চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

কর্মচাঞ্চল্য কমেছে অফডকে

সারোয়ার আহমদ

৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ | ১১:১২ পূর্বাহ্ণ

করোনা মহামারীর সময় যখন চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কানায় কানায় কনটেইনারে পূর্ণ হয়ে বন্দরের অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল, ঠিক তখন চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছিল দেশের ১৯টি বেসরকারি অফডকের কারণে।

 

ওই সময় বন্দরের অভ্যন্তরে থাকা সব ধরণের পণ্যের কনটেইনার অফডক থেকে খালাসের অনুমতি দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এর প্রেক্ষিতে বিদ্যমান ৩৮ ধরণের পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের পাশাপাশি সব ধরণের পণ্যের কনটেইনার পাঠানো হয়েছিল অফডকে। এতে করে রেহাই পেয়েছিল বন্দর।

 

এদিকে, ৩৮ ধরণের নির্ধারিত পণ্য খালাসের জন্য অফডককে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, দু’বছর আগে নানা কারণে সেই একই সুযোগ দেয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরকেও। তবে তা ছিল সীমিত সময়ের জন্য। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বন্দরের দ্বৈত খালাসের এই সুযোগ সর্বশেষ ১০ দফা বাড়িয়ে আগামী ৩১ মার্চ নির্ধারণ করা হয়েছে। যেটির মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল। গত ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ তফছির উদ্দিন ভূঁঞা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই অনুমতি দেন।

 

অন্যদিকে, প্রায় গত দুই বছর যাবত দু’একটি বিছিন্ন ঘটনাকে ইস্যু করে ক্রমাগত অফডকের পণ্য নিয়মিত ৩৮ ধরণের আমদানি পণ্যকে বন্দর থেকে দ্বৈত খালাস দেওয়ার অনুমতি দেওয়ায় কোনঠাসা হয়ে পড়ছে অফডকগুলো। বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কাজ না থাকায় কয়েক মাসেই প্রায় ২৫ শতাংশ কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমে গেছে অফডকগুলোতে।

 

ফলে বন্দর থেকে ৩৮ ধরণের পণ্য খালাস স্থগিত রাখতে বার বার চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে অফডকগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর্টস এসোসিয়েশন (বিকডা)। কিন্তু তাদের আবেদন আমলে না নিয়ে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের আবেদনকে প্রধান্য দিয়ে অফডকের পণ্য বন্দর থেকে দ্বৈত খালাসের সময় পুনরায় বৃদ্ধি করা হলো।

 

এদিকে, পাশের দেশ ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের বন্দরগুলোতে পণ্য ডেলিভারি হয় বন্দরের বাইরে বিভিন্ন অফডক থেকে। শুধুমাত্র বাংলাদেশে বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারির নিয়ম চালু রয়েছে। আর বন্দর থেকে ডেলিভারি চালু থাকায় শহরের মধ্য দিয়ে প্রচুর ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানকে বন্দরে প্রবেশ করতে হয়। ফলে সৃষ্টি হয় যানজট। এসব মাথায় রেখে পণ্য ডেলিভারি কার্যক্রম শহরের বাইরে রাখতে চট্টগ্রাম বন্দরের ২০ কিলোমিটারের বাইরে অফডক স্থাপনের বিধানও রাখা হয় আইসিডি নীতিমালায়। কিন্তু তাও অফডক রেখে পণ্য খালাস বন্দরে আনা হচ্ছে।

 

বর্তমানে ১৯টি বেসকারি অফডকে কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৭৬ হাজার টিইইউস। যেখানে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এর সাথে যুক্ত রয়েছে প্রায় ২০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। অফডক থেকেই শতভাগ রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয় এবং তৈরি পোশাক ছাড়া ৩৮ ধরণের আমদানি পণ্য হান্ডলিং করা হয়। কিন্তু এসব অফডক থেকে আগে যেখানে প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার টিইইউস কনটেইনার শিপমেন্ট করা হতো সেখানে বর্তমানে তা নেমে এসেছে ১৫শ থেকে ১৭শ টিইইউসে।

 

এ প্রসঙ্গে বিকডা সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান পূর্বকোণকে বলেন, করোনার মহামারীর মধ্যে অফডকগুলো ৩৮ ধরণের পণ্য ছাড়াও সব ধরণের পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করেছে। সে সময় একমাসে প্রায় ৪৫ হাজার টিইইউস কনটেইনার কোন ধরণের সমস্যা ছাড়াই হ্যান্ডলিং করেছে।

 

অর্থাৎ অফডকগুলোর যে সক্ষমতা আছে তারই প্রমাণ দিয়েছে। অথচ এখন মাসে প্রায় ২০ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং করার পরেও অফডকের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে বড় করে দেখিয়ে কাস্টমসের কান ভারি করা হচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে বার বার অফডকের ৩৮ ধরণের আমদানি পণ্য বন্দর থেকেও দ্বৈত খালাসের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। গত দুই/আড়াই বছরে এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের জানানো হতো। সভা ডাকা হতো। কিন্তু গত দেড় বছরে কোন সভা ছড়াই একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

 

তিনি আরো বলেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলার সংকটের কারণে এমনিতেই ব্যবসা বাণিজ্যে ভাটা চলছে। আমদানি রপ্তানি কমে যাচ্ছে। ঠিক এই মুহূর্তে অফডকের পণ্য দ্বৈত খালাস দেওয়ার নিয়ম চালু রাখলে অফডকগুলো টিকে থাকার ঝুঁকিতে পড়বে। কারণ অফডকের সাথে কর্মরত ২০ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীর ভাগ্য জড়িত।

 

পূর্বকোণ/আর

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট