চট্টগ্রাম শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪

থেরাপিউটিক প্লাজমা পরিবর্তনের যুগে চমেক হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ মে, ২০২৩ | ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

দুরারোগ্য ব্যাধি জিবিএস (গুলিয়ান-বারি-সিনড্রোম) আক্রান্ত এক নারী রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে থেরাপিউটিক প্লাজমা পরিবর্তনের যুগে প্রবেশ করলো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। এতদিন আধুনিক ব্যয়বহুল এ চিকিৎসা শুধু রাজধানী ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে করা হলেও চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রথম চট্টগ্রামে এই কার্যক্রম শুরু করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এতদিন জিবিএস (প্যারালাইসিস) আক্রান্ত রোগীদের ওষুধ ও থেরাপির মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হলেও তাতে অন্তত ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হতো। তবে ওষুধের পরিবর্তে থেরাপিউটিক প্লাজমা পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগীরা সুস্থ হয়ে ওঠছেন। এক্ষেত্রে একজন রোগীর সরকারি হিসেবে সর্বসাকূল্যে দুই লাখ টাকা ব্যয় হবে। যদিও সরকারিভাবে কিট সরবরাহ করা গেলে এ সংখ্যা আরও কমে আসবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।

জানা যায়, গতকাল (বুধবার) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি অঞ্জনা রানী নামে (৩৮) এক রোগীর শরীরে এ আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে প্লাজমা পরিবর্তন করা হয়। নিউরোমেডিসিন বিভাগের আওতাধীন ওই রোগীর শরীরে এ চিকিৎসা প্রদান করেন হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা জানান, জিবিএস হলো ইমিউন প্রতিক্রিয়াজনিত রোগ। ক্যামপাইলো ব্যাকটার জিকুনি নামক একটি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের পর জিবিএস দেখা দেয়। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই আকস্মিকভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে যাওয়াসহ চলাফেরার সক্ষমতা হারায়। মূলত অপরিচ্ছন্নতা ও কীটনাশকযুক্ত খাবার গ্রহণ এবং সঠিক স্বাস্থ্যশিক্ষার অভাবে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন অনেকেই। এ রোগ থেকে বাঁচার জন্য আধুনিক দুটি পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। তারমধ্যে একটি হচ্ছে থেরাপিউটিক প্লাজমা পরিবর্তন এবং আরেকটি হচ্ছে ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন থেরাপি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইঞ্জেকশন, প্লাজমা একচেঞ্জের মাধ্যমে রোগের জটিলতা কমানো বা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় বেশিরভাগ সময়ে। বেসরকারিভাবে থেরাপিউটিক প্লাজমা পরিবর্তনে (পাঁচবার) প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়। চমেক হাসপাতালে পাঁচ দফায় এই ৫টি থেরাপি শুধুমাত্র ২৫ হাজার টাকায় করা যাবে। আনুষঙ্গিকসহ এ চিকিৎসায় ব্যয় হয় সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা।

ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. তানজিলা তাবিব চৌধুরী বলেন, ‘থেরাপিউটিক প্লাজমা পরিবর্তনের মতো আধুনিক চিকিৎসা প্রদানে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের এখন সক্ষমতা রয়েছে। তবে এ চিকিৎসা পদ্ধতির যে কিট রয়েছে, তার দাম বেশি হওয়ায় রোগীদের খরচও বেড়ে যায়। যার কারণে বর্তমানে দুই লাখ টাকার প্রয়োজন হচ্ছে। তবে সরকারি সহায়তা পেলে এই খরচ অর্ধেকের নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব।

এদিকে, প্রথমবারের মতো আইসিইউতে থাকা জিবিএস রোগীর শরীরে থেরাপিউটিক প্লাজমা পরিবর্তনের সময় উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান, নিউরোমেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হাসানুজ্জামান, এনেস্থিসিয়া এবং আইসিইউ বিভাগের প্রধান ডা. মো. হারুন উর রশীদ, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. তানজিলা তাবিব চৌধুরী প্রমুখ।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, চিকিৎসা সেবায় এটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য একটি মাইলফলক। এই চিকিৎসার খরচ আরও কমিয়ে আনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।

 

 

পূর্বকোণ/এ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট