোভাবে আইসিইউ ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।

চিকিৎসকরা বলেছেন, হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল চালু হওয়ায় ২০টি ভেন্টিলেটর দিয়ে এ মুহূর্তে ৪০ জন সংকটাপন্ন রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া যাবে। চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ১৮টি ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা আছে জেনারেল হাসপাতালে।

পূর্বকোণ/পিআর-নাজিম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট