চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

‘সবাই আমায় মিথ্যা অপবাদ দেয়’ চিরকুট লিখে এনজিও কর্মীর আত্মহত্যা

রাউজান সংবাদদাতা

৩১ মার্চ, ২০২৩ | ৯:১১ অপরাহ্ণ

‘সবাই মিলে আমার মাথায় মিথ্যা অপবাদ দেয়’- চিরকুটে এ কথা লিখে আত্মহত্যা করেছেন রাউজানের জুবলী আকতার (৩০) নামে এক এনজিও কর্মী।

 

শুক্রবার (৩১ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে।

 

জুবলী আকতার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোবারকখীল মুন্সির মিস্ত্রির বাড়ি প্রকাশ মনু সারাংয়ের বাড়ির আবদুস ছালাম জুমক্কার মেয়ে। প্রায় মাস খানেক আগে রাউজান সদরের বৈশাখী নামের এক সমবায় সমিতি বিভিন্ন অপবাদে চাকুরি থেকে বিদায় করে দেয়ায় জুবলী অপমানে আত্মহত্যা করেছেন বলে পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ধারণা।

 

নিহতের বাবা আবদুস ছালাম বলেন ‘জুবলী রোজা রাখার জন্য সেহেরি খায়, নামাজ ও কোরআন শরীফও পড়েছে। একমাত্র ছেলেকে আদরও করে। আমরা মনে করেছিলাম সে তার রুমে ঘুমাচ্ছে। এজন্য বেলা গড়ালেও তাকে ডাকেনি কেউ। দুপুরে আমি জুমার নামাজের জন্য মসজিদে যাই। ওই সময় আমার স্ত্রী, জুবলীর মা কুলছুমা বেগম তাকে ডাকলে সে সাড়া না দেয়ায় সন্দেহ হয়। এরপর দরজা ধাক্কা দিয়ে তার রুমে গিয়ে দেখতে পায়, জুবলী সেমিপাকা ঘরের টিনের ছালের বীমের সঙ্গে নিজের ওরনা পেঁছিয়ে ঝুলে আছে। এরপর স্থানীয় কাউন্সিলর বশির উদ্দিন খান ও থানা পুলিশকে খবর দিই। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল হারুনসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিকেল ৩টার দিকে জু্বলীর লাশ থানায় নিয়ে যান।’

 

নিহতের বাবা অভিযোগ করে বলেন ‘৩-৪ বছর আগে রাউজান সদরে অবস্থিত বৈশাখী নামের একটি এনজিওতে চাকুরি করত জুবলী। গত প্রায় একমাস আগে তাকে নানা অপবাদ দিয়ে চাকুরিচ্যুত করলে সে ভেঙ্গে পড়েন। সেই ক্ষোভ থেকে হয়ত আমার মেয়ে এ ধরনের আত্মহত্যার পথ বেচে নিয়েছে। সে খাতার পৃষ্ঠায় তার মৃত্যুর কারণ লিখে গেছে। সেগুলো পুলিশ নিয়ে গেছে।’

 

স্থানীয় কাউন্সিলর ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র বশির উদ্দিন খান বলেন ‘চাকুরিস্থল বৈশাখীর নানা অপবাদের শিকার হয়ে চাকুরিচ্যুত হন জুবলী। সে আত্মহননের আগে খাতায় মৃত্যুর কারণও লিখে গেছে।’

 

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন ‘লাশ ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। বৈশাখী নামে এনজিওটির বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

 

এদিকে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনায় তারা মামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।

 

এদিকে মৃত্যুর আগে জুবলির কাছ থেকে উদ্ধার চিরকুটে লেখা ছিল ‘স্যার ওবাইদুল হক (উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা), আসসালামু আলাইকুম। স্যার, ওরা আমাকে এই পৃথিবীতে আর থাকতে দিল না। বৈশাখীর জন্য আমি এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে বাধ্য হলাম। আপনার থেকে পাওনা ৪০ হাজার টাকাগুলো মাকে দিয়ে দিবেন, প্লিজ স্যার। আমার মা যেন যারা টাকা পাবে তা পরিশোধ করতে পারে। আপনি দশ দিনের মধ্যে দিয়ে দিবেন স্যার প্লিজ।’

 

আরেক পৃষ্ঠায় লিখা ছিল, আমি যদি মারা যায় তার একমাত্র দায় হল বৈশাখী অফিসের মালিক পপি, সাগর, অপুল, পপির বাবা আবদুল খাইয়ুমের। ওরা সবাই মিলে আমার মাথায় মিথ্যা অপবাদ দেয়। পপির বরের সাথে আমার সম্পর্ক আছে অপবাদ দিয়ে অফিস থেকে বের কর দেয়। আমি নিজে অফিস নিতে চাইলে সেখানে বাধা দেয়া, অন্য অফিসে কাজ নেয়ার পথও বন্ধ করে দেয়। ওরা আমার বেঁচে থাকার সমস্ত পথ বন্ধ করে দিয়েছে। আর কোন উপায় না পেয়ে আমি নিজের জীবন দিয়ে গেলাম। আর এ রকম অমানুষের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তির দাবি জানিয়ে গেলাম দেশের প্রচলিত আইন ও সরকারের কাছে।
ইতি জুবলি।’

 

জানা যায়, পরিবারের তিন ছেলে, তিন মেয়ের মধ্যে ৫ নম্বর সন্তান জুবলী। প্রায় ৮ বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিল কদলপুর সোমবাইজ্যা হাট এলাকার জনৈক মো. আজিজের সাথে। তার ঘরে জিলান নামের ৭ বছর বয়সী এক ছেলে সন্তানও রয়েছে। কিন্তু বনাবনি না হওয়ায় বিয়ের ১ বছরের মাথায় স্বামীর কাছ থেকে তাকে ছাড়িয়ে বাপের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর থেকে সে বাবার বাড়িতে থেকে ৩-৪ বছর বৈশাখী নামের সমবায় সমিতিতে হিসাব রক্ষকের চাকুরি নিয়েছিল।

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট