দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করতে কনস্টিটিউশন এসেম্বলি (গণপরিষদ) করে হলেও সংবিধান পুনর্লিখন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর এবং সিজিএসের উপদেষ্টা আলী রীয়াজ। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আলী রীয়াজ বলেন, আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, সংবিধানের পুনর্লিখন। তার বাইরে আপনি প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করতে পারবেন না। ফলে দুই মেয়াদ, তিন মেয়াদ এই প্রশ্নটা থেকে যাচ্ছে, সেটা সকলে আলোচনা করে করতে পারে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি দুই মেয়াদ যথেষ্ট। যেমনটি অন্যত্রও হয়ে থাকে।
কনস্টিটিউশন এসেম্বলির প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান পুনর্লিখনের কথা বলছি এই কারণে যে, সংবিধান সংশোধনীর উপায় নেই। বর্তমান সংবিধান সংশোধনের উপায় সীমিত। কারণ এক তৃতীয়াংশ সংবিধানকে বেসিক স্ট্রাকচারে অন্তর্ভুক্ত করার কারণে সংবিধানের এক তৃতীয়াংশে হাতই দিতে পারবেন না। এর মধ্যে এমন সব বিষয় আছে যেগুলো না সরালে কোন অবস্থাতেই কিছু করতে পারবেন না। সে কারণে পুনর্লিখনের শব্দটা আসছে। পুনর্লিখনের পথ হিসেবে কনস্টিটিউশন এসেম্বলির কথা বলছি।
টিআইবির প্রস্তাব করা একই ব্যক্তি দলীয় প্রধান, সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না- এই বিষয়ে আলী রিয়াজ বলেন, টিআইবি যেটা বলেছে ক্ষমতা যেন এক কেন্দ্রীভূত না হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওয়েস্টমিনিস্টার সংসদীয় ব্যবস্থায়ও বাকি লিডার প্রধানমন্ত্রী হন না, এটাই স্বাভাবিক। এই সংস্কারগুলো হওয়া জরুরি।
ভারতীয় গণমাধ্যমের অপতথ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো গত ৫ আগস্ট থেকে যে ডিসইনফরমেশন ও মিস ইনফরমেশনের ক্যাম্পেইন তৈরি করেছে সেগুলোর সবচেয়ে বড় জবাবটা হচ্ছে সত্য ঘটনা তুলে ধরা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। আমি তাদেরকে বলেছি, আপনারা ঢাকায় যান, দেখুন; তারপর তা তুলে ধরুন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নাগরিকদের সংলাপের জন্য আহ্বান জানানোর প্রেক্ষাপটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, টেকসই গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংলাপের আয়োজন করা। এই সংলাপগুলোর মাধ্যমে দেশব্যাপী নাগরিক সমাজ, সুশীল সমাজ এবং বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শ সংগ্রহ করা হবে। এর ফলে ভবিষ্যতের জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ প্রণয়ন করা সম্ভব হবে, যা গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে সহজতর করবে এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
আগামী ৫ মাসে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ধারাবাহিক সংলাপের আয়োজন করা হবে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, এ সংলাপগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় পর্যায়ের সংলাপের অংশ হিসেবে ঢাকায় মোট ৮টি জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপগুলোর বিষয়বস্তুর মধ্যে থাকছে- সংবিধান, মানবাধিকার ও গুরুতর আইন লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের বিচার নিশ্চিতকরণ, বিচারব্যবস্থা, নাগরিক প্রশাসন, সাংবিধানিক সংস্থাসমূহ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, অর্থনৈতিক নীতিমালাসহ ব্যাংকিং খাত ও বৈদেশিক ঋণ এবং গণমাধ্যম।
এছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও খুলনায় চারটি আঞ্চলিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের প্রত্যাশা, প্রস্তাবনা ও সুপারিশ উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করতে পারবেন।
পূর্বকোণ/মাহমুদ