চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি শিক্ষার দুয়ার খুলছে চট্টগ্রামে

মিজানুর রহমান

১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ | ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ

শেষ হচ্ছে অপেক্ষার পালা। যাত্রা শুরু হচ্ছে চট্টগ্রামের প্রথম বিশেষায়িত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়- চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি’র (সিবিইউএফটি)। আগামী জানুয়ারির শেষ সপ্তাহেই একাডেমিক কার্যক্রম চালু করবে এই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে ক্লথিং ও ফ্যাশন টেকনোলজি এবং ফ্যাশন ও এপারেল ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করতে ঢাকায় ছুটতে হবে না আর। চট্টগ্রামেই মিলবে এসব বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ।

 

নগরীর খুলশী থানার ঝাউতলা এলাকায় বিজিএমইএ ভবনের পঞ্চম, নবম এবং দশম তলার প্রায় ৩৭ হাজার বর্গফুট জায়গায় সিবিইউএফটি’র একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। পর্যায়ক্রমে আরও বাড়বে এই পরিসর। ক্লথিং ও ফ্যাশন টেকনোলজি, ফ্যাশন ও এপারেল ডিজাইন এবং টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে দেশের খ্যাতিমান শিক্ষকরা সিবিইউএফটি’র ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

 

কোন বিভাগে কত আসন : বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- শুরুতে ২টি অনুষদের অধীনে ৪টি বিষয়ে স্নাতক করার সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। এরমধ্যে ক্লথিং ও ফ্যাশন টেকনোলজি অনুষদের অধীনে টেক্সটাইল এন্ড ক্লথিং টেকনোলজি এবং ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড টেকনোলজি বিষয়ে বিএসসি করা যাবে। এছাড়া ফ্যাশন ও এপারেল ডিজাইন অনুষদের অধীনে এপারেল মার্চেন্ডাইজিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট এবং ফ্যাশন ডিজাইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

 

একটি বিভাগে ২টি সেকশনে ৩৫ জন করে ৭০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন। ৪টি বিভাগে পড়াশোনার সুযোগ পাবেন মোট ২৮০ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া আগামী জুলাই থেকে চালু করা হবে টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধীনে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট নামে আরও ২টি নতুন বিভাগ। চালু হলে এসব বিভাগে পড়াশোনার সুযোগ পাবেন আরও ১৪০ জন শিক্ষার্থী।

 

মিলবে আন্তর্জাতিক সব সুবিধা :

দেশীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলেও সিবিইউএফটিতে আন্তর্জাতিক মানের সব সুবিধাই পাবেন শিক্ষার্থীরা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল ক্লাসরুম, অত্যাধুনিক সুবিধার ল্যাবরেটরি, স্যুইং ল্যাব, টেক্সটাইল টেস্টিং ল্যাব, ফ্যাশন ডিজাইনিং স্টুডিও, উচ্চ ক্ষমতার ফ্রি ইন্টারনেট, আন্তর্জাতিক জার্নাল সমৃদ্ধ লাইব্রেরি থেকে শুরু করে বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ রয়েছে সিবিইউএফটিতে। থাকবে প্রজেক্টর, মাল্টিমিডিয়ার মতো শিক্ষা সহায়ক উপকরণও।

 

নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশে পড়াশোনার পাশাপাশি সিবিইউএফটি’র শিক্ষার্থীরা পাবেন চট্টগ্রামের সেরা পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইন্টার্নশিপের সুযোগ। নামী পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসা বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময়ের সুযোগও পাবেন তারা। এছাড়া ভালো ফল করলে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পাশাপাশি মিলবে দেশের সেরা পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরাসরি কাজ করার সুযোগ।

 

ইনস্টিটিউট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় :

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত পোশাক শিল্পের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে ২০ বছর আগে পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স চালু করে চট্টগ্রাম বিজিএমইএ। চাহিদা বাড়ায় ২০১৩ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চালু করা হয় চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি (সিবিআইএফটি)। গত ৯ বছরে এখান থেকে কয়েকশ শিক্ষার্থী ডিগ্রি নিয়ে এখন দেশ-বিদেশের নামি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।

 

ফ্যাশন ও টেকনোলজি নিয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ অবারিত করতে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি’র (সিবিআইএফটি) পরিবর্তে চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি (সিবিইউএফটি) চালুর সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট দেশের ১০৬তম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।

 

খুলবে শিক্ষার নতুন দুয়ার :

চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি’র (সিবিইউএফটি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পনগর হচ্ছে মিরসরাইয়ে। টানেল ঘিরে কর্ণফুলীর ওপারে বড় বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে। সেখানে বিপুল দক্ষ মানবসম্পদ প্রয়োজন। পাশাপাশি তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলায় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিকল্প নেই।

 

তিনি বলেন, এতোদিন ক্লথিং ও ফ্যাশন টেকনোলজি এবং ফ্যাশন ও এপারেল ডিজাইন নিয়ে ভালোমানের প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার জন্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের ঢাকায় ছুটতে হতো। নানা কারণে সবাই সেটা পারতেন না। ফলে অনেক সম্ভাবনাময়ী শিক্ষার্থী বিশেষ করে নারীরা পিছিয়ে পড়তেন। অনেকের স্বপ্ন অধরা থেকে যেত। সিবিইউএফটি চালুর ফলে এখন ঘরের কাছেই বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারবেন তারা। এক কথায় বলা যায়, চট্টগ্রামে ফ্যাশন ও টেকনোলজি শিক্ষার নতুন দুয়ার খুলে যাবে।

পূর্বকোণ/আর

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট