চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

বেকারিপণ্যে বিপজ্জনক মাত্রায় ট্রান্সফ্যাটই হৃদরোগজনিত মৃত্যুর কারণ: গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৬:৫৬ অপরাহ্ণ

বেকারি ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত পিএইচওর চারটি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড পিওর, পুষ্টি, সেনা ও তীরের ডালডার ২৪টি নমুনা পরীক্ষা করে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ‘ট্রান্সফ্যাট’-এর  মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষতিকর এই উপাদান হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকির অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতি ১০০ গ্রাম নমুনায় ২ গ্রাম ট্রান্সফ্যাট থাকার কথা থাকলেও সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৯ গ্রাম পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাট মিলেছে।  আজ শনিবার বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ডালডায় ক্ষতিকর উপাদান নিয়ে এক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা গবেষণাটির নাম ‘অ্যাসেসমেন্ট অব ট্রান্সফ্যাট ইন পিএইচও ইন বাংলাদেশ’।

২০১৯ সালে গবেষণাটি করেছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট। গবেষণায় সহায়তা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট।

গবেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশে ডালডা বা বনস্পতি ঘি হিসেবে পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল (পিএইচও) ব্যবহার করা হয়। বাসাবাড়িতে এর ব্যবহার কম হলেও ভাজা-পোড়া স্ন্যাকস, বেকারিপণ্য ও বাণিজ্যিক উৎপাদনে তৈরীকৃত খাদ্যপণ্যে এটি বহুল ব্যবহৃত হয়। এই পিএইচওতে ক্ষতিকর ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড (টিএফএ) পাওয়া গিয়েছে। এই টিএফএ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। ভেজিটেবল অয়েল বা উদ্ভিজ্জ তেল (পাম, সয়াবিন) যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পারশিয়ালি হাইড্রোজেনশন করা হলে তরল অবস্থা থেকে মাখনের মতো অর্ধকঠিন মারজারিন বা কঠিন ডালডা বা বনস্পতি ঘি উৎপন্ন হয়, যা বাজারে ডালডা নামে পরিচিত। এই উচ্চমাত্রার ট্রান্সফ্যাটযুক্ত ডালডা গ্রহণের সঙ্গে উচ্চহারে হৃদ্‌রোগ, স্মৃতিভ্রংশ (ডিমেনশিয়া) ও স্মৃতিহানি রোগ ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত।

এই গবেষণার জন্য ঢাকায় খুচরা বিক্রেতাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বিভিন্ন বেকারি ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত পিএইচওর চারটি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড পিওর, পুষ্টি, সেনা ও তীরের ডালডার ২৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর পর্তুগালের লিসবনে ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউটের ফুড কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরিতে নমুনাগুলো বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষণার ফলাফলে এসেছে, ২৪টি নমুনার মধ্যে ২২টিতে (৯২%) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে। প্রতি ১০০ গ্রাম নমুনায় গড়ে ১১ গ্রাম ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে, যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি ১০০ গ্রামে সর্বোচ্চ ২ গ্রাম ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের সুপারিশ করেছে। নমুনাগুলোয় প্রতি ১০০ গ্রামে সর্বনিম্ন শূন্য দশমিক ৬৯ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৯ গ্রাম ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গবেষণার ফলাফলে আরও এসেছে, একই ব্র্যান্ডের নমুনায় ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণে তারতম্যের উপস্থিতি। যেমন, একটি ব্র্যান্ডের ডালডার নমুনায় শূন্য দশমিক ৬৯ গ্রাম থেকে ১৪ দশমিক ৫ গ্রাম ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গিয়েছে। এসব শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাদ্যপণ্য জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

 

পূর্বকোণ / আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট