চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

চট্টগ্রামে শয্যা খালি নেই কোথাও

ইমাম হোসাইন রাজু

৯ জুলাই, ২০২১ | ১১:১২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে চাপ বেড়েছে হাসপাতালে। প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। যে কারণে খালি নেই কোন শয্যা। এ পরিস্থিতিতে বেসরকারি বৃহৎ চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র মা ও শিশু হাসপাতালে বাড়ানো হয়েছে আরও ২০ শয্যা।
শুধু এই দুই হাসপাতালেই নয়, গেল কয়েকদিন ধরে নগরীর সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেই রোগীর ঢল নেমেছে। করোনাকালীন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সেবাদানকারী ছয়টি হাসপাতালে খালি নেই কোন শয্যা। বাকি যে হাসপাতালে শয্যা আছে, তাও কয়েক দিনের মধ্যে পূর্ণ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করে বলছেন, সংক্রমণ বাড়তে থাকলে সামনের পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ২০৬ টি সাধারণ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিল ২১৬ জন। অর্থাৎ শয্যার চেয়েও বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে এ হাসপাতালে। কোভিড চিকিৎসায় বেসরকারি পর্যায়ের বৃহৎ কেন্দ্র চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ১২১ সাধারণ শয্যার বিপরীতে গতকাল রোগী ভর্তি ছিল ১২৩ জন। আর ১৯ শয্যার আইসিইউ’র সবগুলোই রোগীপূর্ণ। এ হাসপাতালেও কোন শয্যা খালি নেই। শয্যা খালি নেই হালিশহরে অবস্থিত আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতালেও। এই হাসপাতালের ৪৩ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ৪৬ জন। বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের ৫০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ৫০ জন। ১০ আইসিইউ’র সবগুলোতেও রোগী ভরপুর। বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালের চিত্রও একই অবস্থা। ৫৬ শয্যার বিপরীতে বর্তমানে রোগী ভর্তি আছে ৬৬ জন। খালি নেই তাদের আইসিইউ শয্যা। জিইসি মোড়ের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালেও কোন শয্যা খালি নেই। ৫০ শয্যার বিপরীতে এ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৫২ জন রোগী।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ন কবীর পূর্বকোণকে বলেন, ‘গেল কিছুদিন ধরেই রোগী বাড়ছে। সাধারণ শয্যার পাশাপাশি এইচডিইউ ও আইসিইউতেও চাপ রয়েছে। সাধারণ শয্যা ৩০০ পর্যন্ত উন্নীত করার জন্য পরিকল্পনা আগে থেকেই নেয়া আছে। তবে সেটি ম্যাট্রেস দিয়ে করতে হবে। যেহেতু হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন রয়েছে, তাতে সমস্যা হবে না। কিন্তু এই মুহূতে আইসিইউ শয্যা বাড়ানো যাবে না। তবে এইচডিইউ’র মাধ্যমে হয়তো কাজ চালিয়ে নেয়া যাবে।’
পরিচালক আরও বলেন, ‘সংক্রমণ বাড়লেই রোগী বেড়ে যাবে। কোন অবস্থাতে রোগী বাড়তে দেয়া যাবে না। তাই সাধারণ মানুষকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।’
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ট্রেজারার রেজাউল করিম আজাদ বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে সাধারণ শয্যা থেকে শুরু করে আইসিইউ শয্যাতেও রোগীতে ভরপুর। ইতোমধ্যে আরও ২০ শয্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যা গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে কাজ চলমান রয়েছে। তবে যেভাবে রোগী বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি অবনতির দিকেই যাচ্ছে।’
বেসরকারি ইমপেরিয়াল হাসপাতালের এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার মো. রিয়াজ হোসাইন পূর্বকোণকে বলেন, ‘আগে ৩৬ শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল। কিন্তু গেল কিছুদিন ধরে রোগী বাড়লে শয্যা ৫০ এ উন্নীত করা হয়। ইতোমধ্যে সবগুলো শয্যাও এখন ভরপুর। পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও ১৮ টি শয্যা বাড়ানো হচ্ছে। যা আগামী রবিবার থেকে চালু করা হবে।’
এদিকে, ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে ১৪টি ও জেনারেল খালি আছে ৪৯টি। বেসরকারি অন্য হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারগুলোর চিত্র আরও খারাপ। মেহেদিবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে ৪৪ শয্যার বিপরীতে ৪০ জন রোগী ভর্তি আছে। সিএসসিআর হাসপাতালে খালি আছে মাত্র একটি শয্যা। সাগরিকায় সিএমপি- বিদ্যানন্দ ফিল্ড হাসপাতালে শয্যা খালি আছে ১৬ টি এবং ন্যাশনাল হাসপাতালে আছে ১৪ টি শয্যা।
গেল তিনদিনের চিত্র তুলে ধরে জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব মাসুম বলেন, ‘প্রতিদিনই হাসপাতালে ২০ থেকে ২৫ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। যদিও কয়েকদিন আগে এমন চিত্র ছিল না। এতেই বুঝা যায়, পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে। মানুষ যদি এতেও না বুঝে কিংবা সচেতন না হয়, তাহলে কিছুই করার থাকবে না। বরং সংক্রমণ বাড়তেই থাকবে, হাসপাতালেও রোগীর চাপ বাড়বে। আর জায়গা না পেলে ভয়াবহতা সৃষ্টি হবে।’
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ও জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘জেনারেল হাসপাতালে শয্যার সমমান রোগীতে পরিপূর্ণ প্রায়। তবুও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, ২০০ শয্যা উন্নীত করতে পারবো। কিন্তু রোগী বাড়তে থাকলে তাতে সমস্যা হয়ে দাড়াবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও রোগী ভর্তি নেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ৪৫ জন রোগী ভর্তি ছিল বলেও জানান সিভিল সার্জন।’
এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাধারণ মানুষের প্রতি পরামর্শ দিয়ে ডা. আবদুর রব মাসুম বলেন, ‘করোনার মহামারী শুরু থেকেই বলা হয়ে আসছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করতে। কিন্তু মানুষদেড় বছর পরে এসেও উদাসীন। তাই এই মুহুর্তে উচিত, অন্তত ১৪ দিন ঘরে অবস্থান করা। কোন প্রয়োজন ছাড়া বের না হওয়া। একান্ত প্রয়োজনে বের হতে হলে, অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, ঘরে ফিরে গেলে সাবান দিয়ে হাত ধোয়াসহ গোসল করতে হবে।’

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট