চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সাতকানিয়ায় তুলকালাম

ষ চেয়ারম্যানের কয়েক দফা হামলায় শ্রমিক লীগ নেতা ও তার মাসহ আহত ৯ ষ বসত ঘর ও দোকান ভাংচুর বিক্ষোভ, পুলিশ মোতায়েন

নিজস্ব সংবাদদাতা হ সাতকানিয়া

১২ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৩১ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মতবিনিময় সভায় যোগদান করায় ধর্মপুর ইউপি চেয়ারম্যানের কিল ঘুষি ও লাঠির আঘাতে আহত হয়েছেন ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের এক নেতা। এছাড়াও চেয়ারম্যান এম ইলিয়াছ চৌধুরী ও কয়েকজন বিএনপি- এলডিপি নেতার নেতৃত্বে কয়েক দফা হামলায় বৃদ্ধা ও ছাত্রসহ ৯ জন আহত হয়েছে।

আহতদের মধ্যে ধর্মপুর দরবার শরীফের কয়েকজন মুরিদও রয়েছেন। ভাংচুর করা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগ নেতার বসত ঘর এবং দোকান। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ পালন করেছে দরবার শরীফের মুরিদ ও বিক্ষুব্ধ জনতা। অপরদিকে, চেয়ারম্যানের পক্ষের কয়েকজন আহত ও তাদের বসত ঘরে হামলার পাল্টা অভিযোগ করেছে ইলিয়াছ চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা থেকে রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সময়ে উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নে এসব ঘটনা ঘটে। গতকাল শুক্রবার সারা দিনও এলাকায় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও অর্ধ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন ছিল। ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, আওয়ামী লীগ মনোনীত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী এম এ মোতালেবসহ

আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বই প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সালাহ উদ্দিন হাসান চৌধুরী উত্তর সাতকানিয়ার ৬টি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে পৌরসভা এলাকায় মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। এসময় প্রার্থীর বড় ভাই ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মঈনউদ্দিন হাসান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এ মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের অন্যান্য নেতার ন্যায় ধর্মপুর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের প্রচার সম্পাদক মো. ইদ্রিচও অংশ নেন। সভা শেষে বিকালে বাড়ি থেকে ধর্মপুর বিশ্বহাট এলাকায় যায়। এদিকে, ইদ্রিচ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সালাহ উদ্দিন হাসান চৌধুরীর মতবিনিময় সভায় যোগদান করায় তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে থাকে চেয়ারম্যান এম ইলিয়াছ চৌধুরী। বিশ্বহাটে ইদ্রিচকে পেয়ে চেয়ারম্যান রেগে গিয়ে মতবিনিময় সভায় যোগদানের কারণ জিজ্ঞাসা করেন। আমার নির্দেশ না নিয়ে সেখানে যাওয়ার মতো স্পর্ধা কীভাবে দেখালে। এসব কথা বলার এক পর্যায়ে ইদ্রিচ প্রতিবাদ করে উঠলে চেয়ারম্যান তাকে কিল ঘুষি ও লাঠিপেটা করে আহত করার পর আটকিয়ে রাখে। এসময় চেয়ারম্যানের সাথে ধর্মপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. ফোরকান, সাধারণ সম্পাদক তছলিম উদ্দিন ও সহ-সভাপতি ওয়াহাব মিয়াসহ বিএনপি এবং এলডিপির কিছু নেতাও ছিল। ইদ্রিচকে মারধর করে আটকিয়ে রাখার খবর পেয়ে ধর্মপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও দরবার শরীফের মুরিদ মো. মাসুদ, মো. ফারুক, রবিউল হোসেন, মো. জাহেদ ও সাইদুল মুনির আরিফের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের দল তাকে উদ্ধার করার জন্য ঈশ্বর বাবুর হাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এরই মধ্যে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আহত অবস্থায় ইদ্রিচকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ঈশ্বর বাবুর হাটের দিকে মাসুদ ও আরিফের নেতৃত্বে লোকজন যাওয়ার খবর পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে চেয়ারম্যান ইলিয়াছ শতাধিক লোক জড়ো করে। পরে চেয়ারম্যানের লোকজনের সাথে ফকির পাড়ার বাসিন্দা ও ধর্মপুর দরবার শরীফের মুরিদদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান ইলিয়াছ, বিএনপি নেতা ফোরকান, ওয়াহাব মিয়া ও তছলিমের নেতৃত্বে শতাধিক লোক লাঠিসোটা নিয়ে ফকির পাড়া এলাকায় ইদ্রিচের বসত ঘর ও কয়েকটি দোকানে ভাংচুর চালায়। এসময় হামলাকারীরা ধর্মপুর দরবার শরীফের বেশ কয়েকজন মুরিদ ও ছাত্রকে মারধর করে। পরে তারা সেখান থেকে চলে যাওয়ার সময় পাজের পাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জব্বার তালুকদার, আবু ছিদ্দিক তালুকদার, হারুন ও আইয়ুবের বসত ঘর ও আকতার হোসেন এবং মো. সুমনের দোকানে হামলা চালায়। এসময় ঘটনায় বৃদ্ধা ও ছাত্রসহ ৯ জন আহত হয়েছে। আহতরা হলেন- মোঃ ইদ্রিচ (৩৪), তার মা রশিদা বেগম (৬২), মো. মাসুদ (৩৫) মো. ফারুক (৩৩), হেফজখানার ছাত্র রবিউল হোসেন (১৪), মো. জাহেদ (২৫), মো. রুবেল (২০), তারেক মাহমুদ বাপ্পি (৩০) ও সাইদুল মুনির আরিফ (৩৪)।

খবর পেয়ে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান মোল্যা ও থানার ওসি মোঃ সফিউর কবীরের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। এরমধ্যে বিক্ষুব্ধরা চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের দাবীতে বিক্ষোভ করতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা চলে যায়। এরপর থেকে ফের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ধর্মপুর দরবার শরীফ এলাকায় সাতকানিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর তঞ্চঙ্গ্যা এবং বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান করে। গতকাল সারা দিন দরবার শরীফ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন ছিল।

ধর্মপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, ইদ্রিচ একজন নেশাগ্রস্ত ছেলে। তাকে অনেকবার আমি বিভিন্ন জায়গায় অসংলগ্ন অবস্থায় দেখায় তাকে বিভিন্ন সময়ে সতর্ক করা হয়েছিল। সে কারণে হয়তো আমার বিরুদ্ধে বলছে। তাকে আমি মারধর করিনি। তার কথাবার্তা ও আচরণে নৌকার প্রার্থীর যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য বারণ করেছিলাম। দরবার শরীফের কোন মুরিদের সাথে আমার কোন ঝামেলা হয়নি। বসত ঘর ও দোকান ভাংচুরের যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা পুরোটা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি সব সময় এলাকায় শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছি। অশান্তির প্রতিবাদ করেছি। যারা এলাকায় অশান্তি করে ফায়দা লুটতে চাই তারা এসব ষড়যন্ত্র করছে। আর ঘটনার দিন দরবার শরীফ এলাকায় আমি এবং আমার কোন লোক যায়নি।

তাকে গ্রেপ্তারের দাবীতে এলাকায় বিক্ষোভ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান জানান, এ ধরনের কোন বিষয় আমার জানা নাই। মূলত নৌকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা আমার বিরুদ্ধে এরকম অপপ্রচার চালাচ্ছে।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কিছু লোক আহত হওয়ার তথ্য পেয়েছি। ঘটনার বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। আরো বিস্তারিত নিয়ে প্রতিবেদন আকারে জেলা প্রশাসকের নিকট পাঠানো হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট