চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইভিএমেও নির্ঘুম রাত: ব্যালটের চেয়ে বেশি সময়!

নাজিম মুহাম্মদ

২৯ জানুয়ারি, ২০২১ | ৩:০০ অপরাহ্ণ

কথা ছিলো ই-ভোটিংয়ে মানুষের সময় অপচয় হবে কম। ব্যালট ভোটের মতো নয়-নির্বাচনী ফলাফল দেয়া হবে দ্রুত সময়ের মধ্যে। এবারের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে ইভিএমে। কিন্তু নির্বাচনী ফলাফলে দিতে গিয়ে ব্যালট ফলাফলের চেয়ে বরং কিছুটা সময় বেশি লেগেছে। শুধুমাত্র মেয়র প্রার্থীর ফলাফল দিতে সময় লেগেছে সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত দুটা পর্যন্ত, টানা সাত ঘণ্টা। রাতের বাকি সময় লেগেছে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের ফলাফল জানাতে। এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি নির্ঘুম রাত কেটেছে সংশ্লিষ্ট সকলের। বুধবার রাতে নগরীর জিমনেশিয়ামে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান।

এর আগে ২০১০ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নগরীর জামালখান ওয়ার্ডে পরীক্ষামূলক ইভিএমে ভোট নেয়া হয়েছিলো। গত সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ আসনে ইভিএমে ভোট নেয়া হয়। বড় পরিসরে তৃতীয়বারের মতো এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএমে ভোট সম্পন্ন হয়।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট প্রয়োগে মেশিন বা ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি অনুসৃত হয় বলে সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নামে পরিচিত। এর অন্য নাম ই-ভোটিং। একটি মেশিনে প্রায় চার হাজার ভোট দেয়া যায়। একটি ভোট দিতে আনুমানিক ১৪ সেকেন্ড সময় লাগে।
দেরী হওয়া প্রসঙ্গে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, কেন্দ্র থেকে যথাসময়ে কন্ট্রোল রুমে ফলাফল পৌঁছেছে। তবে সমন্বয় করতে সময় লাগছে।

ইভিএমের ভাল দিক : ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে যেসব সুবিধার কথা বলা হয়েছে তা হলো- খুবই কম সময়ে ভোট গণনার কাজ সম্পন্ন হয়।
ইভিএম ব্যবহারের ফলে কোটি কোটি সংখ্যক ব্যালট ছাপানোর খরচ, কাগজের খরচ, এগুলো পরিবহনের খরচ, ভোট গণনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকবলের খরচ সবই সাশ্রয় হবে। একটি মেশিন দিয়ে চার-পাঁচটি জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব। চাইলে এটা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন বা উপ নির্বাচনেও কাজে লাগানো যাবে। সেক্ষেত্রে শুধু মেশিনটিতে নতুন করে প্রোগ্রাম প্রবেশ করাতে হবে। ভোটের তথ্য মেশিনে প্রায় ১০ বছর ধরে অবিকৃত অবস্থায় থাকবে। একজন ভোটার ভোট দেয়ার পর ১০ থেকে ১২ সেকেন্ড ব্যালট ইউনিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর থাকে। ফলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ইচ্ছা করলেও একজন ভোটারকে একাধিক ভোট দানের সুযোগ করে দিতে পারবেন না। কোন কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কন্ট্রোল ইউনিটের ক্লোজ সুইসটি চেপে দিলেই দখলকারীরা কোনো ভোট দিতে পারবে না। তাছাড়া ইভিএমের স্মার্ট কার্ড সরিয়ে ফেললেও মেশিনটি চালু করা যাবে না। আবার প্রতি মিনিটে ৫টার বেশি ভোট দেয়া যাবে না।

ইভিএমের ৭টি খারাপ দিক : আধুনিক প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া হলেও ইভিএম নিয়ে রয়েছে অনেক অভিযোগ। যেমন- কথায় আছে ‘জোর যার মুল্লুক তার’। অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরা কেন্দ্র দখলের পর পোলিং এজেন্টদের নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে সর্বাধিক সংখ্যক ভোট শক্তির মালিক হবে প্রভাবশালীমহল। মাঝে মাঝে শোনা যায় যে নির্বাচন কমিশনে দলীয় লোক ঢুকে পড়ে। এমনটা ঘটলে তাদের কেউ যদি প্রতি কেন্দ্রে অন্তত একটি করে মেশিনে এ প্রোগ্রাম করে দেন যে, নির্বাচন শেষে ক্লোজ বাটনে ক্লিক করলেই যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট কোনো প্রতীকে অতিরিক্ত ২০০/৩০০ ভোট যুক্ত হবে তাহলে সহজেই নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়া সম্ভব। মাইক্রোকন্ট্রোলারের প্রোগ্রাম পরিবর্তনের সুযোগ হলে কোন কেন্দ্রে সকল প্রার্থী একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক (২০ বা ৫০ বা ১০০) ভোট পাবার পর যে কোন ব্যালট বাটনে চাপলেই অতিরিক্ত ভোট দখলকারী প্রার্থীর প্রতীকে যুক্ত হবে, এমন প্রোগ্রামও লিখে ব্যালট ছিনতাই সম্ভব। যদি নির্বাচনী কর্মকর্তার স্মার্ট কার্ডের নকল কার্ড তৈরি করা হয় এবং তা যদি ইভিএমের প্রোগ্রামকে বিভ্রান্ত করে একবারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট কাস্ট করে দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন হয় তাহলে তা নির্বাচনের ফলাফলকে সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দেবে। গোপনে যে ইভিএম সরবরাহ করা হবে না এমন নিশ্চয়তা অন্তত বাংলাদেশে আশা করা যায় না। ইভিএমের প্রতিটি ইউনিট চালু অবস্থায় পৃথক করা যায়। কেন্দ্র দখলের পর গোপনে সরবরাহকৃত অগ্রিম ভোট দেয়া ইভিএমের শুধুমাত্র কন্ট্রোল ইউনিট প্রতিস্থাপন করলেই চলবে। ফলাফল শতভাগ অনুকূলে। মাইক্রোকন্ট্রোলারের চিপ নিয়ন্ত্রিত এই ইভিএমের প্রতিটি স্মার্টকার্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে আরএফআইডি (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন) ট্যাগ। অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতা পেলে কোন প্রার্থীরা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে কয়েকশ মিটার দূর থেকেও কন্ট্রোল ইউনিট নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে।

পূর্বকোণ / আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট