চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পরিবেশ ও প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীলতা

খায়রুল আহসান মারজান

২৪ জুলাই, ২০১৯ | ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ

মানুষের সাথে প্রকৃতির সম্পর্কটা মানব সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকেই। তবে প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের তৎপরতা শুরু হয়েছিল তখনই, যখন মানুষ গাছ কেটে ঘর বাড়ি; পাহাড় কেটে রাস্তা কিংবা নদীতে বাঁধ বানিয়ে নতুন নতুন সভ্যতার সূচনা করেছিল। তবে সে লড়াইটা ছিল টিকে থাকার লড়াই; বেঁচে থাকার লড়াই। তাই হয়তো নির্মল ধরিত্রীও তা মেনে নিয়েছিল কোনরূপ প্রতিক্রিয়া ছাড়াই।
এটা তখনই সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে, যখন মানুষ বনাঞ্চল উজাড় করে ; শিল্প-কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে কয়লা পুড়িয়ে বায়ুমন্ডলে কার্বনের অদৃশ্য ছাদ তৈরী করেছে। আর তাতে সূর্যের তাপ (অতিবেগুনী রশ্মি) আটকে রেখে ধরিত্রীকে করে তুলেছে উষ্ণ থেকে উষ্ণতর। তাই ধরিত্রীও হিমালয় কিংবা আটলান্টিকের বরফ গলিয়ে তার প্রতিশোধ নিচ্ছে বরাবর। কেননা ধরিত্রীও তো আর সর্বংসহা নয়।
কথায় আছে বিপদ ঘাড়ে না চাপলে অনেকেরই টনক নড়ে না। বিপদ এখন গায়ে জুড়ে বসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল নিয়ে বহুবছর ধরে আলোচনা চললেও এবছর এর চরম প্রভাব লক্ষ্য করেছে বিশ্ব। কুয়েতের তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এমনকি শীতপ্রধান ইউরোপের দেশ ফ্রান্সেও গত পহেলা জুলাই তাপমাত্রা ছিল ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস; চালু করা হয়েছিল রেড অ্যালার্ট। এতো ভিনদেশের খবর। খোদ বাংলাদেশের তাপমাত্রাও এবছর পূর্বের সকল রেকর্ড ভেঙে পৌঁছে গিয়েছে ৩৯.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। এটি প্রথম খেয়াল করেছিল বিজ্ঞানিরা ১৯৫০ সালে। ‘পৃথিবীর গতিশীল উষ্ণায়নের ফলে আটলান্টিকের বরফ গলে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়বে; সমুদ্র তটবর্তী শহরগুলো ডুবে যাবে; এবং গ্রীস্মকালে তাপদাহ প্রচন্ডরকম বাড়বে।’ এমন সব আশংকার কথা তারা তখনই জানিয়েছিল; বলেছিল এর কারণ এবং সমাধানের কথাও।
গবেষকরা গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ এবং বনউজারীকরণকেই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিল। তবুও বিংশ শতাব্দীতে জলবায়ু মোকাবেলায় সফল কোনো উদ্যোগ তো নেওয়াই হয়নি বরং একবিংশ শতাব্দীতে এসে শিল্প-কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে কার্বন নিঃসরণ এবং বনউজাড়করণ বেড়ে চলছে জ্যামিতিক হারে। উন্নত দেশগুলোর এ নিয়ে মাথাব্যথা না থাকাটাই স্বাভাবিক। কেননা এর সাথে তাদের অর্থনৈতিক বিষয়টি জড়িত। পুরো বিশ্বকে ডুবিয়ে হলেও তারা তাদের অর্থনৈতিক লাভটাকেই বেছে নেবে।
তবে বাংলাদেশের মতো ভুক্তভোগী দেশকে এবিষয়ে ভাবতেই হবে। কেননা বিশ্ব জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০১৮ অনুযায়ী বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।
এমতাবস্থায় সরকারের বনভূমি রক্ষায় জোড়ালো ভূমিকা রাখা দরকার ছিল। অথচ সরকারই বনভূমি উজাড় করে প্রকৃতির সাথে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে দেশের ৭০% বনভূমি নিধন হয় সরকারি নানান প্রকল্প এবং অনুমোদন নিয়ে। ফলে বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ কমতে কমতে ১১.২% নেমেছে। জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী যা কিনা ২৫% থাকা দরকার। এমন পরিস্থিতিতেও বনাঞ্চল বিধ্বংসী কোন তৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ থাকা দরকার।
প্রকৃতি ধ্বংস না করে বরং আরো সবুজায়ন করতে হবে; সুন্দর করতে হবে। আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী আমাদেরকেই রেখে যেতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট