চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

আলীকদম থেকে তিন রুটে পাচার হচ্ছে বিপন্ন প্রাণী

নাজিম মুহাম্মদ

৩০ মে, ২০২৩ | ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ফের ধরা পড়েছে দুটি দুর্লভ রাজ ধনেশ। গত রবিবার মধ্যরাতে ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহন থেকে পাখি দুটি উদ্ধার করে চন্দনাইশ থানা পুলিশ। এ সময় মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। একজোড়া রাজ ধনেশ চার লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছে আটক মিজান। এর আাগে গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়কের লোহাগাড়ায় লজ্জাবতী বানর, বন মোরগ, মেছো বিড়াল, সজারু, পেঁচা, উল্লুকসহ বেশ কয়েকটি দুর্লভ প্রাণী উদ্ধার করে পুলিশ। বন্যপ্রাণী পাচার রোধে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট নামে বন বিভাগের একটি স্বতন্ত্র ইউনিট থাকলেও তাদের কার্যক্রম তেমন একটা নেই বললেই চলে। অথচ আলীকদম থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সড়ক পথে বনবিভাগের একাধিক চেকপোস্ট রয়েছে। এসব বিপন্ন প্রাণী পাচার হলেও অনেকটা নীরব বন বিভাগ। তবে কাঠ পাচারকারীদের সাথে যোগাযোগ ঠিকই রয়েছে এসব চেকপোস্টের কর্মকর্তাদের।

 

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অভিযান) সুদীপ্ত সরকার জানান, আলীকদম থেকে চকরিয়া-বাঁশখালী, থানচি-বান্দরবান-কাপ্তাই-রাঙ্গুনিয়া-রাউজান, চকরিয়া-চট্টগ্রাম এ তিন রুটে বিপন্ন প্রাণী পাচার হচ্ছে ঢাকায়। পরে সীমান্ত পার হয়ে এসব প্রাণী যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশে। কয়দিন আগে বাঁশখালী গুনাগরি বাজারে সিএনজি ট্যাক্সি থেকে চারটি রাজ ধনেশ উদ্ধার করার পর রুট পরিবর্তন করে এবার বাসে নিয়ে যাচ্ছিল ধনেশ।

 

গত ২৫ মে বাঁশখালীর গুনাগরি বাজারে একটি সিএনজি চালিত ট্যাক্সি থেকে চারটি রাজ ধনেশের বাচ্চা উদ্ধার করেছিল বাঁশখালি থানা পুলিশ। ওই সময় সিএনজি চালক সেলিম জানিয়েছিল এর আগেও  সে চার পাঁচ জোড়া ধনেশ একই পথে পাচার করেছে। সেলিমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ধনেশ নিতে ঢাকা থেকে আসা মিজানুর রহমান নামে একজন প্রাইভেটকার চালককে আটক করা হয়। দু’জনকেই ছয়মাসের কারাদ- দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

 

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিজান জানিয়েছিল তার মালিক জুয়েল মূলত ধনেশগুলো কিনেছেন। জুয়েলে ঢাকা থেকে গাড়ি নিয়ে তাকে পাখিগুলো নিতে পাঠিয়েছিলেন।

 

চন্দনাইশ থানার পরিদর্শক (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকাগামী বাস থেকে ধনেশ পাখিগুলো উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক মিজান জানিয়েছে, পাখিগুলো ঢাকার গাজিপুরে আরেকজনের কাছে হস্তান্তরের দায়িত্ব ছিল তার।

 

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক জানান, পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রজাতির ধনেশ রয়েছে। তবে বাঁশখালী এবং চন্দনাইশে যেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে তা রাজ ধনেশ। সাধারণত একটি রাজ ধনেশ চার কেজি পর্যন্ত হয়। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধনেশ। পাখিটি এখন বিপন্ন। চট্টগ্রাম বিভাগের পার্বত্য অঞ্চলে কিছু ধনেশ এখনো আছে। তবে গত ৩০ বছরে আমি রাজ ধনেশ দেখিনি।

 

ইনাম আল হক বলেন, সৌখিন কিছু মানুষ এক একটি রাজ ধনেশ এক থেকে দুই লাখ টাকায় কিনেন। কিন্তু কিনে লাভ নেই। বদ্ধ জায়গায় ছয় মাসের মধ্যে এসব পাখি মারা যাবে।

 

এর  আগে ২৭ সেপ্টেম্বর (২০২২) কুমিল্লায় মহাবিপন্ন প্রজাতির একটি উল্লুক উদ্ধার করা হয়েছিল। এর কয়েকমাস আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলায় দুটি ভালুক ছানা উদ্ধার করে সেখানকার স্থানীয় পুলিশ। প্রাণী পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে  আটক সবাই জানিয়েছে বান্দরবানের আলীকদম থেকে তারা এসব প্রাণী এনেছে। ঢাকা হয়ে যাশোর ও সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার হচ্ছে প্রাণীগুলো। বিপন্ন প্রাণী পাচারে রয়েছে সংঘবদ্ধ একটি সিন্ডিকেট।

 

গত বছরের ৮ অক্টোবর রাতে লোহাগাড়ার চুনতি রেঞ্জ অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে বিলুপ্তপ্রায় একটি উল্লুক উদ্ধার করা হয়। এ সময় দুই পাচারকারীকে আটক করা হয়। দ-িত ব্যক্তিরা হলেন, কুমিল্লা দেবীদ্বার ফতেয়াবাদ এলাকার জলিলের ছেলে মুবিন (৩০) ও দাউদকান্দির পেন্নাই এলাকার মজিদের ছেলে মাজহারুল হক।  উল্লুকটি আলীকদম থেকে তারা ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিল।

 

২৭ অক্টোবর আমিরাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিপন্ন প্রজাতির একটি চিতা বিড়াল, তিন মেছো বিড়াল ও একটি বন মোরগ উদ্ধার করে লোহাগাড়া থানা পুলিশ। এ সময় এমরান ও আবদুল আলীম নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। ১০ নভেম্বর কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাসে তল্লাশি করে একটি সজারু, একটি পেঁচা ও দুটি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করে। আটক করা হয় এরশাদ নামে এক যুবককে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলীকদমের মাতামুহুরী নদী তীরবর্তী পোয়ামুহুরী, কোরকপাতা বাজার এলাকার গহীন জঙ্গলে মাঝে মাঝে কিছু রাজ ধনেশ এখনো দেখা যায়। তবে শঙ্খ-মাতামুহুরীর গহীন বনের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর একটি থরনিপাড়া। ওই  এলাকায় গাছে গাছে ফাঁদ পেতে ধরা হয় ধনেশ পাখি।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট