চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন ‘কপ-২৫’ ধরিত্রী বাঁচানোর শেষ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে

৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বৈশি^ক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নানা উদ্বেগের মধ্যে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে সোমবার শুরু হয়েছে দু’সপ্তাহব্যাপী জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন ‘কপ-২৫’। দু’শো দেশের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নিয়েছেন। নানা কারণেই এই সম্মেলন খুবই গুরুত্ববহ। ৪৪টি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত অ্যালায়েন্স অব স্মল আইল্যান্ড স্টেটস-এওএসআইএস নেতারা জলবায়ু পরিবর্তনকে এখন জরুরি অবস্থা আখ্যা দিয়ে এই সম্মেলনকে ধরিত্রী বাঁচানোর শেষ সুযোগ বলে মন্তব্য করেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের আগে ‘ভালনারেবল নেশন্স কপ-২৫ লিডার্স সামিটে’ বক্তব্য দানকালে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়ার স্বার্থে জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যার সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

বৈশি^ক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন যখন মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়ার তাগিদটি খুবই প্রাসঙ্গিক বলতে হবে। সব ধরনের হঠকারিতা পরিহার করে সম্মেলনে মানব-অস্তিত্বের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হলে নিশ্চয়ই এই পৃথিবী মানববসতির অনুকূল পরিবেশে ফিরে যাওয়ার পথ মসৃণ হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের জন্য একটি কঠিন বাস্তবতা। এটি এখন মানুষের জীবন ও পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি করছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। এটা মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কাউকে ক্ষমা করবে না। পরিস্থিতি যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, তাতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রয়োজন বৈশ্বিক ঐক্য। তিনি উদ্বেগের সঙ্গে বলেন, আমরা আমাদের সময়ের সম্ভবত কঠিনতম বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি। বিশ্ব এখন মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে পৌঁছেছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিমুহূর্তে আমাদের নিষ্ক্রিক্রয়তা প্রথিবীর প্রত্যেক জীবিত মানুষকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। উল্লেখ্য, ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে আর্থ সামিটের পর থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস হ্রাসে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি, এর নির্গমন এখনও বেড়ে চলেছে। এই প্রবণতা পৃথিবীকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, পরিবর্তিত জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছে বিশ্বের মানুষ। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবস্থা সবচেয়ে করুণ। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের মতো অনেক দেশকে অস্তিত্বের সংকটে ফেলেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সীমিত ক্ষমতা এবং নির্দিষ্ট ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসব দেশ। যদিও বৈশি^ক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনে এসব দেশের ভূমিকা নেই বললেই চলে কিন্তু ক্ষতির বড় মাসুল দিতে হচ্ছে এসব দেশকে। এটি এক ধরনের অবিচার। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের মতো সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা থাকলেও ধারণার চেয়েও কম সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। তিনি এ ক্ষেত্রে একটি নতুন সিভিএফ এবং ভি-২০ ট্রাস্ট তহবিল গঠন এবং জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষ দূত নিয়োগ সম্ভব হলে সেটি বড় সাফল্য হবে বলে মন্তব্য করেছেন। মানব-অস্তিত্বের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর এমন সুচিন্তিত বক্তব্যকে আমলে নেয়া উচিত।

উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, এ কারণে ২০৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বার্ষিক জিডিপি ২ শতাংশ হারে কম হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের ফলে বাংলাদেশে জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশ বা ১ কোটি ৩৪ লাখ মানুষের জীবনমান ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক। ঝুঁকি মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৬০ লাখ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে ইউনিসেফ জানিয়েছে। এতে ২০৫০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ১ কোটি ৯০ লাখ শিশুর জীবন হুমকিতে পড়ার আশঙ্কাও করা হয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে না পারলে আমরা কখনই এসডিজি অর্জন করব না এবং দারিদ্র্যবিমোচন করতে পারব না। অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর চিত্রও একই। এবারের জলবায়ু সম্মেলনে এসব বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ সাপেক্ষে যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত চাই আমরা। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিশ্বের সব দেশকে ‘ন্যাশনাল ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরির কাজ শেষ করার বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। সে বিষয়েও পর্যালোচনা দরকার। যেসব দেশ বিষয়টির ব্যাপারে এখনো নীরব আছে এবারের সম্মেলন থেকে সেসব দেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ২০৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা আছে। সে বিষয়ে অগ্রগতি নিয়েও সম্মেলনে বিচার-বিশ্লেষণ করা উচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানতম দায়ী দেশগুলোর বিষয়ে একটি শক্ত অবস্থান নিতে হবে। আমরা আশা করতে চাই, এবারের সম্মেলন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য একটি নির্মল পৃথিবী গড়ার জন্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই গ্রহণ করবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট