চট্টগ্রাম রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দূরত্ব কমাবে বাঁশখালী

অনুপম কুমার অভি

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৮:২৯ অপরাহ্ণ

বাঁশখালীবাসীর অন্যতম প্রধান সমস্যা সড়ক যোগাযোগ। দুই লেনবিশিষ্ট চালু থাকা সড়কটি ৪ লাইনে উন্নীতকরণ সময়ের দাবি পরিণত হয়েছে। এতে করে ১০টি হাটবাজারে প্রায় ৭ হাজার দোকানের স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। না হয় প্রধান সড়কের বাহিরে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করতে হবে।

 

যোগাযোগ ব্যবস্থা পিছিয়ে পড়া বাঁশখালীর সড়কটি দ্রুত ৪ লেন করার দাবি এলাকাবাসীর। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল চালু হওয়ার পর বাঁশখালী বাইপাস সড়ক নির্মাণ হলে চট্টগ্রাম বাঁশখালী হয়ে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে ৩৫ কি.মি।

 

সফলতা আসবে ব্যবসা বাণিজ্য শিল্প মালিকদের এবং দেশের জ্বালানি তেলের ব্যাপক হারে সাশ্রয় হবে। তাছাড়া পর্যটকদের আগ্রহ বাড়বে।

একসময় কালুরঘাট সেতু হতে বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া হয়ে বাঁশখালী যাতায়াত করতে হত। ৮০ দশকের শেষ দিকে কর্ণফুলী, আনোয়ারা হয়ে যাতায়াত শুরু হয় সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা। ৯০ দশকে ফেরি চালু হয় তৈলারদ্বীপ শঙ্খ নদীর উপর। ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈলারদ্বীপ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেতুটি উদ্বোধন করেন।

 

তৈলারদ্বীপ সেতু হয়ে বর্তমানে সড়ক ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম বাঁশখালী যাতায়াতের যাত্রীদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। ৩৮ কি.মি পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। সড়কের উপর গড়ে উঠেছে ১০টি হাটবাজার ও দোকানপাট। দিন দিন দোকানির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে মানুষের দুর্ভোগও বাড়ছে।

 

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দক্ষিণ চট্টগ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে মাইলফলক স্থাপন করছেন। তবে টানেল ব্যবহার নিয়ে গতিপথ বাঁশখালী সড়ক ব্যবহার না হওয়ায় বাঁশখালীবাসীর জন্য যোগাযোগব্যবস্থা পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান। টানেলের চাতুরি চৌমুহনী হয়ে তৈলারদ্বীপ সেতু ব্যবহার করে কক্সবাজার যাতায়াত ব্যবস্থা চালু হলে বাঁশখালীবাসী যোগাযোগব্যবস্থা সুফল ভোগ করবে।

 

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বিকল্প সড়ক হিসেবে বাঁশখালী হয়ে যাতায়াত করলে ৪ লেনবিশিষ্ট সড়ক নির্মাণ গুরুত্ব বহন করে। এই সড়ক ব্যবহার করে কক্সবাজার পর্যটন শিল্পায়নে দ্রুত গতির যাথায়াত মহেশখালী বাস্তবায়নাধীণ সমুদ্র বন্দরের সাথে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হবে। ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প, এনার্জি টার্মিনাল, তেল সংরক্ষণাগার, অর্থনৈতিক জোনে ব্যাপক সফলতা আসবে। যাতায়াত ব্যবস্থা সহজীকরণের পাশাপাশি পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে সময় সাশ্রয় হবে। টানেল বাস্তবায়নের পরিকল্পনাতে বাঁশখালী সড়ক সম্প্রসারণের এলাকাবাসীর একমাত্র দাবি। বাঁশখালীতে অর্থনৈতিকভাবে গড়ে উঠেছে কৃষিতে সফলতা। পর্যটন বিকাশে মিনি বাহারছড়া সমুদ্র সৈকত, বাঁশখালী ইকোপার্ক, চা বাগান, পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াবে।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালীর সড়কপথ ব্যবহার করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড উন্নয়নে মহেষখালী মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, মহেষখালী এলএনজি টার্মিনাল, তেল সংরক্ষণাগার, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও অর্থনৈতিক জোনসহ ২২টি উন্নয়ন প্রকল্প, বাঁশখালীর কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে যাতায়াতে সফলতা পাবে।

 

