চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

টানা বন্ধে মাদকাসক্তদের নিয়ে সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কা

স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর সুযোগও এটি

ইফতেখারুল ইসলাম

৪ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৩৬ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসের কারণে চলছে টানা লকডাউন। এই ভাইরাসের বিস্তার সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখতে বাসায় খাবার পৌঁছে দেয়াসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের অভিমত, এই সময়ে নিম্ন আয়ের পরিবারের মাদকাসক্তদের সামাজিকভাবে কঠোর পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। নতুবা বেড়ে যাবে পারিবারিক নির্যাতন, চুরি ছিনতাইসহ সামাজিক অস্থিরতা। তাতে লঙ্ঘন হবে সামাজিক দূরত্ব। ঝুঁকিতে পড়বে সবাই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সমাজবিজ্ঞানী ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে সামাজিক দূরত্ব এবং কোয়ারেন্টিন অবশ্যই পালন করতে হবে। কোনভাবেই ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। সংক্রমণ বিস্তারবোধের একমাত্র মাধ্যম ঘরে থাকা। তাই সচেতনতা, সতর্কতা এবং সামাজিক দূরত্ব অপরিহার্য। কিন্তু যারা দিনমজুর, দলিত সম্প্রদায়সহ যারা দিনে এনে দিনে খায় তাদেরকে নিয়ে সরকারকে সুপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। লকডাউন অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করেছে। পরিবারকে সময় দিচ্ছে সবাই। কিন্তু একটি অংশ যাদের ঘরে মাদকাসক্ত আছে তারা বিপাকে পড়বেন। কারণ ঘর থেকে মাদকের টাকা পাবে না। মাদক বিক্রেতাও বেশিদিন বাকিতে মাদক বিক্রি করবে না। মাদক না পেলে মাদকাসক্তরা অস্থির হয়ে উঠবে। এমনকি পরিবারের সদস্যদের হত্যা করতেও দ্বিধা করবে না। নেশার টাকার জন্য অতীতেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। টাকা না পেলে তারা কিছুই মানবে না। ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে। অসামাজিক কাজ যেমন চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি করার চেষ্টা করবে। তাদের কারণে এক ধরনের সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে স্থানীয়ভাবে দলমত নির্বিশেষে কমিটি গঠন করে এলাকাকে মনিটরিং করতে হবে। যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় এবং কোয়ারেন্টিন যাতে নিশ্চিত হয়। কারণ নেশাখোরদের মাধ্যমে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তিনি বলেন, নিম্ন আয়ের লোকদের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সমস্যা বেশি হওয়ার আশংকা রয়েছে। সুইপার কলোনি, ঝাউতলা কলোনিসহ যেসব এলাকায় বেশি ঘনবসতি সেখানে বেশি নজর দিতে হবে। আমাদের সরকার, সুশীল সমাজ এবং সামাজিক শক্তিগুলো যেন সেদিকে নজর দেয়। এছাড়া পঙ্গুদের সাহায্যের বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পূর্বকোণকে বলেন, এ পরিস্থিতিতে সবাইকে এক থাকতে হচ্ছে। পারিবারিক কলহ আধুনিকতা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সাথে এসেছে। যৌথ পরিবার এখন নেই বললেই চলে। অতীতে পারিবারিক কলহ বয়োজ্যেষ্ঠরা মিটিয়ে দিতেন। এখন সেটি নেই। তবে আধুনিকতা মানে খারাপও না। এর ইতিবাচক অনেক দিক আছে। স্বনির্ভর হচ্ছে মানুষ। তবে চিন্তা-চেতনার মাঝে পরিবর্তন এসেছে। নারী-পুরুষের বৈষম্যও কমেছে। নারীর প্রতি সম্মান বেড়েছে। এখন গৃহকর্ত্রী বলে না। বলে হোম মেকার। কিন্তু লকডাউনে যে সমস্যা হচ্ছে তাতে মানুষের আয় কমে যাচ্ছে। কলহের জায়গাটা মনস্তত্ত্ব। তিনি বলেন, কর্মব্যস্ত থাকার কারণে অনেকেই পরিবার নিয়ে একসাথে বসে অনেকদিন খেতে পারেনি। একসাথে হতে পারেনি। এখন লকডাউনের কারণে পারিবারিক সংহতি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু মাদকাসক্ত ব্যক্তির অভ্যাস দুই সপ্তাহের জন্য পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এই ধরনের সমস্যা ঠান্ডা মাথায়, ধৈর্য্য ধরে মোকাবেলা করতে হবে। তাদেরকে মাদক থেকে সরানোর এটি একটি সুযোগও। তবে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তা করতে হবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্টো অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান পূর্বকোণকে বলেন, মাদকাসক্তদের কোন জরিপ নেই। দুই বছর আগে একটি জরিপের উদ্যোগ নেয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। যা পরবর্তীতে হয়নি। তবে সারাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা একেকজন একেক রকম বলেন। কেউ বলেন ৫০ লাখ, কেউ বলেন ৭০ লাখ। তবে এটি ধারণাপ্রসূত তথ্য। তবে চট্টগ্রামে কেউ অথবা কোন এলাকায় মাদকাসক্ত নিয়ে সমস্যা তৈরি হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যোগাযোগের অনুরোধ জানান তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট