চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

শাড়ির সারমর্ম

মুহাম্মদ আবু নাসের

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:০৬ পূর্বাহ্ণ

শাড়ি নিয়ে রয়েছে বহু গান, গল্প, কবিতা, বাঙালি নারীর পোশাক শাড়ি। শাড়ির ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই। ১২ হাত দৈর্ঘ্যরে সেলাইবিহীন এ কাপড় নারীর প্রিয় এক পোশাক। শাড়িশোভন নারী পুরুষেরও যে পছন্দের, তা গান-কবিতায় শাড়িবন্দনা দেখেই অনুমান করা যায়।

‘শাড়ি’ শব্দটি সংস্কৃত ‘শাটী’ থেকে এসেছে। এর অর্থ ‘কাপড়ের টুকরা।’ সংস্কৃত ‘শাটী’ এসেছে পালি শব্দ থেকে। শাড়ি শরীরের তিন অংশের একত্রে পরিধেয় এমন একটি পোশাক যা কাঁধ বা মাথার ওপর একটি পর্দা বা উত্তরীয়র মত পরা যায় এবং বক্ষবন্ধনী হিসেবেও কাজ করে। সংস্কৃত-সাহিত্যে এবং বৌদ্ধ সাহিত্যে প্রাচীন ভারতে নারীদের পোশাক বর্ণনার জন্য এই শব্দটির উল্লেখ করা হয়েছে। শাড়ির উৎপত্তির ইতিহাস খুব একটা স্পষ্ট নয়। শাড়ির মত পোশাকের ইতিহাস পাওয়া যায় সিন্ধু সভ্যতাতেও। যা ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে খৃষ্ট পূর্ব ২৮০০-১৮০০ খৃষ্টাব্দ সময়কাল জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এর কাছাকাছি সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে তুলার প্রথম চাষও শুরু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। রেশম বোনার আনুমানিক সময়কাল ও খৃষ্টপূর্ব ২৪৫০ থেকে ২০০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দে। আজকের একবিংশ শতাব্দীতেই নয় কেবল, শাড়ি যে বাংলার মেয়েদের পরিধেয় ছিল তা চৌদ্দ শতকেও প্রমাণ পাওয়া যায়। এই সময়ে কবি চন্ডীদাশ লিখেছেন-‘নীল শাড়ি মোহন কারী/উছলিতে দেখি পাশ। কি আর পরানে সঁপিনু চরণে/দাস করি মনে আঁশ।’ শাড়ির উৎস খুঁজতে গিয়ে যে বিক্ষিপ্ত তথ্য মেলে, তা হচ্ছে শাড়ির আদিরূপ ‘অখ- এক বস্ত্র’ টি তখন আজকের মানচিত্রের বাংলাদেশও বাঙালির মধ্যেই সীমিত ছিল না-এমন বসনের প্রচলন ছিল পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারত জুড়েই। আজকের বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, আসাম, কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়–, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র প্রদেশ, গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পাঞ্জাব, পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ ও পাঞ্জাব। এর মধ্যে পাঞ্চাব, উত্তর প্রদেশসহ কয়েকটি জায়গায় শাড়ির সঙ্গে ঘাগরা, কুর্তা ও সালোয়ার-কামিজ পাশাপাশি চলছে। উপমহাদেশের বাইরে শাড়ি আছে নেপাল ও শ্রীলংকায়। ইরান, মালয়েশিয়া ও মায়ানমারেও শাড়ি আছে। শাড়ির আদিরূপ এক বা দু’ খ- বস্ত্র। এ টুকরো কাপড়ই কালক্রমে আজকের শাড়িতে রূপ নিয়েছে। শাড়ির রূপ পাল্টেছে যুগে যুগে। শাড়ি যে কত রকমের; সুতি, সিল্প, জামদানি, বেনারসি, কাতান, জর্জেট, জারদৌসি, কাঞ্জিভরম, মসলিন আরো কত কি! বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা তো এক সময় মসলিন শাড়ির জন্যই বিখ্যাত ছিল। রবীন্দ্রনাথের ‘বাঁশি’-কবিতাতেও শাড়ির উল্লেখ আছে। ‘ঘরেতে এল না সে তো, মনে তার নিত্য আসা-যাওয়া পরনে ঢাকাই শাড়ি কপালে সিঁদুর।’

বাংলার নারীর চিরবরেন্য শাড়ি বাংলাদেশের হস্তচালিত তাঁত শিল্পের কাছেই আকণ্ঠ ঋণী। শাড়ি বাঙালি নারীর জীবনে স্বপ্ন পূরণের এক সিঁড়িও। বিয়েতে শাড়ির বিকল্প আজো দেখা যায়নি। কবি আল মাহমুদের কবিতায় শাড়ি এসেছে প্রেমেও প্রতিজ্ঞায়-‘সমাজ, সহাস নিয়ে ধরে আছি পট্টময় শাড়ি/সুকণ্ঠী কবুল করো’। শাড়ি প্রতীক ভালোবাসার, প্রতিচ্ছবি নারীর, পথিকৃৎ সুরুচির। শাড়ি টিকে আছে সময়ের পরিক্রমায়। শাড়ি কেবল কল্পনা নয়, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মেলবন্ধন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট