চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

মাদার্শায় হানাদার ক্যাম্পে হামলায় আট পাকসেনা ও দুই রাজাকার নিহত হয়

খোরশেদ আলম শিমুল, হাটহাজারী

৯ ডিসেম্বর, ২০২২ | ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ

হাটহাজারী উপজেলার উত্তর মাদার্শা রামদাশ মুন্সিরহাটে রাতে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার ক্যাম্প আক্রমণ করি। আমাদের গোলাগুলিতে ৬ জন পাকিস্তানি সেনা ও দুইজন রাজাকার সদস্য নিহত হয় এবং দুইজন পাকিস্তানিকে জীবিত ধরে হত্যার পর হালদা নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এ সময় বাকিরা পালিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণে হাটহাজারী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল আবছার এই তথ্য জানান।

 

তিনি উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের হিম্মত মুহুরী বাড়ির মৃত কুব্বাত আহমদের পুত্র। মুক্তিযুদ্ধকালীন নুরুল আবছার কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। তিনি বলেন, হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ থেকে বেশ কয়েকজন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য ভারতে চলে যাই।

 

মে মাসের শেষের দিকে আবুল মনসুর ও দানা মিয়ার মেম্বারের নেতৃত্বে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি মিলে আমরা একসাথে ৮৪ জন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য আবুল মনসুর ও দানা মিয়া মেম্বারের নেতৃত্বে ভারতের হরিণা ক্যাম্পে যাই। ওখান থেকে ভারতের লাইলাপুর সেনানিবাসে এক মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে জুন মাসের শেষের দিকে দেশে ফিরে আসি। প্লাটুন কমান্ডার মোক্তারুল আলম গ্রুপ কমান্ডার ইলিয়াস চৌধুরীর নেতৃত্বে দেশে আসার পর প্রথমে গুমানমর্দন এলাকার এডভোকেট শফি সাহেবের বাড়িতে কয়েকদিন থাকার পর আমাদের গ্রুপকে উত্তর মাদার্শায় জালাল মাস্টারের বাড়িতে পাঠানো হয়।

 

তিনি আরো বলেন, আমার গ্রুপ কমান্ডার ইলিয়াস চৌধুরী সহযোদ্ধা মোহাম্মদ ইসমাইল জাহাঙ্গীর,ফিরোজ আরিফ, মোহাম্মদ আলী, ছালেহ আহমদ, আবু তাহের, নুরুল ইসলাম, আবু ও খলিলের সাথে আরো দুটি গ্রুপ একত্রিত করে উত্তর মাদার্শা রামদাশ মুন্সিরহাটে রাতে পাকিস্তানি ক্যাম্প আক্রমণ করি। আমাদের গোলাগুলিতে ৬ জন পাকিস্তানি সেনা দুইজন রাজাকার নিহত হয় এবং দুইজন পাকিস্তানিকে জীবিত ধরে হত্যার পর হালদা নদীতে ফেলে দিই। এ সময় বাকিরা পালিয়ে যায়।

 

৪ দিন পর খবর পেলাম পাকিস্তানিরা পুনরায় ঐ ক্যাম্পে আসছে। এই খবর পেয়ে আমরা রাস্তার দুই পাশে এম্বুস করি। এতে মাত্র ২ জন পাকিস্তানি মারা যায়। কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে যখন অপারেশন করি আমদের প্রায় একশ’ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিল। সেই আক্রমণে কয়েকজন পাকিস্তানি নিহত হয়। আমরা অস্ত্রসহ দুইজন রাজাকারকে ধরে নিয়ে আসি।

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার বলেন, ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর নাজিরহাট কলেজ থেকে পাকবাহিনী চলে গেছে খবর পেয়ে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বিকালের দিকে পুরাতন বাস স্ট্যান্ডের সামনে বিজয় উল্লাস করতে থাকি। হঠাৎ দক্ষিণ দিক থেকে গুলি ও মর্টারের শব্দ আসতে থাকে। রাজাকারদের সহযোগিতায় জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে তারা আমাদের উপর আক্রমণ করে। সেই অপারেশনে আমাদের ১১ জন সহযোদ্ধা শহীদ হন।

 

পূর্বকোণ/আর

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট