চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মামা চান আ. লীগের টিকেট, ভাগিনা স্বতন্ত্র

ঐতিহ্যবাহী রানীর দিঘি এখন আবর্জনার ভাগাড় অনেক এলাকায় প্রকট জলাবদ্ধতার সমস্যা

আল-আমিন সিকদার

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৩:৫৩ পূর্বাহ্ণ

আয়তন : ১ বর্গ মাইল
জনসংখ্যা : ৬০ হাজার
ভোটার : ৩০ হাজার

আঞ্চলিক গানের রাণী খ্যাত শেফালী ঘোষ আর বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতের কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। সঙ্গীত জগতের এই দুই প্রয়াত নক্ষত্র ছিলেন নগরীর এনায়েত বাজার ওয়ার্ডে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ড এনায়েতবাজার। শুধু এই দুই সঙ্গীত শিল্পীর বাড়ি হিসেবেই এই ওয়ার্ড পরিচিত নয়। এই ওয়ার্ডে আছে শতবর্ষী ‘রানীর দিঘি’। জনশ্রুতি রয়েছে, ১৯৩৯ সালে রাজা রায় বাহাদুর রাজকমল ঘোষ এই দিঘি খনন করেন। যেখানে অবসর সময় কাটাতে আসতেন তার স্ত্রী। সেই থেকে এই দিঘির নামকরণ হয় রানীর দিঘি। শুধু এই দিঘিই নয় এই ওয়ার্ডে আছে আরও নানান ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ও স্থান। যেমন গোয়ালপাড়া পুকুর ও এনায়েতবাজার মসজিদ।

২২ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে এই ঐতিহাসিক ইতিহাস যেমন আমরা তুলে এনেছি তেমনি তুলে এনেছি এখনকার সমস্যাগুলোও। পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে গেছে এই ওয়ার্ডের জনপদ। ১ বর্গমাইলের এই ওয়ার্ডে থাকা ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো এখন পড়ে আছে অযতœ আর অবহেলায়। একসময়ে যে দিঘির পাড়ে এসে রানী তার অবসর সময় কাটাতো সেই দিঘি এখন ময়লা আবর্জনার ভাগাড়। শুধু এই দিঘিই নয়, কাউন্সিলর অফিসের পাশেই অবহেলা আর অযতেœর কারণে বিলুপ্তের পথে বহু পুরনো গোয়ালপাড়া পুকুরটিও। অন্যদিকে ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে অনেকটা ওপরে থাকা এই ওয়ার্ডটিও বর্ষায় ভাসে পানিতে। রয়েছে খাবার পানির পাশাপাশি খেলার মাঠেরও সংকটও।

এনায়েতবাজার এলাকার বাসিন্দা ৬৫ বছরের বৃদ্ধা গীতা ঘোষ। ৪২ বছর আগে এই ওয়ার্ডে গৃহবধূ হয়ে আসা এই বৃদ্ধা পূর্বকোণকে বলেন, ‘কালীবাড়ি এলাকায় জলাবদ্ধতার সমস্যা খুব বেশি। এছাড়া বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট আমাদের এলাকায় খুব বেশি। পানিতে আয়রন বেশি মাত্রায় থাকার কারণে প্রায় সময়ই আমাদের খাবার পানি কিনে আনতে হয়।’
একই এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মী ঘোষ বলেন, ‘এলাকাটা সবসময় অপরিচ্ছন্ন থাকে। প্রায় স্থানে ডাস্টবিন থাকায় পরিবেশ খুবই খারাপ। এছাড়া মাদকের সমস্যাও আমাদের এলাকায় রয়েছে। আর জলাবদ্ধতার কারণে ড্রেন উপচে পানি রাস্তায় উঠে আসে। ভালো খাবার পানি না থাকায় পানি কিনে খেতে হয় আমাদের।’
হৃত্বিক নামে এক তরুণ পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমাদের এলাকার বহু সমস্যার মধ্যে একটি হলো খেলার মাঠের অভাব। এছাড়া সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সমস্যাতো আছেই। মাদকের একটি প্রভাবও আমাদের এলাকায় আছে। আমি চাই নতুন যিনি কাউন্সিলর হবেন তিনি যাতে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করেন।’
সাজিদ নামে এক যুবক বলেন, ‘এনায়েত বাজারের গোয়াল পাড়া ও বয়লার কলোনি এলাকাসহ বেশ কিছু জায়গা এখনো অনুন্নত এবং এখানকার মানুষগুলো খুবই অবহেলিত। আর বিগত কয়েক বছর ধরে এলাকায় ১০-১৫ মিনিটের বৃষ্টিতে পানি উঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়া একটি খেলার মাঠেরও অভাব আমাদের আছে। ভবিষ্যত কাউন্সিলরের কাছে আমরা এই সব সমস্যার সমাধান ও বর্তমান অবস্থার উন্নয়ন চাই।’
এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. সলিমুল্লাহ বাচ্চুর কাছে জানতে চেয়েছি শতবর্ষী রানীর দিঘি আর গোয়াল পাড়া পুকুরের বেহাল দশার কারণ, জানতে চেয়েছি জলাবদ্ধতা ও খাবার পানির সংকট নিরসনে গত ৫ বছরে কী করেছেন তিনি।
এসব প্রশ্নের উত্তরে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আমার ওয়ার্ডের জন্য আমি ২৫ কোটি টাকার বরাদ্দ পেয়েছি এবং প্রায় ২৩ কোটির কাজ সমাপ্ত হয়েছে। চলমান রয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকার কাজ। এই বরাদ্দের টাকা দিয়ে আমি তুলাতলি ড্রেনেজের কাজ করেছি। এনায়েত বাজার জুবলী রোড, বাটালী রোডের সংস্কার ও ওয়াক ওয়ে নির্মাণের কাজও করা হয়েছে। এছাড়াও জুবলী রোড-নন্দনকানন লেনের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও করা হয়েছে। পাশাপাশি এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি।’

নির্বাচনী ইশতিহারে পুকুর সংস্কারের কথা বলেও কেন তা করতে পারেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংস্কার কাজ বর্তমানে চলমান আছে। রানীর দিঘি ও

গেয়ালপাড়ার হাজারি পুকুরে ঘাট নির্মাণ করে পাড়ের চারিদিকে ওয়াক-ওয়ে করার পরিকল্পনা আছে। যাতে এলাকার জনগণ পুকুরের চারিদিকে হাঁটতে পারে।’
বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে ৩টি বস্তি এলাকা আছে, যেখানের মানুষ আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তাদের খাওয়ার জন্য আমি নিজ খরচে ৪ টি গভীর নলকূপ স্থাপন করেছি। তবে ভবিষ্যতে নির্বাচিত হলে আমি এলাকাবাসীর এইসব সমস্যার সমাধান করার জন্য ও আমার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার আপ্রাণ চেষ্টা করবো।’
বর্তমান কাউন্সিলর মো. সলিমুল্লাহ বাচ্চু ছাড়াও এই ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়াই করতে চাচ্ছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য জামশেদুল আলম চৌধুরী।

স্বতন্ত্র হয়ে লড়বেন বলে জানিয়েছেন এই ওয়ার্ডের চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর আলহাজ এম. এ মালেক ও তরুণ প্রার্থী ‘ভয়েস অব চট্টগ্রাম’ নগর কমিটির সভাপতি মো. সাব্বির চৌধুরী। সাব্বির চৌধুরী এই ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী জামশেদুল আলম চৌধুরীর ভাগিনা।
সম্ভাব্য প্রার্থীরা কে, কী বললেন ?

বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ও সাবেক কাউন্সিলর আলহাজ এম. এ মালেক। ১৯৯৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা চার বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর তিনি। তবে দলের ব্যানারে নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়তে চান তিনি। নির্বাচনে জয় লাভ করলে এলাকার প্রধান সমস্যা- জলাবদ্ধতা নিরসন, মাদক নির্মূল ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবপূরণে কাজ করার পাশাপাশি লাইলা করিম প্রথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ এবং বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে কাজ করতে চান তিনি। এছাড়া ওয়ার্ডের শিশুদের ক্রীড়ার প্রসারে খেলার মাঠ নির্মাণের আশার কথাও জানিয়েছেন পূর্বকোণকে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য জামশেদুল আলম চৌধুরী নির্বাচনে জয়লাভ করলে এনায়েতবাজারকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি এনায়েত বাজারের ঐতিহ্যবাহী রানীর দিঘি’র সংষ্কার করে শিশু-কিশোরদের চিত্ত-বিনোদনের জন্য মিনি পার্ক করার আশাও ব্যক্ত করেন। এছাড়াও এই ওয়ার্ডে একটি খেলার মাঠ করার পাশাপাশি পুরো ওয়ার্ডকে ওয়াই-ফাই জোনের আওতায় আনবেন বলেও জানান তিনি।

‘ভয়েস অব চট্টগ্রাম’ নগর কমিটির সভাপতি মো. সাব্বির চৌধুরী এবারের সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন বলে জানিয়েছেন। নির্বাচিত হলে এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন, মাদক নির্মূলসহ বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ কথা জানিয়েছেন তিনি। যার মধ্যে-পরিকল্পিত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা করা, খেলার মাঠ নির্মাণ এবং এলাকার অপরিকল্পিত ডাস্টবিন উচ্ছেদের বিষয়ে জোর দিয়েছেন তিনি। এছাড়া তিনি চান এলাকার সার্বিক উন্নয়নে এলাকাবাসীদের নিয়ে কাজ করতে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট