চট্টগ্রাম বুধবার, ২২ মে, ২০২৪

অর্থনীতি ও পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে বাস্তবমুখী বাজেট পরিকল্পনা চাই

১ মে, ২০২৪ | ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

অন্যান্য বছরের তুলনায় আগামী বাজেট প্রণয়নে বৈশ্বিক পরিবেশ বিপর্যয়, যুদ্ধ বিগ্রহসহ আর্থিক ভারসাম্যহীনতাকে সামনে রেখে বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে ইতোমধ্যে সরকারও নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে প্রতীয়মান। বাস্তব ও সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বাজেট পরিকল্পনা করা হলে বৈশ্বিক অনেক বৈরিতা থেকে জন-মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব। এক্ষেত্রে রেমিটেন্স যোদ্ধা, কৃষক, খেটে খাওয়া মানুষসহ তরুণ সমাজকে উজ্জীবিত করার তাগিদ ও পরিবেশ সংরক্ষণ করে দেশের বর্তমান উন্নয়ন ধারাকে আরও বেগবান করা সম্ভব। এছাড়াও অর্থনীতির বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব।

 

আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২৪-২০২৫ প্রসঙ্গে পূর্বকোণ প্রতিনিধির সাথে ‘বাজেট ভাবনা’ নিয়ে আলোচনায় বাংলাদেশ মিয়ানমার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এস এম নূরুল হক এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ অতি পুরাতন প্রচলিত এই প্রবাদ বাক্যকে বাস্তবায়ন করা হলে প্রতিটি গ্রামে একটি সজীব ও সবুজের সমারোহ হতে পারে, যা অর্থনৈতিক ও পরিবেশ উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। ফলে বিদেশ নির্ভর খাদ্য আমদানি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। উন্নয়ন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সামগ্রিক অগ্রগতির প্রক্রিয়াকে বুঝায়। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুরক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা থাকা একান্ত জরুরি যাতে জীব-বৈচিত্র্য ও সামাজিক পরিবেশের ভারসম্য বজায় থাকে। সুতরাং এখন বাস্তবতা হলো টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা। আর সেটা অর্জনের অন্যতম বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে পরিবেশ ও জলবায়ু। অর্থাৎ মানুষ, পশুপাখি, প্রাণিসম্পদ, উদ্ভিদ ইত্যাদির জন্য সার্বজনীনভাবে টিকে থাকার যথার্থ একটি বসবাসযোগ্য বিশ্ব গড়ে তোলা।

শিল্পায়নের কারণে পরিবেশের ভারসম্যে যেন বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি না হয়, জীব-বৈচিত্র্যে বিপর্যয় না আসে, দূষণ না ঘটে, মানুষের কর্মক্ষমতা নষ্ট না হয়, সে বিষয়টি আমাদেরকে পরিবেশ রক্ষা, দূষণরোধে কার্যকর ও সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা থাকতে হবে।

 

দক্ষ জনশক্তি, পেশাদারিত্ব, মানুষের কর্মক্ষমতা, আয়ুষ্কাল ইত্যাদি উন্নত করার মাধ্যমে যেভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব, এমনিভাবে শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা জরুরি। তবে লক্ষণীয় যে, সামাজিক সুরক্ষায় মানুষের মৌলিক চাহিদা তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার সাথে পরিবেশ ও তথ্য প্রযুক্তি খাতকে অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যদিকে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শিল্প বিপ্লবের ফলে বেকারত্ব ও কর্মহীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করার ক্ষেত্রে প্রধান হাতিয়ার। একটি সমন্বিত বাস্তবমুখী কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। যেমন জীবন জীবিকার সুন্দরতম সহবস্থান মানুষকে যেন কর্মদ্যোগী করে তোলে।

 

বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর আয়ের খাত যেমন আউটসোর্সিং-ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। আউটসোর্সিয়ের কোন পরিধি নেই। এটি এখন বিশাল জগৎ ও ইন্ডাস্ট্রি। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের টেকনিক্যাল সহায়তা বাড়াতে হবে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির প্রসঙ্গ আসলেই প্রথমেই আসবে বন্দরনগরী বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের কথা। চট্টগ্রামকে সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে মনে করলে এখানে ব্যাপক প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত সংস্কার সাধন করতে হবে। যোগাযোগ, পর্যটন ইত্যাদি ঢেলে সাজাতে হবে। চট্টগ্রামে নতুন নতুন যে সকল শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে, তার সুফল পেতে হলে গতিশীল সড়ক, নৌ ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন ও চট্টগ্রাম বন্দরকে এর আওতায় আনতে হবে। চট্টগ্রামের সহিত বহির্বিশ্বের যোগাযোগ সহজতর করার লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশের সহিত আর্ন্তজাতিক ফ্লাইট সরাসরি চালু করা এখন সময়ের দাবি। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামকে একটি উন্মুক্ত ও নিরাপদ বিনিয়োগ স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সকল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে সকল বাণিজ্যিক কার্যক্রম সহজ করার লক্ষ্যে চট্টগ্রামে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রলায়ের আলাদা কার্যালয় স্থাপন খুবই জরুরি।

 

দেশের প্রধান প্রধান রপ্তানি খাতসমূহকে প্রণোদনা বা বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা, প্রবাসীদের আস্থা অর্জনে ব্যাংকগুলোকে অধিকতর সেবামুখী করা, কারিগরি শিক্ষাখাত সুলভ করা, পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা, সর্বোপরি অনুৎপাদনশীল খাতে অপ্রয়োজনীয় ও অত্যাধিক ব্যয় বন্ধ করে সম্পদের অপচয় রোধ করার সর্বিক ও কার্যকর পরিকল্পনা এ বাজেটে পাবো আশা রাখি। বহির্বিশ্বে নতুন নতুন বাজার অন্বেষণ এবং নতুন নতুন পণ্যের চাহিদা মাফিক দেশীয় শিল্পের উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে যথাযথ প্রণোদনা থাকা জরুরি।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট