চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

শে^তী রোগের প্রকার ও প্রতিকার

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

৯ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ

ত্বকের মধ্যকার মেলানোসাইট কোষ থেকে মেলানিন নামে এক ধরনের রঙ বের হয়। এই রঙই ত্বকের স্বাভাবিক রঙে ভারসাম্য রক্ষা করে। আর রঙের ক্রিয়াকলাপে বাধা সৃষ্টি হলে বা ভারসাম্যের অভাব ঘটলেই শুরু হয় শে^তী। একশোজনের মধ্যে ত্রিশজনের ক্ষেত্রে শে^তী আসে বংশগত ধারায়। পিতৃকুল বা মাতৃকুলের কারও না কারও থেকে জিনের প্রভাবে। বাকি ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে শে^তীর বিদঘুটে সাদা দাগ ছড়াতে থাকে একেবারেই নিজস্ব নিয়মে। যার মূলে রয়েছে এই মেলানিন রঙের অভাব।
আসল কথা শে^তী ব্যাপারটা যে কী এটা অনেকেই জানে না। জানেন না যে এ রোগের নিরাময় সম্ভব, এটা কোনও ছোঁয়াচে রোগ নয়। ফলে শে^তীর জন্য ভেঙে যায় প্রেম-বিয়ে, এমনকি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে হেনস্থা হতে হয়। আছে আরও রকমারি সামাজিক চাপ। আজকের শিক্ষিত আধুনিক অনেক যুবকও শে^তীর নাম শুনে ভুলে যেতে চায় তার ভাবী স্ত্রীকেও। তার সম্বন্ধের বিয়ে নয়, প্রেমের বিয়ে পর্যন্ত। এ রোগ সম্বন্ধে অজ্ঞ মানুষজনের জন্যই কিন্তু শে^তী রোগগ্রস্তরা অপমানের শিকার হয়।

শে^তী কোথায় কোথায় হয় : মুখমন্ডল, কনুই, বক্ষতেশ, এই সব জায়গাতেই প্রথমে শে^তী হতে আরম্ভ করে। কখনও বা শে^তীর সাদা দাগ ছড়াতে আরম্ভ করে চোখের পাশ

দিয়ে, নাকের দুপাশে বা ঠোঁটের কোণে বা ওপর দিয়ে। কিছু ক্ষেত্রে শে^তী একটি বিশেষ জায়গার কেন্দ্রীভুক্ত হয়ে থাকে, ছড়ায় না বিশেষ। কখনও বা তা মুখ, বুক, হাতে ছড়িয়ে পড়ে এমনভাবে যে বুঝাই যায় না। এক সময় গায়ের রঙ আসলে কী ছিল Ñ ফরসা না উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, না কালো। অবশ্যই এই দ্বিতীয় ধরনের শে^তীর দাগ মানুষকে শ্রীহীন করে দেয়।

শে^তী কোন বয়সে বেশী হয় : ৫০ শতাংশ শে^তী ধরা পড়ে বয়স বছর দশকের কাছাকাছি এসে। তবে মনে রাখতে হবে সদ্যোজাত শিশুর কিন্তু শে^তী একেবারেই ধরা পড়ে না। বাকিদের শে^তী হয় বয়স দশ পেরিয়ে গিয়ে, জীবনের যে কোন সময়। যৌবনে প্রৌঢ়ত্বে বা বার্ধক্যে। আমাদের দেশের ১ থেকে ২ শতাংশ মানুষ শে^তীর কবলে পড়েন এবং চিকিৎসার সুযোগ পান না অনেকেই। জীবন বিষময় হয়ে ওঠে তাদের।

হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান : যত অল্প বয়সে শে^তীর চিকিৎসা শুরু করা যায় ততই ভাল। চিকিৎসক হিসেবে পরামর্শ একটাই, শে^তী যদি সারিয়ে তুলতে চান তাহলে গড়িমসি করে লাভ নেই। যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অভিশপ্ত সাদা রঙ ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ার আগেই শুরু করা উচিত জীবনের নতুন দৌড়।
হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সেবনের পাশাপাশি সকাল বেলাকার রোদ লাগাতে হবে শে^তী আক্রান্ত জায়গায়। ডায়াবেটিস, হাইপার থাইরয়েড এসব যাদের আছে তাদের ক্ষেত্রে শে^তী হওয়ার প্রবণতা বেশি। সুগার এবং থাইরডকে ওষুধ দিয়ে স্বাভাবিক স্তরে এনে শে^তীর চিকিৎসা শুরু করা দরকার। শে^তীতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে ওষুধ বেশি ব্যবহৃত হয় তার নাম নি¤েœ সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল। ১) আর্সেনিক সালফ্ ফ্লেভাম, ২) অয়েল বোচি উল্লেখযোগ্য। তারপরেও চিকিৎসকের পরামর্শ মত ওষুধ খাবেন। তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ
সাবেক অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট