চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিলায়তের উজ্জ্বল নক্ষত্র

মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

নবুয়তের প্রতিচ্ছবি বিলায়ত। আরবীতে বলা হয় ‘আল্ বিলায়াতু জিল্লুন নবুওয়াত’ মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার পূর্ণ অনুসরণের মাধ্যমে বিলায়ত অর্জিত হয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নাতে নববীর অনুসরণ ছাড়া বিলায়ত অকল্পনীয় বিষয়। ‘অলি’ শব্দের সরল অর্থ মহান আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্যপ্রাপ্ত বন্ধু। মহানবী’র (সা) আদর্শ অনুসরণ করে বিলায়তের মর্যাদাপ্রাপ্ত মহান প্রভুর নৈকট্যধন্য কিছু ব্যক্তি থাকেন; যারা জাগতিক ও আধ্যাত্মিকসমূহ গুণে গুণান্বিত হন। মহানবী’র (সা) চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ায় তারা নিজেদেরকে অতুলনীয় করে তোলেন। এ বিষয়ে ড. ইকবাল বলেনÑ ‘কী মুহাম্মদ ছে ওয়াফা তুনে তু হাম তেরে হ্যাঁ, ইয়ে জাহান চিজ হ্যায় কেয়া লউহ ও কলম তেরে হ্যাঁ’। মহান স্রষ্টা তাদেরকে আপন করে নিয়ে ফিরিশতা জগতে জিব্রাইল আমিন মহান প্রভুর সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা প্রচার করেন। তখন ফিরিশতাগণ সকলে ঐ ব্যক্তিকে ভালবাসতে আরম্ভ করেন। তখনই এ জগতে তার গ্রহণযোগ্যতা সার্বজনীন হয়। ছহীহ বোখারীসহ ১৬টি হাদিসগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত একটি অতি প্রসিদ্ধ ও বিশুদ্ধ হাদিস শরীফ নিম্নে বর্ণিত হলোÑ “আনআবী হুরাইরাতা আনিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লামা ক্বালা ইযা আহাব্বাল্লাহুল আব্দা না-দা-জিব্রাইলে আন্নাল্লাহা ইয়ুহিব্বু ফুলানান ফা-আহাব্বাহু ফা-ইয়ুনাদী জিব্রাইল ফিছ্ছামাওয়াতি ইন্নাল্লাহা ইয়ু হিব্বু ফুলানান্ ফা-আহিব্বুহু ফা-ইয়ুনাদী জিব্রারাইলু ফিছ্ ছামাওয়াতি ইন্নাল্লাহা ইয়ুহিব্বু ফুলানান্ ফা আহিব্বুহু ফা-ইয়ু হিব্বুহু আহলুছ ছামায়ি ছুম্মা ইয়ু দাউ লাহুল ক্বাবুল ফী-আহ্লিল আব্দি।” অর্থাৎ, হযরত আবু হোরাইরা (রা) মহানবী’র (সা) কাছ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি ইরশাদ করেনÑ আল্লাহ তা’য়ালা যখন কোনো বান্দাকে ভালবাসেন; জিব্রাইলকে (আ) ডেকে বলেনÑ আল্লাহ অমুককে ভালবাসেন, তুমিও ভালবাস। তখন জিব্রাইল (আ) তাকে ভালবাসেন। অতঃপর আসমানী জগতের ফিরিশতাদেরকে ডেকে বলেনÑ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা অমুককে ভালবাসেন। তোমরাও তাঁকে ভালবাস। তখন আসমানের বাসিন্দা সকল ফিরিশতা তাকে ভালবাসতে আরম্ভ করেন। তখনই এ জগতে (জমিনে) তাঁর ব্যাপক ও সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়।

উপরোক্ত হাদিস শরীফের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করলে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হবে উক্ত হাদিসের মর্মার্থের সাথে সাদৃশ্যতা রয়েছে শাহ্সূফী সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল্-মাইজভা-ারী মাদ্দাজিল্লুহুল আলীর। মহান ১২ ফাল্গুন, মহিমান্বিত ২৪ ফেব্রুয়ারি বরকতমন্ডিত মহান মুর্শিদ সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল হোসাইনী মাদ্দাজিল্লুহুল আলীর পবিত্র সুমহান ও তাত্ত্বিক খোশরোজ শরীফ। ১৯৬৭ ঈসাব্দ, ১৩৭৩ বঙ্গাব্দ ও ১৩৮৬ হিজরী সনের ঐতিহাসিক সেদিনটা ছিল জুমা’বার। সপ্তাহে সাতটা দিনের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ জুমাবারই উক্ত তাত্ত্বিক খোশরোজ শরীফের সৌভাগ্য অর্জন।

ফাল্গুন বঙ্গাব্দের একাদশ মাস। এ মাসের সাথেই বসন্তের সূচনা হয়। বাংলার আকাশ-বাতাসে ছয় ঋতুর এ দেশে বসন্ত ঋতুই শ্রেষ্ঠতম ঋতু হিসেবে খ্যাত। এ ফাল্গুনকে নিজেদের প্রিয় বিবেচনায় অনেক কবি-সাহিত্যিক প্রবন্ধ, কবিতা, গান ইত্যাদি রচনা করেছেন। মহান প্রভুর গোপন রহস্য কয়জনইবা বুঝতে পারে? অনুমান করা যায় বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিক, গায়ক, মরমী গায়কদের লেখা, কবিতা-গান ও ভাব কাব্যে মহান মুর্শিদ কেবলার জীবনীও স্বর্ণাক্ষরে স্থান পাওয়ার সুব্যবস্থা হিসেবে ফাল্গুন মাসকেই খোশরোজের জন্য হয়তো কুদরতের মহাব্যবস্থাপক আপন সিদ্ধান্তে নির্বাচন করেছেন। জিলক্বদ হিজরী বর্ষের একাদশ মাস ‘আশহুরুল হুরম’ তথা প্রাক ইসলামিক ও ইসলামী আইনে যে কয়টি মাসে যুদ্ধবিগ্রহ হারাম তার মধ্যে এটা প্রথম মাস। এ মাসকে হজ্বের মাসও বলা হয়েছে পবিত্র হাদিস শরীফে। এ মাসে জন্ম লাভ করা মানে বিশ্বশান্তির ও সার্বজনীন নিরাপত্তা এবং আধ্যাত্মিক বার্তা বহন তেমনিই অনুমান করা যায়। এ বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে মানবতার মঙ্গলকামী বিশ্বশান্তির মহান প্রবক্তা পথভ্রষ্ট বান্দাদের হিদায়তের জিম্মাদার, রূহানীজগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র নবী বংশের গৌরব। জগতবিখ্যাত সূফীসাধক সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুর্শিদ কেবলা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল হোসাইনী মাদ্দাজিল্লুহুল আলীর ৫৩তম খোশরোজ শরীফ অনুষ্ঠিত হবে। তিনি সম্মানিত শ্রদ্ধেয় বরণীয় ও গ্রহণযোগ্য এক বিরল দৃষ্টান্তের মহামানব। দেশে-বিদেশে সর্বস্তরের বিবেকবান, জ্ঞানী-মহাজ্ঞানী ও আধ্যাত্মিক মহাপুরুষদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ঈর্ষণীয়। তিনি সাধারণ মানুষ থেকে আরম্ভ করে বিশ্ববিবেকের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন বিধায় নির্দ্বিধায় বলা যায়Ñ মহান প্রভু তাঁকে ভালবাসেন, আসমানী জগতের ফিরিশতাগণ তাঁকে ভালবাসেন। তাই, তিনি জগতবাসীর ভালবাসার পাত্র। তিনি নিঃসন্দেহে বিলায়ত এর উজ্জ্বল নক্ষত্র। বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদিস ও মর্মার্থের সাথে তার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যতা।

মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ অধ্যক্ষ, ছোবহানিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট