আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) সংসদীয় আসনে বিভিন্ন দলের বিপুল সংখ্যক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় নানাভাবে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা দ্বিগুণ।
ফটিকছড়ি আসনটি গত ১১টি সংসদ নির্বাচনে বিএনপি দুইবার এবং জাসদ একবার জয়ী হলেও ৭০ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে বাকি সব কয়টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীই জয়লাভ করেছে। যে তিনটিতে হেরেছে তার মধ্যে ১৯৭৯ সালে জামাল উদ্দিন আহমদের নির্বাচনের কথা বাদ দিলে বাকি দুটি নির্বাচনে দলীয় কোন্দলসহ নানা কারণে আ. লীগ প্রার্থী হেরেছে। এবার এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যাও অন্যান্যবারের তুলনায় বেশি। আওয়ামী লীগের বাইরে এ আসনে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী জামাল উদ্দিন আহমদ, ৮৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন জাসদ নেতা মজহারুল হক শাহ চৌধুরী এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী জয়লাভ করেন। বাকি সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বা জোট প্রার্থী জয়লাভ করেন।
গত ২০১৪ সালের নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে ১৪ দলীয় জোট প্রার্থী বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি নির্বাচিত হন। এবারও তিনি এ আসন থেকে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে বর্তমানে আওয়ামী লীগের বড়, মাঝারি, ছোট প্রায় সব নেতাকর্মীই চায় এখানে যাকেই দেওয়া হোক, অন্তত আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী দেওয়া হোক। তবে আবারো যদি জোটের প্রার্থী দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ থেকে বিদ্রোহী কেউ প্রার্থী হলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না বলে আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে ড্যাব নেতা ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী বলেন ‘আমরা এখন একদফা আন্দোলনে আছি, নির্বাচন নিয়ে তেমন একটা ভাবছি না, নির্বাচনের আগে এ সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি। তবে বিএনপি যদি দলগতভাবে নির্বাচনে যাবার সিদ্ধান্ত নেয় তখন অবশ্যই মনোনয়ন চাইবো’।
এ রকম মত প্রকাশ করেছেন বিএনপির প্রায় সকল সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিকাংশ প্রার্থী বলেন, বিএনপি নির্বাচনে গেলে এ আসনে প্রার্থী যাতে ফটিকছড়ির মানুষকেই দেওয়া হয়। কোন বহিরাগত প্রার্থী এখানে নেতাকর্মীরা মেনে নেবে না বলে তারা উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, এ আসনে রাউজানের সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের কেউ বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারে বলে এলাকায় নেতা কর্মীদের মাঝে চাউর হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ থেকে এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আ. লীগের সহ-সভাপতি এটিএম পেয়ারুল ইসলাম মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া উত্তর জেলা আ. লীগের সহ-সভাপতি ও ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক এমপি আলহাজ রফিকুল আনোয়ারের কন্যা বর্তমান মহিলা এমপি খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক উত্তর জেলা আ. লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম. তৌহিদুল আলম বাবু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য সাদাত আনোয়ার সাদী, আওয়ামী লীগ নেতা মো. শাহজাহান, সাবেক এমপি আলহাজ রফিকুল আনোয়ারের ছোট ভাই আলহাজ ফখরুল আনোয়ার, বর্তমান ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য ও চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক ড. মাহমুদ হাসান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আখতার উদ্দিন মাহমুদ পারভেজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ বাকের, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরীর সন্তান উত্তর জেলা আ. লীগ সদস্য হাসিবুন সুহাদ চৌধুরী, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দা রাজিয়া মুস্তাফা প্রমুখ।
অপরদিকে বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে গত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী সাবেক পিজিআর প্রধান, বর্তমান ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার চৌধুরী, বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার চার বারের সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগের অন্যতম সংগঠক ড্যাব নেতা ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, সাবেক বিচারপতি ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য এডভোকেট ফয়সল মাহমুদ ফয়জী, সাবেক উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও বর্তমান উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ ছালাহ্ধসঢ়;উদ্দিন, সাংবাদিক নেতা কাদের গণি চৌধুরী, উত্তর জেলা বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ সরোয়ার আলমগীর প্রমুখ দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। জাতীয় পার্টি থেকে গত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী জহুরুল ইসলাম রেজা পুনরায় মনোনয়ন চাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
এছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারী ফটিকছড়ি আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। অপরদিকে ১৪ দলীয় জোট থেকে আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী যদি পুনরায় মনোনয়ন পান তা হলে দুই ভাণ্ডারীর লড়াই বেশ উপভোগ্য হবে বলে সচেতন মহল মনে করছেন। এছাড়া উভয়ে সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী চাচা এবং সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারী সম্পর্কে ভাতিজা। এছাড়া উত্তর ফটিকছড়ির শিল্পপতি মেহেদী হাসান বিপ্লব আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে ইতোপূর্বে ঘোষণা দিয়েছেন।
পূর্বকোণ/পিআর