চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

১৭ চীনা নাবিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ

করোনাভাইরাস আতংক সীতাকু-ে স্ক্র্যাপ জাহাজে আসা বিদেশি নাগরিক

সৌমিত্র চক্রবর্তী হ সীতাকু-

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৭:২৩ পূর্বাহ্ণ

সীতাকু-ে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত স্ক্র্যাপ জাহাজে আসা বিদেশি নাগরিকদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন শিপইয়ার্ড মালিকরা। বিশেষত জাহাজে আসা চীনা নাগরিকদের নিয়ে উভয় সংকটে পড়তে হচ্ছে মালিক ও স্থানীয় প্রশাসনকে। আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই কোনরূপ স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই তারা সরাসরি সীতাকু- উপকূলে চলে আসছে। যা আতংকের কারণ হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকু-ে দেশের একমাত্র জাহাজ ভাঙা শিল্পে প্রতিদিন স্ক্র্যাপ জাহাজ নিয়ে আসেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নাবিকরা। যাদের একটি বড় অংশ চীনের নাগরিক। সাম্প্রতিক সময়ে চীনে ছড়িয়ে পড়েছে দুরারোগ্য করোনা ভাইরাস। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে শত শত মানুষের মৃত্যু হলে অসংখ্য দেশ চীনের সাথে তাদের জলপথ, স্থলপথ ও আকাশ পথে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন করেছে। ভাইরাসটি নিয়ে নানান সতর্কতা জারি করেছে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা হু। বাংলাদেশেও এই ভাইরাস নিয়ে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে। চীন থেকে আসা সকল যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল সীতাকু- উপজেলার ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি। সম্প্রতি চীন থেকে জ¦রে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফেরা দুই শিক্ষার্থী এই হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরীক্ষায় ভাইরাস মুক্ত প্রমাণিত হলে গত শনিবার তাদেরকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে গত শনিবার আবার করোনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয় সীতাকু-ের সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত লালবেগ শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে। ঐ ইয়ার্ডে আমদানি করা হয় জাপানের পতাকাবাহী ৯ হাজার টন ওজনের ইউনি হারভেস্ট কার্গো নামক একটি স্ক্র্যাপ জাহাজ। জাহাজটি গত ২০ জানুয়ারি চীন থেকে রওনা হয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি আসে। ১৭ জন চীনা নাবিক ছিলেন জাহাজটিতে। এদিকে করোনা ভাইরাসের আতংকে এই চীনা নাগরিকদের জাহাজ থেকে নিচে নামানোর ঝুঁকি নিতে চাননা শিপইয়ার্ড মালিক কিংবা আমদানিকারক এজেন্ট কেউই। ফলে গত তিন দিন ধরে ঐ নাবিকরা জাহাজেই আটকে আছেন।
লালবেগ শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের মালিক লিয়াকত আলী বলেন, যেহেতু ওই ১৭ নাবিক চীনের বাসিন্দা সেহেতু আমি তাদেরকে ইয়ার্ডে আনতে রাজি হইনি। যদি তাদের মধ্যে কোন ভাইরাস থাকে তাহলে সমস্যা হতে পারে। আমি আমদানিকারক এজেন্টকে বলে দিয়েছি তাদেরকে সমুদ্র পথে নিয়ে বিমানবন্দরে করে পুনরায় চীনে ফেরত পাঠানো হোক। এদিকে এই চীনা নাগরিকদের কথা জানাজানি হবার পর থেকে সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
সীতাকু- উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন বলেন, আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলেছি। তিনিসহ আমরা এই চীনা নাগরিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য তাদেরকে বন্দর হাসপাতালে পাঠাতে বলেছি। স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।
সীতাকু-ে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় স্থাপিত বিশেষায়িত হাসপাতাল বিআইটিআইডি এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, ২০ জানুয়ারি ঐ চীনা নাবিকরা যদি চীন থেকে রওনা দেন তাহলে ইতিমধ্যেই দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মূল সমস্যা দেখা দেয় প্রথম ১৪ দিনে। এসময়ে যদি জ¦র, সর্দি, শ^াস কষ্টসহ কোন লক্ষণ যদি তাদের না থাকে তাহলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করব যে তারা আক্রান্ত নয়। কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিত হতে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরী বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, আর যদি জাহাজে কোন আক্রান্ত রোগি এসে থাকে তবে পরবর্তী ঐ জাহাজে কোন সুস্থ লোক কাজ করতে উঠলে তিনিও আক্রান্ত হতে পারেন। তাই সবার সাবধানে থাকা উচিত। সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, আসলে এ চীনা নাগরিকরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই আসার কথা। কিন্তু কি করে তারা এসেছে আমি কিছু বুঝতে পারছি না। তাই তাদেরকে যেন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় আমি সে নির্দেশ দিয়েছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট