চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

প্রতীকী ছবি

মিয়ানমারের ১০ স্বর্ণবার কোথা থেকে এলো

নাজিম মুহাম্মদ

২৭ আগস্ট, ২০২১ | ১২:৫৭ অপরাহ্ণ

ডাকাতির পর গোয়েন্দা কর্মকর্তার বাসা থেকে উদ্ধার করা ১৫ স্বর্ণবারের মধ্যে দশটি মিয়ানমারের। তবে হাজারী গলির ব্যবসায়ী গোপাল কান্তি দাসের দাবি-উদ্ধার করা ১৫ স্বর্ণবারের মধ্যে মিয়ানমারের লেখাযুক্ত দশটি তার নয়। নগরীর হাজারী গলির স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল কান্তি দাসের কাছ থেকে গত ৮ আগস্ট ফেনী গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০টি স্বর্ণবার ডাকাতি করা হয়। দুবাই থেকে অবৈধ ও বৈধভাবে বাংলাদেশে স্বর্ণবার আসার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। তবে গত ৯ আগস্ট উখিয়াতে রোহিঙ্গা শরণার্থী জয়নালের কাছে পাওয়া ৩৩টি স্বর্ণবারের সাথে ফেনীতে ডিবি পুলিশের ডাকাতি করা দশটি স্বর্ণবারের হুবহু মিল রয়েছে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বৈধভাবে স্বর্ণ আসার নিয়ম নেই। স্বর্ণকার গোপাল মিয়ানমারের তৈরি স্বর্ণবারের বৈধ কাগজ কিভাবে দিল তা খতিয়ে দেখছে ফেনী পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত ৯ আগস্ট উখিয়া টেলিভিশন উপ-সম্প্রচার কেন্দ্র এলাকা থেকে ৩৩টি স্বর্ণের বারসহ জয়নাল আবেদিন নামে এক রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করেছিল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। এ ব্যাপারে বিজিবির নায়েক মো. নুর উদ্দিন বাদী হয়ে গত ৯ আগস্ট উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৩৩টি স্বর্ণবার নিয়ে ধরা পড়া জয়নাল আবেদিন (৬৫) মিয়ানমারের মংডুর মৃত ফজর আহম্মদের ছেলে। তুমব্রু সীমান্তের কোনার পাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে থাকে। ৯ আগস্ট ভোর আনুমানিক পাঁচটায় জয়নাল পায়ে হেটে তুমব্রু এলাকা থেকে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সড়ক দিয়ে কুতুপালং বাজারের দিকে যাচ্ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জয়নালের কোমরে লুঙ্গির ভাঁজ ও অপর একটি লুঙ্গির পকেট থেকে ৩৩টি স্বর্ণের বার উদ্ধার হয়। পরে তাকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। উদ্ধার হওয়া প্রতিটি স্বর্ণবারের ওজন ছিল ১৬৬ গ্রাম। মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা বিজিবির উদ্ধার করা ৩৩ স্বর্ণবারের সাথে ফেনীতে উদ্ধার হওয়া দশটি স্বর্ণবারের মিল রয়েছে। স্বর্ণবারগুলো একই ওজনের।
ফেনী গোয়েন্দা পুলিশের বিশটি স্বর্ণবার ডাকাতির ঘটনায় গত ১০ আগস্ট ফেনী মডেল থানায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল কান্তি দাসের দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ফেনী মডেল থানার ওসির নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সাইফুল ইসলামের বাসার বেডরুমের আলমিরার নিচের তাক-এ থাকা কালো ব্যাগ থেকে কালো স্কচ টেপ মোড়ানো ১৫ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। ১৫টি স্বর্ণবারের মধ্যে পাঁচটির ওজন ১১৬ দশমিক ৫৬ গ্রাম। বাকি দশটির ওজন ১৬৬ গ্রাম। স্বাভাবিকভাবে দুবাই থেকে আসা স্বর্ণবারের চেয়ে দশটি স্বর্ণবারের প্রত্যেকটির ওজন ৪৯ দশমিক ৪৪ গ্রাম বেশি। আর দশটি স্বর্ণবারের গায়ে মিয়ানমারের অক্ষর খোদাই করা রয়েছে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফেনী পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানান, গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাইফুলের কাছ থেকে উদ্ধার করা ১৫টি স্বর্ণবারের মধ্যে ১০টিতে মিয়ানমারের অক্ষর খোদাই করা রয়েছে। দশটি বারের ওজনও অন্য পাঁচটির চেয়ে বেশি। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বৈধভাবে স্বর্ণবার বাংলাদেশে আসার রেওয়াজ নেই। দশটি স্বর্ণবারের বিষয়ে মামলার বাদীর সাথে কথা বললে আমরা পরিষ্কার একটি ধারণা পাবো।
এদিকে, স্বর্ণবার ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নগরীর কেসিদে রোড থেকে গত ১৪ আগস্ট ছমদুল হক ভুট্টো নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় ফেনী মডেল থানা পুলিশ। গত ১৫ আগস্ট ফেনী আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ছমদুল বলেন, গোপাল এক সময় তার ব্যবসায়িক পার্টনার ছিল। ২০টি স্বর্ণবার নিয়ে গোপালের ঢাকায় যাবার বিষয়টি ছমদুলের জানা ছিল। বিষয়টি তিনি এক ব্যক্তির মাধ্যমে ফেনী গোয়েন্দা পুলিশকে জানান। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ১৫টি স্বর্ণবার রেখে পাঁচটি গোপালকে ফেরত দেয়। গোপাল চট্টগ্রামে ফিরে পুরো বিষয়টি ছমদুলকে জানান। ছমদুল তার জবানবন্দিতে জানান, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া বেশির ভাগ স্বর্ণবার কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকা দিয়ে মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আনা হয়।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে স্বর্ণব্যবসায়ী মামলার বাদী গোপাল কান্তি দাস জানান, গোয়েন্দা কর্মকর্তার বাসা থেকে যে ১৫টি স্বর্ণবার উদ্ধার করা হয়েছে তার মধ্যে মিয়ানমারের লেখাযুক্ত স্বর্ণবারগুলো আমার নয়। বাকি পাঁচটি আমার। আমার স্বর্ণবারগুলো সাদা টেপ মোড়ানো ছিল। কিন্তু যেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে তা কালো টেপ মোড়ানো ছিল।
গোপাল বলেন, আমার ঢাকায় যাবার বিষয়টি ছমদুল জানতো। ছমদুল ফিরোজ আহমদ নামে এক পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে ফেনী গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের খবরটি দেন। ফিরোজ আহম্মদ প্রসঙ্গে পিবিআই পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, ফিরোজ অসুস্থ। ফেনীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ডাকাতির ঘটনায় তার জড়িত থাকার বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফিরোজ নগর গোয়েন্দা পুলিশে কর্মরত ছিল। নয়মাস আগে তাকে বরিশাল রেঞ্জে বদলি করা হয়। তবে তিনি নিয়মিত চট্টগ্রামেই থাকতেন। মামলার এজাহারে ১৫ স্বর্ণবার উদ্ধার করা প্রসঙ্গে গোপাল দাবি করেন, ফেনী মডেল থানার উপ পরিদর্শক মনির এজাহারটি লিখেছেন। ওই সময় ১০টি স্বর্ণবারের বিষয়ে আমি আপত্তি করেছিলাম, কিন্তু তারা শুনেনি। উদ্ধার করা স্বর্ণবারের মধ্যে পাঁচটি আমার বাকি দশটি আমার নয় এমনটি দাবি স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপালের।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট