চট্টগ্রাম শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাব সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের

ইমাম হোসাইন রাজু

১৩ মে, ২০২৩ | ১২:৫৮ অপরাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের (ইউএসএ) তৈরি বলে দুই বছর আগে চমেক হাসপাতালে সরবরাহের চেষ্টা করা যুক্তরাজ্যের (ইউকে) সেই আইভাস মেশিনের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণের জন্য চমেক হাসপাতালের দুজন চিকিৎসককে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান অযাচিতভাবে লিখিত এক চিঠিতে এমন প্রস্তাব দেয়ায় এ নিয়ে মুখরোচক নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে চমেক হাসপাতালে। কেউ কেউ এই ধরনের প্রস্তাবকে ‘আইভাস মেশিন গ্রহণের জন্য পুরস্কার’ হিসেবে অভিহিত করছেন। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজী হননি।

এদিকে, আজ শনিবার মেশিনটি গ্রহণের বিষয়ে সার্ভে কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিতের কথা রয়েছে। এদিন সকাল ৯টায় হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে মন্ত্রণালয়ের টেকনিক্যাল বিভাগের একজন প্রতিনিধিও থাকার কথা রয়েছে।

জানা যায়, সম্প্রতি মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেডের ডিজিএম এবং হেড অব বিজনেস ডেভলপমেন্ট (মেডিক্যাল) শান্তনু কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চমেক হাসপাতাল পরিচালকের কাছে আইভাস ও এফএফআর মেশিন গ্রহণ করা এবং বর্তমান অর্থ-বছরের বরাদ্দ থেকে বিল প্রদানের জন্য আবেদন করেন। চিঠিতে ‘চাহিদা মোতাবেক কাগজপত্র উপস্থাপনের করার কথা উল্লেখের পাশাপাশি তিনটি অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা প্রদানের কথাও উল্লেখ করা হয়। এরমধ্যে দুই জন চিকিৎসককে বিদেশে ট্রেনিং নিশ্চিত করা, মেশিন চালুর পর ১৫টি কার্যক্রমের পর ওয়ারেন্টি পিরিয়ড কাউন্ট করা এবং পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে অতিরিক্ত এক বছরের বর্ধিত সার্ভিস ওয়ারেন্টি প্রদান করার কথাও উল্লেখ করা হয়।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, আলোচ্য আইভাস মেশিনটি গ্রহণে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ‘চাপের’ মুখে পড়েছে খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে একপ্রকার ‘বিব্রতকর’ পরিস্থিতিতে পড়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন হাসপাতাল প্রশাসন বিভাগের কেউ কেউ। এমনও অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, মেশিনটি গ্রহণের জন্য হাসপাতালের কেউ কেউ ইচ্ছে পোষণ করেছেন। অবাক বিষয় হলো, জালিয়াতির অভিযোগ থাকার পরও মেশিনটি জায়েজ করতে দুদকের পরামর্শ গ্রহণের নামে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে সার্ভে কমিটির একজন সদস্য ও হাসপাতাল প্রশাসনের এক কর্মকর্তা দুদক কার্যালয়েও গিয়েছেন। এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের মুখে মুখে ফিরছে।

গত বৃহস্পতিবার মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে এক প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, চট্টগ্রাম-১ কার্যালয়ে যান চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যেখানে হাসপাতালের একজন সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও সার্ভে কমিটির একজন সদস্য (সহযোগী অধ্যাপক) উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা মেশিনটি গ্রহণ করা যাবে কি-না এ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেন দুদকের কর্মকর্তার সঙ্গে। এসময় মেশিন সরবরাহের সকল নথিপত্রও দুদকের কাছে উপস্থাপন করেন। তবে এ বিষয়ে কোন মতামতই প্রদান করেন নি দুদক।

জানতে চাইলে দুদকের উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, ‘চমেক হাসপাতালের কয়েকজন দুদকে এসেছিলেন। তাঁরা মেশিন সরবরাহ সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছিলেন। যেহেতু এটি টেকনিক্যাল বিষয়, তাই এ বিষয়ে আমাদের কোন মতামত প্রদানের সুযোগ নেই। তবে অনিয়ম হলে দুদক অবশ্যই তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

এদিকে, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. অং সুই প্রু মারমা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে, মেশিনটি গ্রহণের বিষয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ ভ্রমণ ও সুযোগ সুবিধার প্রস্তাব এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তোড়জোড়ের বিষয়টিকে দুর্নীতির সাথে হাতমেলানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও টিআইবি চট্টগ্রামের সভাপতি এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘কার্যাদেশে বাইরে সুযোগ সুবিধার অফার দেওয়ার বিষয়টি সরাসরি দুর্নীতির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করার সমান। বিদেশ ভ্রমণের অফারটিতে আরও মারাত্মত। এই অফার দেয়ার সাহস পায় কীভাবে? এর পেছনে অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কেউ রয়েছেন। সেটি হোক মন্ত্রণালয়ের। তারাও হয়তো কোন অফার পেয়েছেন নিশ্চয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত। পাশাপাশি দুদককেও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৫ জুন চুক্তিমোতাবেক না হওয়ায় মেশিন গ্রহণ করেনি হাসপাতালের সার্ভে কমিটি। এ নিয়ে ২০২১ সালের ৬ জুন চমেক হাসপাতালে ‘যন্ত্র সরবরাহে জালিয়াতি’ শিরোনামে দৈনিক পূর্বকোণকে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এরপর মেশিনটি আর গ্রহণ করেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ দুই বছর ধরে হাসপাতালে বাক্সবন্দী অবস্থায় পড়ে থাকার পর সরবরাহকরী প্রতিষ্ঠান ফের মেশিনটি সরবরাহের তোড়জোর শুরু করে।

এ বিষয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেছিলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ থাকায় সার্ভে কমিটির মতামতের জন্য সভা করা হয়। তবে সার্ভে কমিটি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, সে ব্যাপারেই পরবর্তী করণীয় নির্ধারিত হবে।’

পূর্বকোণ/এ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট