নতুন করে নগরীতে ছোট যানবাহনের আর রুট পারমিট না দেয়া, মডেলবিহীন, ইঞ্জিন ও চেসিসে ঘষামাজাসহ নানা অসঙ্গতি রয়েছে-এ ধরনের সাত শতাধিক বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সি ও টেম্পোর রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করেছে নগর গণপরিবহন জরিপ কমিটি।
এছাড়াও যানবাহনের সিলিং পুনরায় নির্ধারণ, হাটহাজারীর কুয়াইশ থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা হয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত কোম্পানিভিত্তিক এয়ারকন্ডিশন (এসি) বাস চালুসহ নগরীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে এ ধরনের একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি (আরটিসি)।
গতকাল দামপাড়া চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আরটিসির পর্যালোচনা (রিভিউ) বৈঠকে এসব সুপারিশ করা হয়। এসব সুপারিশ আগামী আরটিসির সভায় অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে। ২০২২ সালের ২৩ মে সর্বশেষ এই আরটিসি’র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ বলেন, আরটিসির পর্যালোচনা বৈঠকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নগরীর গণপরিবহনের উপর জরিপের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে নানা অসঙ্গতি উঠে এসেছে। যেমন, যেসব বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার, ট্যাক্সি, টেম্পোর মডেল চিহ্নিত করা নেই, ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর ঘষামাজাসহ নানা ক্রটি রয়েছে কিংবা জরিপের সময় হাজির করেনি সেইসব যানবাহনের রুট পারমিট বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে।
তবে কোন রুটে সিলিং বাড়ানো হবে না। নানা অনিয়মের কারণে সিলিংভুক্ত যেসব বাস মিনিবাসের রুট পারমিট বাতিল করা হবে তার পরিবর্তে ইতিমধ্যে যেসব বাস মিনিবাস মালিক তাদের যানবাহন সিলিংভুক্ত করার আবেদন করেছে সেখান থেকে বাতিল সমসংখ্যক বাস মিনিবাস সিলিং খালি থাকা সাপেক্ষে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আবেদন যাছাই করতে একটি কমিটিও করা হয়েছে। কিন্তু কোনভাবেই হিউম্যান হলার, ট্যাক্সি-টেম্পোসহ ছোট যানবাহনের নতুন করে রুট পারমিট না দেয়ায় বিষয়ে সুপারিশ করেছে রিভিউ কমিটি।
গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কোম্পানিভিত্তিক যানবাহন চালুর বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বৈঠকে। হাটহাজারীর কুয়াইশ থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা হয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত এসি বাসের নতুন একটি রুট সৃষ্টির বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে। ওই রুটে কোম্পানিভিত্তিক ৪২ সিটের এসি বাস সার্ভিস চালু করার কথা বলা হয়েছে। আরটিসির বৈঠকে বিষয়গুলো সুপারিশ করা হয়েছে। আলোচ্য কমিটির আগামী বৈঠকে সুপারিশগুলো অনুমোদন সাপেক্ষে বাস্তবায়ন করা হবে।
কি পরিমাণ যানবাহন রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যানের বিষয়টি উল্লেখ না করে বিআরটিএর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক শফিকুজ্জামান ভুঞা জানান, সুপারিশগুলো আগামী আরটিসির বৈঠকে উত্থাপিত হবে। ওই বৈঠকে অনুমোদন হলে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল জানান, বৈঠকে হিউম্যান হলারসহ ছোট যানবাহনের নতুন করে রুট না বাড়ানোসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিবহন বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অলি আহমদ জানান, গণপরিবহন জরিপে দুই শতাধিক বাস ও মিনিবাস এবং পাঁচ শতাধিক ট্যাক্সি-টেম্পোর নানা অসঙ্গতি উঠে এসেছে। যেমন- কোন যানবাহনের মডেল নেই, আবার কোনটির ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর ঘষামাজা করা হয়েছে ইত্যাদি। অসঙ্গতিপূর্ণ যানবাহনের রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ জানিয়েছে জরিপ কমিটি।
গত বছরের ২৩ মে অনুষ্ঠিত আরটিসির সভায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নগরীর গণপরিবহনে জরিপ চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জরিপ চালাতে আলাদা কমিটিও করা হয়। নগর ট্রাফিকের উত্তর জোনের উপ কমিশনার জয়নাল আবেদিনকে আহবায়ক করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট বাস ও মিনিবাস জরিপ কমিটি গঠন করা হয়। একইভাবে ট্রাফিকের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার নাসির উদ্দিনকে আহবায়ক করে হিউম্যান হলার ও পশ্চিম জোনের উপকমিশনার (ডিসি) তারেকুল ইসলামকে আহবায়ক করে অটোটেম্পো জরিপ কমিটি গঠন করা হয়। জরিপ কমিটি ইতিমধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন আরটিসির চেয়ারম্যান নগর পুলিশ কমিশনারের কাছে।
জরিপ কমিটিকে যেসব বিষয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে তা হলো- কমিটি একমাসের মধ্যে আরটিসির সভায় অনুমোদিত রুটে পারমিট প্রাপ্ত মোটরযান রুটভিত্তিক সরেজমিন পরিদর্শন করে কতগুলো বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার ও অটোটেম্পা চলাচল করে এবং কতগুলো চলাচল করে না (রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ), যানবাহনে কোন ত্রুটি রয়েছে কিনা তার বিস্তারিত বর্ণনাসহ প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছিল।
পূর্বকোণ/মাহমুদ