বাঁশখালীর যানবাহন মালিক সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দীন, সম্পাদক নুরুল ইসলাম জানান, ৭০ দশকের পর থেকে কালুর ঘাট সেতু ব্যবহার করে বাঁশখালীর যাত্রীরা যাতায়াত করে আসছিল। দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে যাত্রীদের হাজারো দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল। আশির দশকে কর্ণফুলী নদী হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর কিছুটা সুফল ভোগ করতে থাকে। কর্ণফুলী সেতু চালু হওয়ার পর হালকা, ভারী যানবাহন হয়ে বাঁশখালীর লাখো মানুষ আনোয়ারা তৈলারদ্বীপ সেতু হয়ে যাতায়াত শুরু করেন। বর্তমানে কার্পেটিং সড়কটি ১৮ ফুট সরু ৩৬ ফুট কার্পেটিং করার গুরুত্ব বহন করে। সরু রাস্তা হওয়ায় যানবাহন চলাচল ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত যাত্রী ও মালবাহী কয়েক হাজার যানবাহন মহেষখালি, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রী এবং সাধারণ মানুষ। সড়কটি সম্প্রসারণ হলে পর্যটন ক্ষেত্রে গতি আসার পাশাপাশি অর্থনীতিতে প্রাণের সঞ্চার হবে। টানেল হয়ে বাঁশখালী সড়ক সম্প্রসারণ প্রয়োজন। এর বিকল্প নেই।

 

সাবেক সিটি কর্পোরশন মেয়র ও সাবেক এম.পি মাহামুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাঁশখালীর যোগাযোগ ব্যবস্থা একসময খুবই খারাপ ছিল। ৮০’র দশকে জাতীয় পার্টি ক্ষমতা থাকাকালীন আনোয়ারা তৈলারদ্বীপ সেতুর উভয় তীরে নতুন সড়ক নির্মাণ করে ফেরি চালু করা হয়। পরবর্তীতে গার্ডার সেতু নির্মাণ হলে এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। বর্তমান সময়ে টানেল-কেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে সড়ক সম্প্রসারণ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টানেল বাস্তাবায়ন করতে বাঁশখালী সড়ক সম্প্রসারণ পরিকল্পনাতে থাকা প্রয়োজন ছিল। এই সড়ক ব্যবহার করে বর্তমানে মহেষখালী, কক্সবাজার, চকরিয়া, কুতুবদিয়া যাতায়াত ক্ষেত্রে পর্যটকরা সুফল পেত।

 

এই বিষয়ে দোহাজারী সড়ক জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, কর্ণফুলী টানেল-কেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত গতি সম্প্রসারণের কোন উদ্যোগ আপাদত নেই। তবে এই বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। টানেল হয়ে চলাচলকারী যানবাহনের কথা মাথায় রেখে পটিয়া কক্সবাজার আরাকান সড়কটি ৬ লেনে উন্নতি করার প্রকল্প ইতোমধ্যে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। যানবাহন চলাচল সুবিধার জন্য পশ্চিম পটিয়া ক্রসিং থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত ১৮ ফুট প্রশস্তের সড়ক চালু রয়েছে। এটা ৩৪ ফুট করা হচ্ছে। কর্ণফুলী আনোয়ারা চাতুরী চৌহমনী, বাঁশখালী পেকুয়া মগনামা হয়ে সরাসরি কক্সবাজার যুক্ত হলে সড়কটির দুরুত্ব কমবে ৩৫ কিলোমিটার। বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্র সৈকত ২৫ কি. মি গুরুত্ব বিবেচনা করে মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বাঁশখালী বাইপাস সড়ক এবং ৪ লেনবিশিষ্ট সড়ক নির্মাণের প্রস্তাবনা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করা হয়েছে।

 

বাঁশখালীর সংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এম.পি বলেন, মিরসরাই হয়ে বাঁশখালী সড়কটি কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক হিসেবে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। শীঘ্রই বাস্তবায়ন হবে। এছাড়া প্রধান সড়কটি ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। ৪ লেনের সড়ক নির্মাণের সড়ক বিভাগের প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমান প্রধান সড়কের উপর হাট বাজার গড়ে ওঠায় সড়ক বিভাগ বিকল্প চিন্তাভাবনা করছে। তবে এলাকার উন্নয়ন ভাবনা চিন্তা করে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করা হবে।

 

লেখক : নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁশখালী

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট