চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কক্সবাজারে ভয়ঙ্কর মাদক সম্রাজ্যের দুই বন্ধু পুলিশের জালে

কক্সবাজার সংবাদদাতা

১৬ এপ্রিল, ২০২০ | ৫:১১ অপরাহ্ণ

এলাকাবাসী, পঞ্চায়েত কমিটি, ওয়ার্ড মেম্বার, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর-সবাই জানে, কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া এলাকার মাদকের মূল ব্যবসায়ী কারা। থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও আছে। প্রশাসনের কাছে আছে তাদের বাসাবাড়ির ঠিকানাও। কিন্তু তারা ছিল দীর্ঘদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, মাদকের মামলা থাকায় বুধবার (১৫ এপ্রিল) গভীররাতে জাফর ও জামালকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে অবৈধ আলামত কিছুই পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা বলছে, সদরের বৃহত্তর খরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন জাফর সাদেক ওরফে রানা ও তার বন্ধু জামাল ওরফে ইয়াবা মৌলই। তারা টেকনাফের বিভিন্ন জায়গা থেকে ইয়াবা ও অস্ত্র এলাকায় আনেন। বিক্রি করেন তাদের সহায়তাকারীরা। এর মধ্যে রানা এলাকায় ‘ইয়াবা সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত। ইয়াবা ও মদ ব্যবসাও তাদের হাতে। আর অস্ত্র ও ফেন্সিডিল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন জামাল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, তথ্য থাকলেও কৌশল ও জনবলের দিক দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পেরে উঠছেন না তারা। আর পুলিশ বলছে, মাদকের এই হোতাদের ধরতে তাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে। কিন্তু সঠিক তথ্য-উপাত্ত না থাকার কারণে তাদের ধরতে অনেকটা কঠিন হয়ে পেড়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বৃহত্তর খরুলিয়া এলাকার মাদক ব্যবসার হোতা হিসেবে রানা ও জামান জামালের নাম উল্লেখ করেন। তাদের তালিকায় আরও যাদের নাম বলেন, তাদের মধ্যে আছেন রিফাত ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জুয়েল। এরা জামাল ও রানার সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করেন।

এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, রানার বাসা খরুলিয়া সিকদার পাড়ায়। দীর্ঘদিন থেকে তিনি এই বাড়িতেই গোপনে ইয়াবার ব্যবসা করতেন। পরে ব্যবসার তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে পরিবারসহ বাড়ি ছেড়ে চলে যান তিনি। এখন তিনি এলাকায় এসে সহকারীদের হাতে ইয়াবা তুলে দিয়ে চলে যান। সর্বশেষ গত কয়েকমাস থেকে তাঁকে এলাকায় দেখা যায় বলে জানান সিকদার পাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা।

আরেক মাদক ব্যবসায়ী জামাল থাকেন কলাতলীর জমজম হ্যাচারী সংলগ্ন বাসায়। নিজ বাড়িতেই ২০১২ সাল থেকে মাদকের ব্যবসা করেন তিনি। এই এলাকার অস্ত্র ও ফেনসিডিলের ব্যবসা তার নিয়ন্ত্রণে। স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এলাকার মাদকের প্রধান ব্যবসায়ী বলে তাকে উল্লেখ করেন তারা।

গত মঙ্গলবার ও বুধবার সিকদারপাড়া এলাকায় গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মাদক ব্যবসায়ী আর স্থানীয় ও বহিরাগত ক্রেতাদের উৎপাতে অতিষ্ঠ তাঁরা। তাঁদের প্রশ্ন, ব্যবসায়ীরা চিহ্নিত হওয়ার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না। প্রশাসন সবকিছু জানলেও এলাকায় কীভাবে মাদকের বিস্তার ঘটছে?

সিকদার পাড়া মসজিদের সামনের এক ব্যক্তি বলেন, কারা ব্যবসা করে সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কিছু বলতে নাই। বললেই আমরা তাঁদের টার্গেট হয়ে যাবো। তখন দেখা যাবে, আমাদের উপর উৎপাত শুরু হয়ে যাবে।

পূর্ব খরুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের গলির এক দোকানি বলেন, যারা মাদক সেবন করে, তাদের অত্যাচারই বেশি। টাকার জন্য এরা এলাকায় ছিনতাই, বাসাবাড়িতে এমনকি মসজিদের দান বাক্সের টাকা পর্যন্তও চুরি করে।

ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, পুরো এলাকাটাই খারাপ হয়ে গেছে। মাদকের বিস্তার অনেক বেশি। সিকাদর পাড়া পঞ্চায়েত কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাদকসেবীদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পঞ্চায়েতের সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার সদর থানার ওসি (অপারেশন) মাসুম খাঁন বলেন, জাফর সাদেক ওরফে রানা ও তার বন্ধু জামালকে আটক করা হয়েছে বুধবার (১৫ এপ্রিল) গভীররাতে। তাদের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা রয়েছে।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট