চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সালাম সভাপতি আতাউর সম্পাদক

কাউন্সিলরদের ভোট

নিজস্ব প্রতিবেদক

৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটে এম এ সালাম সভাপতি ও শেখ আতাউর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। ৩৫২ জন কাউন্সিলর এতে ভোট দেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় নগরীর কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে নির্বাচনশেষে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

কাউন্সিলে ভোটাভুটির আগে প্রার্থীদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের চেষ্টা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
সভাপতি পদে এম এ সালাম ২২৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী পান ১২৯ ভোট। একটি ভোট বাতিল হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ আতাউর রহমান ১৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী গিয়াস উদ্দিন পেয়েছন ১৫৪ ভোট। সভাপতি নির্বাচিত হওয়া এমএ সালাম ২৭ বছর ধরে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনকে ঘিরে লালদিঘি ময়দান এবং কাজির দেউড়ি এলাকায় ছিল সাজ সাজ রব। কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন ছিল চারদিকে। সকাল থেকেই মিছিল সহকারে নেতাকর্মীরা সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন লালদিঘি ময়দানের সমাবেশে যোগ দেন। সম্মেলন উদ্বোধনের আগে দুই সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শেখ আতাউর রহমান এবং গিয়াস উদ্দিনের অনুসারীদের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়। তবে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর থেকে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হয়। বিকাল ৩টার পর দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয় কাজির দেউড়িস্থ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে। দ্বিতীয় অধিবেশ সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে দুইজন করে প্রার্থী থাকার কারণে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ভোটাভুটির সিদ্ধান্ত দেন।

এদিকে, ভোট শুরু হওয়ার আগে থেকেই বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা কাজির দেউড়ি এবং আশপাশে অবস্থান নেয়। সবার মাঝে টানটান উত্তেজনা। কে জয়ী হচ্ছেন। কে হারছেন। কোন পদে কে জয়ী হলে দলের অবস্থা কেমন হবে এ্ই ধরনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতেও দেখা গেছে। তবে পরিবেশটা ছিল উৎসবমুখর।
সম্মেলন দেখতে আসা একাধিক নেতাকর্মীর সাথে আলাপকালে তারা জানান, চট্টগ্রামের ইতিহাসে এই ধরনের সুশৃঙ্খল সম্মেলন কখন হয়েছে মনে নেই। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের আলাদা একটা ঐতিহ্য ছিল। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়া গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচনের মাধ্যমে সেই ঐতিহ্য অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হয়েছে।
নির্বাচিত হওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় সভাপতি এমএ সালাম কাউন্সিলর-ডেলিগেটদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এই নির্বাচন দলের ভিতরের প্রতিযোগিতা। এখানে ভেদাভেদ করার সুযোগ নেই। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। সবাইকে নিয়েই কাজ করবো। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অন্য দশজন সাধারণ সৈনিকের মতই তিনি নিজেকে মনে করেন উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে সংগঠনকে আরো বেশি শক্তিশালী এবং বেগবান করা হবে।
নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, দীর্ঘ দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেয়ার কারণে তিনি যে, তার আগে জেলা ছাত্রলীগ এবং

আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তা অনেকটা চাপা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি যখন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তখন যারা ছাত্রলীগ করতেন আজ তারাই কাউন্সিলর। সেইদিনের ছাত্রলীগ নেতারা আজ আওয়ামী লীগ নেতা। তারা আমাকে ভুলেনি। তারা যে প্রত্যাশা নিয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছেন আমি আমার অভিজ্ঞতা এবং প্রজ্ঞার মাধ্যমে তা পূরণে চেষ্টা করবো।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার আগে ওবায়দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলাসহ ১৬ জেলার সম্মেলনে ফেনীতে সভাপতি পদ ছাড়া আর কোথাও ভোটাভুটির প্রয়োজন হয়নি। এখানে প্রার্থীরা ভোটাভুটি চেয়েছেন। তাদের বক্তব্য এমন- হারি জিতি নাহি লাজ, নির্বাচন হোক। সেটাই ভালো। অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চায় ভোটাভুটি সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। রাজনীতিতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চায় এটা একটা মাইলফলক।
দলের অভ্যন্তরে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়েছে। এ নিয়ে কারও বেশি উচ্ছ্বাস-উল্লাস প্রকাশ না করা সমীচীন। এতে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতাটা অসুস্থ পর্যায়ে চলে যায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট