চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইউরোপে মুড়ি ও সুগন্ধি চাল রপ্তানিতে নতুন শর্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১২:৫২ অপরাহ্ণ

সম্প্রতি ইউরোপের এক নতুন শর্তের কারণে বাংলাদেশ থেকে মুড়ি ও সুগন্ধি চাল (এরোমেটিক রাইস) যেমন- বাসমতি, চিনিগুঁড়া, গোবিন্দভোগ ইত্যাদি রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের শর্ত অনুযায়ী মুড়ি ও চালে ট্রাইসাইক্লাজল ও কার্বেন্ডাজিম নামের দুটি রাসায়নিক স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে এমআরএল লেভেল (ম্যাক্সিমাম রেডিয়াস লেভেল) বেশি পরিমাণে থাকলে তা ইউরোপের দেশগুলো ওই পণ্যগুলো গ্রহণ করবে না।

সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে মুড়ি ও সুগন্ধি চাল রপ্তানি হওয়া কিছু পণ্যে ওই দুই রাসায়নিক মাত্রা অতিরিক্ত লেভেলে পাওয়ায় রপ্তানির ক্ষেত্রে এই সতর্ক বার্তা এসেছে। যা নিঃসন্দেহে দেশের এ জাতীয় পণ্যগুলো রপ্তানিকারকদের কাছে হুমকি স্বরূপ বলছে ব্যবসায়ীরা। এতে চট্টগ্রাম থেকে নিয়মিত রপ্তানি হওয়া এসব পণ্যের রপ্তানিকারকগণ আরো সমস্যায় পড়েছেন। কারণ এ ধরনের পরীক্ষা করতে যেতে হবে ঢাকায়। আর একটি নমুনা পরীক্ষা করে রেজাল্ট পেতে লাগে ৪/৫দিন।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের (প্লান্ট কোয়ারেন্টাইন স্টেশন) প্যাথলজিস্ট সৈয়দ মুনিরুল হক পূর্বকোণকে বলেন, সামনে মুসলমানদের পবিত্র মাস মাহে রমজান। এই রমজানের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ইফতার। আর ইফতারের অন্যতম উপাদান মুড়ি। রমজানকে সামনে রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সময়ে মুড়ি রপ্তানি করা হয়। ইউরোপে রপ্তানিকৃত মুড়িতে উচ্চমাত্রায় ট্রাইসাইক্লাজল ও কার্বেন্ডাজিম নামক কিটনাশকের উপস্থিতি পাওয়ায় মুড়ি রপ্তানিতে নতুন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ এই দুটো রাসায়নিকের উপস্থিতি পরীক্ষা করে তা ইউরোপের নির্ধারিত গাইডলাইন অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যে থাকলেই রপ্তানি করার সুযোগ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে সরকার স্বীকৃত ল্যাবরেটরি থেকে উল্লিখিত দুটি রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট ইউরোপের নির্ধারিত রেঞ্জের মধ্যে থাকলেই রপ্তানি করার সুযোগ রয়েছে। তাই এখনই কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেগুলো হলো- অল্প সময়ে এবং সুলভ মূল্যে ল্যাবরেটরি টেস্ট নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত টেস্ট করার জন্য রেপিড ডিটেকশন কিট মেথড অনুসরণ করা যায় কিনা তাও ভেবে দেখা দরকার। রপ্তানির সাথে সমস্ত অত্যাবশ্যকীয় টেস্ট সরকার স্বীকৃত ল্যাবগুলোতে একটি নির্ধারিত মূল্য তালিকা ও কত কম সময়ের মধ্যে এই রিপোর্ট প্রদান করা যায় সেটাও নির্ধারণ করা দরকার। তা-না হলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমাদের বাজার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এ দেশগুলো দখল করবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

তবে ইউরোপের নতুন গাইডলাইন মেনে রপ্তানি করতে গেলে চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকগণ তাদের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ী মহল।

প্রসঙ্গত, দেশে এখনো কৃষিকাজে পোকা-মাকড় তাড়াতে উচ্চ মাত্রার কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। যা আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাণিজ্যে একটি বড় বাধা। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে কীটনাশকের রেডিয়াস মাত্রা সহনীয় রাখতে কঠোরভাবে কোয়ারেন্টাইন পরীক্ষা করা হয়। এই সমস্যায় এখন ইউরোপে দেখা দিয়েছে। ভবিষ্যতে বিষয়টি মাথায় না রাখলে অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডাসহ উন্নত বিশ্বের ক্ষেত্রেও সতর্কতা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

পূর্বকোণ/এএস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট