চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

রোজা ভঙ্গের কারণ এবং কাজা-কাফফারার বিধান

রায়হান আজাদ

২৪ মার্চ, ২০২৪ | ৫:০২ অপরাহ্ণ

যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয় তা হচ্ছে- ১. সহবাস : সিয়াম পালন অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে সিয়াম বাতিল হয়ে যায়; এ সিয়াম ফরজ হোক কিংবা নফল হোক। সহবাসের মাধ্যমে সিয়াম বাতিল হলে কাজা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি। ২. ইচ্ছাকৃত পানাহার করা : ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয়ে যাবে। ৩. ইচ্ছাকৃত বীর্যপাত ঘটানো : যেমন কাউকে চুমু দেয়া বা স্পর্শ করা কিংবা হস্তমৈথুন ইত্যাদির কারণে বীর্যপাত ঘটানো হলে রোজার কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয়।

যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়, তবে শুধু কাজা করলেই চলে তা হচ্ছে- ১. স্ত্রীকে চুম্বন-স্পর্শ করার কারণে বীর্যপাত ঘটলে। ২. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভরে বমি করলে। ৩. পাথর, লোহার টুকরা, ফলের আঁটি ইত্যাদি গিলে ফেললে। ৪. ভুলক্রমে কিছু খেতে আরম্ভ করে রোজা ভঙ্গ হয়েছে ভেবে পুনরায় আহার করলে। ৫. কুলি করার সময় পেটে পানি চলে গেলে। ৬. মুখে বমি এলে পুনরায় তা পেটে প্রবেশ করালে। ৭. দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্যকণা খেয়ে ফেললে। ৮. রোজার নিয়ত না করে ভুল করে রোজা ভঙ্গ হয়ে গেছে ভেবে পানাহার করলে। ৯. পানাহারের বিকল্প হিসেবে রক্তগ্রহণ, স্যালাইন গ্রহণ, এমন ইঞ্জেকশন নেয়া যা আহারের কাজ করে; যথা- গ্লুকোজ, ইঞ্জেকশন ইত্যাদিতে রোজা ভেঙে যায়। ১০. হাজামা বা শিঙ্গা লাগানো হলে যে শিঙ্গা লাগায় ও যাকে শিঙ্গা লাগানো হয় উভয়ের সিয়াম নষ্ট হয়ে যায়। যেমন হাদিসে এসেছে, ‘শিঙ্গা যে লাগালো ও যাকে লাগানো হলো উভয়ে সিয়াম ভঙ্গ করলো।’ (আহমদ) ১১. মহিলাদের হায়েজ (ঋতুস্রাব) ও নিফাস (প্রসবজনিত রক্তক্ষরণ) হলে রোজা ভেঙে যায়।

ওজরবশত ছুটে যাওয়া সিয়ামের বদলে কাজা আর ওজরছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেয়া রোজার বদলে দিতে হবে কাফফারা। উল্লেখ্য, কাজা মানে গাইরে রমজানে সমপরিমাণ রোজা আদায় করা। আর কাফফারা হলো রোজা না রাখার কারণে সুনির্দিষ্ট কিছু কর্তব্য পালন করা। কাফফারা তিন ধরনের- (১) গোলাম আজাদ করা। বর্তমানে যেহেতু দাসপ্রথা নেই, ইসলাম ধাপে ধাপে দাসপ্রথাকে উচ্ছেদ করেছে, তাই দাসমুক্ত করে কাফফারা আদায় করার সুযোগ নেই। (২) দু’মাস বিরতিহীন সিয়াম পালন করা। এ বিরতিহীন সিয়াম পালন করতে গিয়ে সংগত কারণ ব্যতীত যদি বিরতি দেয়া হয় তবে আবার নতুন করে দু’মাস সিয়াম পালন করতে হবে। (৩) যদি বিরতিহীনভাবে দু’মাস সিয়াম পালনের সামর্থ্য না রাখে তবে ষাটজন অভাবী মানুষকে খাদ্য দান করতে হবে। প্রত্যেকের খাদ্য হবে এক ফিতরার সমপরিমাণ।

রোজাবস্থায় যেসব কাজ করলে রোজার কোন ক্ষতি হবে না তা হচ্ছে- ১. ভুলক্রমে কোন কিছু পানাহার করলে। ২. স্বপ্নদোষ হলে। ৩. স্ত্রীর দিকে দৃষ্টিপাতের দরুন বীর্যপাত হলে। ৪. তেল মালিশ করলে। ৫. সুরমা ব্যবহার, চোখে বা কানে ওষুধ ব্যবহার করলে। ৬. স্ত্রীকে চুম্বন করলে। ৭. আপনাআপনি বমি হলে। ৮. মূত্রনালীতে ওষুধ দিলে। ৯. কানে পানি গেলে। ১০. নাকে বা মুখে ধুলো প্রবেশ করলে। ১১. শুধুমাত্র রোগ আরোগ্যের জন্য ইনজেকশন দেয়া হলে। ১২. কুলি করা, নাকে পানি দেয়া হলে। তবে গড়গড়া করা ও নাকের খুব ভিতরে পানি টান দিয়ে নেয়া যাবে না। ১৩. মিসওয়াক করা, মাজন ও টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারবে। তবে গলার ভিতর যাতে না ঢুকে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। ১৪. গরম থেকে বাঁচার জন্য মাথায় শীতল পানি দেয়া, গোসল করা, ভেজা কাপড় গায়ে জড়িয়ে রাখা। ১৫. জিহ্বা দিয়ে খাদ্য বা তরকারির স্বাদ দেখা। ১৭. স্ত্রীকে স্পর্শ করা। ১৮. রাত্রি বেলায় স্ত্রী সহবাস করা। ১৯. কোন কিছুর ঘ্রাণ নেয়া। তবে ধূমপান, আগরবাতি ও চন্দনকাঠের ধোঁয়া বা ধুপ গ্রহণ করা যাবে না। ২০. ইনহেলার, মালিশ, মলম ও প্লাস্টার- চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়ে এগুলো ব্যবহার করা হয়। এসবের দ্বারা রোজা ভঙ্গ হবে না। ২১. রোজা অবস্থায় চোখের ড্রপ দিলে রোজা ভাঙবে না। কারণ চোখের ড্রপে যে পরিমাণ পানি ও ওষুধ থাকে তা পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছার আগেই শুকিয়ে যায়। ২২. রক্ত পরীক্ষার জন্য কিছু রক্ত শরীর থেকে বের করলে রোজা ভাঙবে না।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট