চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বন্যায় কেড়ে নিল শতাধিক প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

২৭ জুলাই, ২০১৯ | ২:১১ পূর্বাহ্ণ

অতি বৃষ্টিতে বাংলাদেশের বড়-বড় নদ-নদীর পানিপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উজান (ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও কুশিয়ারা) থেকে নামা ঢলে বন্যাকবলিত জেলাগুলির মানুষের দুর্ভোগ দিনদিন বেড়েই চলেছে। গত মঙ্গলবার থেকে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে ঠেকেছে। সরকারের তরফে এ সব বন্যাদুর্গত অঞ্চলে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হলেও রোগ বালাই ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। এবারের বন্যায় দুই সপ্তাহে পানিতে ডুবে, সাপের কামড়ে বা পানিবাহিত রোগে শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। বন্যার কারণে দুর্ভোগের পর এখন প্রতিদিন বহু মানুষ বিভিন্ন রোগের শিকার হচ্ছেন। এরই মধ্যে সাড়ে ১১ হাজার মানুষ ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবার টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ২৮ জেলায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব জেলার ৭০টি উপজেলাকে ‘দুর্গত এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রায় আড়াই হাজার মেডিকেল টিম কাজ করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেল্থ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, ১০ জুলাই থেকে দুর্গত এলাকায় বিভিন্ন কারণে (ডায়রিয়া, সাপে কাটা, পানি ডোবা ইত্যাদি) ১০১ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে জামালপুরে মারা গেছেন সর্বোচ্চ ৩৩ জন, নেত্রকোণায় ১৬ জন, চট্টগ্রামে একজন, কক্সবাজারে একজন, বগুড়ায় চারজন, গাইবান্ধায় ১৭ জন, লালমনিরহাটে চারজন, নীলফামারীতে দুজন, সুনামগঞ্জে পাঁচজন, কুড়িগ্রামে পাঁচজন, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুজন করে, টাঙ্গাইলে সাতজন এবং ফরিদপুরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পানিতে ডুবে ৮৩ জনের, বজ্রপাতে সাতজনের, সাপের কামড়ে আটজনের, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে একজন এবং অন্যান্য কারণে দুজনের মৃত্যু রয়েছে।
অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষ জানায়, গেল দুই সপ্তাহে ১১ হাজার ৩৫৩ জন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ২৯৫ জন অসুস্থ হয়েছেন; তাদের সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, আগামীকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, ভারতের আসাম, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল ও মেঘালয়ের বিভিন্ন স্থানে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের শঙ্কা রয়েছে।
দেশের নদনদীগুলোর ৯৩টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে এখনো ১৮টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। গত বুধবার ৪৩টি পয়েন্টে পানি কমেছে, বেড়েছে ৪৬টি পয়েন্টে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে; সেই সঙ্গে অবনতি হচ্ছে মধ্যাঞ্চলে। সার্বিকভাবে আগামী সপ্তাহের শেষে এ দফার বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। তবে উজানে আগামী কয়েক দিন বৃষ্টি থাকলে সেই উন্নতি বিলম্বিত হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট