চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

রামগড়: সাব্রুমের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও নামাজ পড়তেন বাইতুল আমান মসজিদে

নিজাম উদ্দিন লাভলু, রামগড়

৫ মে, ২০২১ | ১:৩৯ অপরাহ্ণ

প্রাচীন সাবেক মহকুমা শহর রামগড়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি ১০১ বছরে পদার্পণ করলো। ১৯২০ সালে স্থাপিত এ মসজিদে  নামাজ পড়তেন রামগড় ছাড়াও এর পার্শ্ববর্র্তী অবিভক্ত ভারতের ত্রিপুরার সাব্রুম এলাকার  ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ।

দেশ বিভক্তির পরেও  সাব্রুম মহকুমার মুসলিম চাকরিজীবীদের কেউ কেউ এখানে ঈদের নামাজ পড়তে আসতেন। বৃটিশ আমল থেকেই ফেনীনদীর দুই তীরের দুই মহকুমা শহর  রামগড় ও সাব্রুমের বাসিন্দাদের মধ্যে সম্প্রীতির এক অনন্য বন্ধন রয়েছে।  ফেনীনদীর কূলঘেঁষেই স্থাপিত হয়েছিল তদানিন্তন রামগড় মহকুমার সর্বপ্রথম এ মসজিদটি। মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মরহুম মুন্সি মজির উদ্দিন আহম্মদ।  তাঁর ছেলে সাবেক রামগড়  ই্উনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মুজিবুর রহমান বর্তমান মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তিনি এবং স্থানীয় প্রবীণরা জানালেন মসজিদ প্রতিষ্ঠার ইতিকথা। 

১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রামগড় থানাকে মহকুমায় উন্নিত করা হয় ১৯২০ সালে। বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলা সদর ছিল রামগড় মহকুমার মহালছড়ি থানাধীন গোলাবাড়ি ইউনিয়নের একটি গ্রাম মাত্র। অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম (রাঙ্গামাটি) জেলার অধীনে ছিল রামগড় মহকুমা। রামগড়ে তখনও বাঙালি মুসলমানদের বসতি শুরু হয়নি।

১৯২০ সালের গোড়ায় মুন্সি মজির উদ্দিন আহম্মদ ও চাঁন মিয়া দর্জিসহ কয়েকজন মুসলিম ফেনী থেকে রামগড়ে আসেন এলাকা দেখতে। তখনও এ পার্বত্য জনপদের সাথে সমতলের যোগাযোগ বা যাতায়াতের কোন রাস্তা ছিল না। ফেনীনদী পথেই নৌকায় যাতায়াত করতো রামগড় ও সাব্রুমের মানুষ। মুন্সি মজির উদ্দিন আহম্মদ ও তাঁর সঙ্গীরা রামগড়কে পছন্দ করলেন।

ব্যবসা করার উদ্দেশ্য নিয়ে তারা দ্বিতীয়বার রামগড়ে এসে আস্তানা গাড়েন ফেনীনদীর পাড়ে। মুন্সি মজির উদ্দিন বেচা বিক্রি করতেন মাটির তৈরি তৈজসপত্র আর চাঁন মিয়া করতেন দর্জির কাজ। নামাজ পড়ার প্রয়োজনীয়তায় মুন্সি মজির উদ্দিন তাঁর মাটির হাঁড়ি পাতিলের দোকানের এক পাশে ইবাদতের স্থান করেন। ্ইবাদতখানায় নামজ পড়তেন তারা। ইমামতি করতেন মুন্সি মজির উদ্দিন নিজে। এক সময় প্রয়োজনের তাগিদে বাঁশ ছনের ঝুপড়িঘরের মসজিদটি স্থানান্তর করা হয় বর্তমান স্থানে। ১৯৫০ সালে টিনের ছাউনির মসজিদটি ভেঙ্গে নির্মাণ করা হয় চুন-সুরকি দিয়ে।

মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দারা মসজিদটির নির্মাণে অর্থের জোগান দেন। মসজিদের পশ্চিম পাশে অবস্থিত রামগড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফেনী হতে বদলি হয়ে আসা মৌলভী শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ মোস্তফা ১৯৬৫ সালে ইমামতি শুরু করেন এখানে। একটানা ১৭ বছর তিনি ইমামতি করেন। জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধিতে এ মসজিদে মুসল্লির স্থান সংকুলানে দেখা দেয় সংকট। ১৯৮৩-৮৪ সালে তৎকালীন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুন্সি মজির উদ্দিন আহম্মদ ও সাধারণ সম্পাদক কবির আহম্মদ সওদাগর সকলের মতামত নিয়ে  পুরাতন মসজিদ ভবন ভেঙ্গে বর্তমান ভবনটি নির্মাণ করেন।

স্থানীয়দের অনুদানে স্থাপন করা হয় শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও সাউন্ড সিস্টেম। বর্তমান মসজিদের প্র্রধান খতিব মাওলানা মো. আব্দুল হক  দায়িত্ব পালন করছেন ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে। এছাড়া একজন মুয়াজ্জিন ও একজন খাদেম রয়েছেন। বর্তমানে ৪টি ব্যসেলর কোয়ার্টার থেকে মাসিক প্রায় ৬৫ হাজার টাকা আয় হয়। এ টাকায় ও  স্থানীয়দের দান-অনুদানে মসজিদের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করা হয়।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট